মোংলায় ঝড়ে পড়া ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে ‘শিখন কেন্দ্র’


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:২৪ অপরাহ্ন, ২৪শে জুলাই ২০২৩


মোংলায় ঝড়ে পড়া ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে ‘শিখন কেন্দ্র’
ছবি: জনবাণী

দেশে ঝড়ে পড়া গড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হার ১৭ দশমিক নয় শতাংশ। তার মধ্যে বাগেরহাটের মোংলায় এই হার ১৮ দশমিক চার শতাংশ। এই অবস্থায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে মোংলায় ব্যতিক্রম শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে।


সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে  উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামমের প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচির আওতায় ‘শিখন কেন্দ্র’ নামে ৩৫টি স্কুল খোলা হয়েছে এখানে। 


পৌরসভায় ১১টি ও উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে ২৪টি মোট ৩৫টি শিখন কেন্দ্র চালু করেছেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘নীড় সেবা সংস্থা’। এসব শিখন কেন্দ্রে  ঝরে পড়া শিক্ষা বঞ্চিত থাকা মোট ১০৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়াশুনা করছেন।


সোমবার (২৪ জুলাই) মোংলা পোর্ট পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিখন কেন্দ্র গুলো ঘুরে জানা গেছে, এলাকার ঝরে পড়া ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা শিখন কেন্দ্রগুলোতে বেশ মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করছেন। শিখন কেন্দ্রে আসা শিক্ষার্থীদের দিতে হয়না কোন টাকাপয়সা (বেতন-ফি)। 


এ সময় কথা হয় উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের শিখন কেন্দ্রের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রত্না মন্ডলের সাথে। রত্না বলেন, তার বাবা অপূর্ব মন্ডল পেশায় একজন জেলে। অভাবের সংসারের কারণে তার বাবা ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়িয়েছেন তাকে। এরপর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। পরে নীড় সেবা সংস্থার গড়া শিখন শিক্ষা কেন্দ্রে ফ্রি ভর্তি হই। সেখানে কোন টাকা লাগেনি, বেতনও দিতে হয়না। রবং পড়াশুনার সকল শিক্ষা সামগ্রী বিনামূল্যে পাচ্ছেন তিনি। 


আরও পড়ুন: মোংলা পৌরসভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি


চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলম ঢালীর মেয়ে খাদিজা আক্তার, সেও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। অভাব আর সংসারের টানাপোড়েনে শিক্ষার আলো থেকে সেও ঝরে পড়েছিলো। পরে নীড় সেবাসংস্থা তাকে টেনে নিয়ে শিখন কেন্দ্রে শিক্ষার (লেখাপড়া) সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন নিয়মিত সেই কেন্দ্রে পড়াশুনা করছেন খাদিজা। 


জানা যায়, সরকারের রুপকল্প ২০২১ ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘মান সম্মত সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা’ (এসডিজি-২০৩০) অর্জনের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি শক্তিশালী করার মানসে একযোগে কাজ চলছে। 


এদিকে এই কাজের অংশীদার হয়ে তা বাস্তবায়নে ‘শিশুর হাসি, শিশুর খুশি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য নতুন কার্যক্রম চালু করেছেন বেসরকারী একটি উন্নয়ন সংস্থা নীড় সেবা সংস্থা। সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে  উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচীর আওতায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার সেকেন্ড চান্স কর্মসূচীর আওতায় নীড় সেবাসংস্থা নামে উন্নয়ন সংস্থাটি মোংলা উপজেলায় ৩৫টি শিখন কেন্দ্র খুলেছেন। 


এরমধ্যে পৌরসভায় ১১, উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নে ১১, চিলা ইউনিয়নে ৭ ও সুন্দরবন ইউনিয়নে ৬টি শিখন কেন্দ্র চালু রয়েছে। 


নীড় সেবাসংস্থার মোংলা উপজেলার প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিপি ধুনী বলেন, নানা কারণে মোংলা উপজেলায় শিক্ষার জ্ঞান থেকে অনেক শিশু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়েন। এসব শিশুদের শিক্ষার্থীদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন তারা। ২২সালের ডিসেম্বর থেকে এসব ঝড়ে পড়া শিশুদের জন্য ৩৫টি শিক্ষা কেন্দ্র খুলে তাদের জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা এখন ১০৫০জন। তাদেরকে বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সার্বিক সহায়তা প্রদাণের পাশাপাশি পড়াশুনা করানো হচ্ছে। 


তিনি আরও বলেন, শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান, জীবনের মানোন্নয় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরী ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদাণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত ও আত্নকর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণই আমাদের মূল লক্ষ্য।


মোংলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীনুর রহমান বলেন, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয় বহির্ভূত (ঝরে পড়া ও ভর্তি না হওয়া) ৮থেকে ১৪বছর বয়সী শিশুদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসায় নীড় সেবাসংস্থা নিঃসন্দেহে একটি প্রশাংসামূলক কাজ করে চলছেন। তাদের এই ব্যতিক্রম কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা শতভাগ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে আলোকিত ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারবেন বলে জানান এ শিক্ষা কর্মকর্তা। 


জেবি/ আরএইচ/