কিশোরগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ১৫ দিনে ৯ জনের মৃত্যু


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:০৭ অপরাহ্ন, ২০শে জুলাই ২০২৩


কিশোরগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ১৫ দিনে ৯ জনের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। গত ১৫ দিনে মারা গেছেন ৯ জন। স্থানীয় কাউন্সিলররা ডায়রিয়ায় ৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


তবে মৃতরা শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন মানতে নারাজ সিভিল সার্জন। তার মতে, মারা যাওয়া ব্যক্তিরা অন্য রোগেও আক্রান্ত ছিলেন।


সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গত ১৫ দিনে শতাধিক ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঈদুল আজহার পর থেকে বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।


১৭ জুলাইয়ের ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১৩ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মধ্যে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭ জন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৩৪ জন এবং বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।


পৌরসভার তথ্য বলছে, ঈদুল আজহার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন পৌরসভার ১, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ। ঈদের পর এ তিন ওয়ার্ডে আক্রান্ত হয়েছেন তিন শতাধিক। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।


কিশোরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ৩ জুলাই কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নগুয়া এলাকার ছিদু মিয়ার ছেলে হাছু মিয়া (৪৫)। ১১ জুলাই সকালে নগুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার বারিক মিয়ার ছেলে ফজলুর রহমান (৬৫) মারা যান। একইদিন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইদু মিয়ার স্ত্রী চাম্মা খাতুন (৫৫)। ১২ জুলাই হাসপাতালে নেওয়ার পথে নগুয়া বটতলা এলাকার শুক্কুর মিয়ার ছেলে আব্দুল হেকিম (৬৫), ১৬ জুলাই সকালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নগুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে শাহাবুদ্দিন মিয়া (৫৮)ও একইদিন কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে হয়গতনগর এলাকার কদ্দুস মিয়ার ছেলে বুলু মিয়া (৪৫) মারা যান। এছাড়া হয়বতনগর এলাকার আনিছ মিয়া (৭০), গাইটাল এলাকার হাসিনা আক্তার (৭০) ও রাকুয়াইল এলাকার আছিয়া (৪৯) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।


পৌর শহরের নগুয়া এলাকার মৃত শাহাবুদ্দিন মিয়ার মেয়ে রুমানা আক্তার বলেন, ‘শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে বাবার পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দুপুরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। ভালোভাবে চিকিৎসা পাননি। রবিবার (১৬ জুলাই) সকালের দিকে আমার বাবা মারা যান।’


পৌর শহরের নগুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুল করিম (৫৫) বলেন, ‘আমাদের নগুয়া ও হয়বতনগর এলাকার সাতজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অনেকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’


তিনি বলেন, ‘পৌরসভার যে পানিটা আসে তাতে অনেক সময় ময়লা থাকে। সেই পানি খাওয়াতে হয়তো এ রোগ হচ্ছে। ডাক্তার আমাদের এ পানি না খাওয়ার জন্য বলেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর পানির বিষয়টি জানেন।’


আরও পড়ুন: অতিরিক্ত শীতের কারণে বাগেরহাটে বাড়ছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া


পৌর শহরের নগুয়া বটতলা এলাকার আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘কোরবানির ঈদের পর থেকে আমাদের এলাকায় ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে প্রতিটা পরিবার বসবাস করছি। যে পরিবারের লোকজন মারা গেছেন তাদের একটাই অভিযোগ হাসপাতালে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা পাননি। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে বা পৌরসভার পক্ষ থেকে ড্রেনেজ পরিষ্কার বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’


পৌর কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন জানান, হারুয়া এলাকায় শতাধিক লোকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। এখনো অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।


তিনি বলেন, ‘আমি একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উনি বলেছেন পানির সমস্যা। পানি সমস্যার সমাধান হলে এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।’


৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বিল্লাল জানান, কোরবানি ঈদের পর থেকে নগুয়া ও হয়বতনগর এলাকায় শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন।


১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন ইদু বলেন, ঈদুল আজহার পর থেকে শতাধিক লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে দুই নারী মারা গেছেন। পানির সমস্যার কারণে মানুষ ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।


এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, এ মুহূর্তে ডায়রিয়ার প্রকোপটা কী কারণে বাড়ছে তা বলতে পারছি না। পানি ও পৌরসভার পরিবেশ পর্যালোচনা করলে হয়তো কারণ বেরিয়ে আসবে। আমরা পৌর এলাকায় সচেতনামূলক কাজ করে যাচ্ছি।


তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলামের দাবি, শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে কেউ মারা যাননি। যারা মারা গেছেন তারা অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। তবে শেষ পর্যায়ে তাদের লুজ মোশনের (ডায়রিয়া) উপসর্গ পাওয়া গেছে।


তিনি বলেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ কেন বাড়ছে তা জানতে আমরা কাজ করছি। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ মজুত রয়েছে।


জেবি/ আরএইচ/