কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে গবাদি পশু পালন স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজারো পরিবার


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩১ পিএম, ১০ই আগস্ট ২০২৫


কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে গবাদি পশু পালন স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজারো পরিবার
চরাঞ্চলে গবাদি পশু পালন। ছবি: প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এখন গবাদিপশু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজারো পরিবার। জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষ গবাদিপশু রয়েছে। এই গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে  স্থানীয়ভাবে দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বিস্তীর্ণ চারণভূমি চরবাসীদের গবাদিপশু পালনে উৎসাহিত করেছে।


জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ ইন্টিগ্রেটেড লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ILDP) এর মাধ্যমে চরাঞ্চলে নিয়মিত কাজ হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজনন ও জাত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে দুধ ও ডিমের উৎপাদন বেড়েছে, পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও খামার ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হয়েছে।


উলিপুরের সাহেবের আলগা জাহাজের চরের আবুল কাশেম জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন প্রায়ই চরে আসেন এবং কীভাবে গবাদিপশু পালন করলে লাভবান হওয়া যায় সে পরামর্শ দেন। আমার একটি গরু লাফিং রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত তারা ভ্যাকসিন দিয়ে চিকিৎসা করেন এবং পরবর্তীতে যত্ন নেওয়ার নির্দেশনা দেন।


কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার একাধিক চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে গবাদিপশু পালনের সঙ্গে যুক্ত। নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণও বাড়ছে।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ৬নং ওয়ার্ডের সালেহা খাতুন বলেন, আমার ৫টি ছাগল, ৩টি গাভি ও ২টি দামড়া গরু আছে। গত কোরবানিতে ২টি গরু বিক্রি করেছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবার কারণে আমি আরও উৎসাহিত হচ্ছি।


এছাড়া হাঁস-মুরগি পালনেও সাফল্য পেয়েছেন অনেক যুবক। কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক হ্যাচারি থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার গড়ে তুলছেন তারা। যা স্থানীয় ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে। 


হলোখানা ইউনিয়নের নাজমুল ইসলাম বলেন, হ্যাচারি থেকে বাচ্চা নিয়ে পরামর্শ অনুযায়ী লালন-পালন করি, এতে ভালো লাভ হয়।



কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার অনেক চরাঞ্চলের মধ্যে ৮৫টি চর এলাকায় তারা বর্তমানে নিয়মিত কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে ছোট ছোট চরগুলোও এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে এবং তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। 


বর্তমানে এই ৮৫টি চরে গরু রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২শত ২১টি, মহিষ ৫ হাজার ১শত ৭৯টি, এবং ভেড়া ২৩ হাজার ৬শত ১টি। এসব এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা, ভ্যাকসিন, কৃত্রিম প্রজনন, খামার ব্যবস্থাপনা ও উন্নত জাতের ঘাস চাষে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।


প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে যাতায়াতের অসুবিধা, স্থায়ী জনবলের অভাব ও চরাঞ্চলে সেবা কেন্দ্রের অভাব। তবুও এসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।



জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছি এবং ৮৫টি চরাঞ্চলে নিয়মিত কাজ করছি। চরাঞ্চলের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা ইতিমধ্যে ৮৫টি চর এলাকার বিস্তারিত তালিকা ও প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর ডকুমেন্ট আকারে জমা দিয়েছি। যাতায়াতের জন্য পরিবহন, প্রতিটি চরাঞ্চলে স্থায়ী জনবল ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন এবং বাজারজাতকরণের জন্য লিংকেজ তৈরি হলে এই খাত আরও লাভজনক হবে।


চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগির খামার আজ শুধু জীবিকা নয়, বরং কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে।


প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য- জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পর কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক হিসেবে নুসরাত সুলতানা দায়িত্ব নেবার পর তিনি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সহ সকল সরকারী, বেসরকারী, শায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে চরমুখী করে গড়ে তোলায় অবহেলিত চরাঞ্চলবাসীর ভাগ্যে চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।


এসডি/