বালু খেকোদের কারণে মানুষ হারাচ্ছে ভিটামাটি
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
সুগন্ধা ও বিষখালী দুই নদী যেনো অবৈধ বালু সিন্ডিকেটের নিজেস্ব রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বালু মহল ঘোষনা না থাকলেও সরকারকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তারা অবৈধ বালু উত্তোলন করে কোটি টাকার বানিজ্যে লিপ্ত রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বালুখেকো সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়ে কতিপয় নিন্ম আয়ের অশিক্ষিক ব্যক্তি সহসাই অঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয়েছে। যারমধ্যে কলাবাগানের এক নৌকার মাঝি, লঞ্চঘাটে এক শ্রমিকের পুত্র ও বান্দাঘাটের কয়েকজন শুধুমাত্র বালু সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়ে বাড়ী-গাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছে।
এদিকে নতুন বছরের শুরুতে ঝালকাঠি জেলা প্রশানসের উদ্দোগে প্রায়ই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জোরদার অভিযান চালিয়ে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য গ্রেপ্তার, ড্রেজার জব্দ ও অর্থদন্ড প্রদান করেছে। এতে প্রায় এক দশকের বেশী সময় ধরে চলে আসা বালু সিন্ডিকেটের হিসেব-নিকেশ পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
অভিযান বন্ধে সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদের অবৈধ বালু বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে নড়েচড়ে বসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তারা এবার প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ভিন্ন কৌশলে তদবীরে নেমেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে ড্রেজার মালিকসহ বালু সিন্ডিকেটের বেপরোয়া ও অপরিকল্পিত বালু খননে ভিটেমাটি বিলীন হয়ে গেছে এই দুই নদীর তীরবর্তী শত শত মানুষের ভিটামাটি। এনিয়ে তারা জেলা চেয়ারম্যান, ডিসি, এসপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর ও আ’লীগ নেতাদের ধর্না দিলেও কোন প্রতিকার পায়নি।
তাই জেলা প্রশাসন থেকে শুরু হওয়া এঅভিযান অব্যহত রাখার দাবী জানিয়েছে ভূক্তোভূগীরা। একই সাথে তারা সরকার ও প্রসাশকের কাছে বৈধ কাগজপত্রহীন ও অপরিকল্পিত বালু খননকারী সিন্ডিকেট সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানিয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা গেছে, এসব ড্রেজার মালিকদের খেয়ালখুশি মতো ও অবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকীর মুখে ঝালকাঠি শহর রক্ষা বাঁধ। তাদের যথেচ্ছার খননে নদী তীরের আবাদি জমি, বসত ঘর সবকিছু বহু পরিবার আজ ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে।এসবের তোয়াক্কা না করে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা চড়া দামে এ বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ঝালকাঠিতে ক্ষমতাশীন দলীয় নেতা, সাবেক কাউন্সিলর ও পেশীশক্তিধর কতিপয় সদস্যের সমন্বয়ে বালু সিন্ডিকেটের দুটিগ্রুপ পৃথক সমিতি গঠন করে নদী দুটিতে ড্রেজার দিয়ে বালু্ উত্তলন ও বিক্রির রাজত্ব চালিয়ে আসছেন।
প্রতিদিন ড্রেজার ও বলগেটসহ সরবারহকৃত বালুর ফুটপ্রতি নির্ধারিত অংকের চাঁদা তোলে দুই সমিতির নেতারা। সেই অর্থ থেকে প্রশাসন, রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি নির্ধারিত কমিশন পৌছে দেয় এ সিন্ডিকেটের নেতারা।
উক্ত টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে সমিতি নামধারী সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ বলু বানিজ্য। জেলা প্রশাসক অবৈধ বালু খননের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান শুরু করলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা দিনের বেলায় বন্ধ করে রাতে বেলা বালু উত্তোলন শুরু করেন।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বশির গাজী যোগদান করেই এক মাসে তিনটি অভিযান পরিচালনা করেন। গত ২৪ জানুয়ারি, ৬ ফেব্রুয়ারি ও ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে এসব অভিযানে ৫ বালু শ্রমিককে কারা দন্ড প্রদান করেন।
সেই সাথে আঃ কাইউম, কামাল হোসেন, মোঃ এরশাদ, আঃ আউয়াল ও ইব্রাহিমসহ ৫ ড্রেজার ও বাল্কহেড মালিককে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জড়িমানা করেন। এসব অভিযানে নদী ভাংগনে সর্বহারা মানুষেরা স্বস্থি প্রকাশ করে অবৈধ ড্রেজারের যন্ত্রপাতি জব্দ করে মামলা দিলে তাদেরথামানো যাবে বলে জানান।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোহাম্মদ বশির গাজী বলেন, সুগন্ধা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিল একটি অসাধু মহল। প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে সুগন্ধা ও বীষখালী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রাতের আধারে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি।
এতে নদী ভাঙ্গন ও পরিবেশের ভারষম্য নষ্ট হচ্ছে বলে এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এসব আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রথম বারের মতো যাদের ধরা হচ্ছে মুচলেকা রেখে অর্থদন্ড দেয়া হচ্ছে। অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে পরবর্তীতে কঠোর দন্ড দেয়া হবে। তাই প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আরো জানান।
এসএ/