তাঁত শিল্পের উপর সরকারের সুদৃষ্টি হলে পার্বত্যাঞ্চলের নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারবে


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, ১৫ই জুলাই ২০২৩


তাঁত শিল্পের উপর সরকারের সুদৃষ্টি হলে পার্বত্যাঞ্চলের নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারবে
উপজাতী নারী

পার্বত্য খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস, এসব গোষ্ঠীর নারী সদস্যরা প্রায় সবাই কম-বেশি কোমর তাঁত বোনেন। নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে বিশেষ কায়দায় কোমরের সঙ্গে বেঁধে তাঁতের কাপড় বুনে থাকে বলে এটিকে কোমর তাঁত বলা হয়। তাদের হাতে তৈরি থামি, পিনন, ওড়না, রুমাল, গামছা বা চাদর এখন পাহাড় ছাড়িয়ে সমতলেও ব্যাপক সমাদৃত। 


সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এ শিল্প এখনও বাড়ির উঠানেই আটকে আছে। তবে তারা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিছু কিছু এলাকায় তাঁত বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলেও সেই ঋণের ঘানি টানতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ শিল্পকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোমর তাঁতে ঘুরছে পাহাড়ি নারীদের জীবন চাকাও।


সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের গেৎশিমানি পাড়া, শেরন পাড়া, বেতেনী পাড়া ও রুমা উপজেলার বেতল পাড়া, মুনলাই পাড়া, মুননুয়াম পাড়া, আর্তা পাড়া এবং কেওকারাডং পাহাড়ের হারমুন পাড়া, দার্জিলিং পাড়া, সুনসাং পাড়া ও তিনদৌলতি পাড়ায় বম সম্প্রদায়ের নারী সদস্যরা সবাই কম-বেশি কোমরতাঁত তৈরি করেন।


অপরদিকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার কুটির শিল্পে সকল যন্ত্রপাতি সচল থাকা সত্বেও অর্থ ও লোকবলের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে র্দীঘ বেশ কিছু বছর যাবৎ। খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়া, আনন্দ নগর, সিন্দুকছড়ি রামসুবাজার, নতুন পাড়ায় ঘরে বসেই বুনছে তাঁত। গুইমারার দায়িত্বে থাকা কুটির শিল্পের এক কর্মচারি সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কর্মচারি নিয়োগ না হওয়ার কারনে বন্ধ হয়ে আছে কুটির শিল্পের কার্যক্রম। আমার দায়িত্ব কুটির শিল্পটি পরিদর্শন করা আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। 


রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার এক উপজাতীয় মহিলা বলেন, কোমর তাঁত বোনা আমাদের ঐতিহ্য। তবে এখান থেকে যা রোজগার হয় তা দিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপন করা অনেক কষ্ট সাদ্য হয়ে পড়েছে। তাঁত শিল্পের উপর সরকারের সুদৃষ্টি হলে পিছিয়ে পড়া উপজাতী নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারবে। এছাড়া দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারবে।


পাহাড়ি তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বম সম্প্রদায়ের নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে তৈরি করেন থামি, ওড়না, রুমাল, গামছা ও চাদর। এই তাঁতের কাপড়গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পার্বত্যাঞ্চলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকরা ফিরে যাওয়ার সময় পাবর্ত্যাঞ্চলের স্মৃতি হিসেবে পাহাড়ি নারীদের তৈরি এই কোমরতাঁত কিনে সঙ্গে নিয়ে যান।


তাঁত বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁত শিল্প বিকাশে অবদান রাখছে। এ শিল্পটি দেশে বস্ত্র উৎপাদনেও প্রায় ৬৩ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। তবে তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিলেও পাহাড়ের বাঙ্গালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়কে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁত বুননের প্রশিক্ষণ বা বুনন কাজের জন্য যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে না।


কোমরতাঁত কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, আমরা কোমরতাঁত বুননের কাজটি মা-বোনদের কাছে শিখেছি। এটি আমাদের বম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য। বান্দরবানে সরকারিভাবে তাঁত বুনন কাজের যদি একটি ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে দেওয়া হতো, তাহলে আমরা আরও বেশি অভিজ্ঞ হতে পারতাম।


আরএক্স/