তারাকান্দায় জমিদার বাড়িটি লিজে কেন? সচেতন মহলের প্রশ্ন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


তারাকান্দায় জমিদার বাড়িটি লিজে কেন? সচেতন মহলের প্রশ্ন

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের দাদরা গ্রাম। ছায়া সুনিবিড় গ্রামটিতেই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ হিসেবে নয় বৃটিশ আমলের একটি বাড়ীর লিজ হয়েছে বাৎসরিক ১০ হাজার ৫ শত টাকায়। এই বাড়ীটিতেই একসময় বসবাস করতেন হিন্দু ব্রার্ম্মণ পরিবারের দুই ভাই।

বড় ভাই ডাঃ ইন্দু ভূষন ভট্টাচার্য্য, ছোট ভাই বিধু ভূষন ভট্টাচার্য্য ছিলেন তৎকালীন কাকনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং আলীগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রায় ৫ একর জায়গা নিয়ে ব্রিটিশ আমলে জমিদার বাড়ির মত করে তৈরী দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি হতে পারতো তারাকান্দার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ।

তবে বর্তমানে বাড়িটিতে বসবাস করছেন গোয়াতলা সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হেলাল (৫৫) এবং শেখ রেজাউল করিম খোকন(৫০) নামের দুই ভাইয়ের পরিবার। মুসলিম এই পরিবারের লোকজন বলছে তারা বাৎসরিক ১০ হাজার ৫ শত টাকায় লিজ নিয়েছেন ২ একর ৬০ শতাংশ জমিসহ বাড়ীটি। অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ হতে পারার সুযোগ থাকার পরও কিভাবে এই সম্পদ লিজ দেয়া হলো প্রশ্ন সচেতন মহলের। বাড়িটির চারপাশে রয়েছে আরও ৫ একরের মত সম্পত্তি। যা এখন কার্যত বেদখল হয়ে গেছে।

জমিদার বাড়ির আদলে তৈরী বাড়ীটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ হারিয়েছে তার যৌবনাবেদন।বাড়ীটিকে ঘিরে যে বাগান এবং গাছগাছালির অস্তিত্ব ছিলো বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী তার কোন অস্তিত্বই নেই এখন।যে কোন সময় বর্তমানে বসবাসরতদের হাতে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এর অবকাঠামো এমন শঙ্কার কথাই জানিয়েছেন দাদরা গ্রামে বসবাসরত কয়েকজন। 

কোটি কোটি টাকার সম্পদসহ উপজেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ হিসেবে বাড়িটি এবং এর আশপাশের বেদখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধারপূর্বক সরকারের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে প্রশাসন, এমনটাই প্রত্যাশা  সচেতন মহলের।

এই বিষয়ে দাদরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃমোতালেব (৭০) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান,ব্রিটিশ আমলে তৈরী হয়েছে বলে শুনেছি বাড়ীটি। যার সঠিক বয়স আমাদের জানা নেই । ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় বাড়িটিতে বসবাস করতেন ইন্দুভূষণ এবং বিধূভূষণ ভট্টাচার্য্য নামের দুইভাই।

স্বাধীনতার যোদ্ধের  মাঝে তারা ভারতে চলে যাবার পরই বেদখল হয়ে গেছে তাদের বিপুল পরিমাণ জমিজমাসহ রাজকীয় এই বাড়ীটিও। এখন সেখানে একটি মুসলিম পরিবার থাকে। শুনেছি তারা বাড়ীটি লিজে  নিয়েছে।তবে এই দৃষ্টিনন্দন বাড়ীটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ হিসেবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে তারাকান্দায় অন্যতম পর্যটন আকর্ষন হয়ে উঠতো বাড়ীটি এতে কোন সন্দেহ নেই।

সরেজমিন পরিদর্শনের সময় বাড়ীটিতে বসবাসরত শেখ রেজাউল করিম খোকন এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এরশাদের আমলে আমরা বাড়ীটি ৯৯ বছরের জন্য লিজে  নিয়েছি। প্রতিবছর  বাৎসরিক মূল্য ১০ হাজার ৫ শত টাকা। আমরা প্রতিবছরই লিজের টাকা পরিশোধ করে আসছি। কোটি টাকা মূল্যের এবং যে বাড়ীটির প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে এমন বাড়ীসহ সম্পত্তির লিজ কিভাবে পেলেন, এমন প্রশ্নে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এই বিষয়ে দাদরা গ্রামের মৃত ছমির উদ্দিনের পুত্র আমির উদ্দিন (৭৫) এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ইন্দুবাবু এবং বিধূবাবু সংগ্রামের সময় সব সম্পত্তি ফেলে রেখে ভারতে চলে গেছেন। তাদের ফেলে যাওয়া প্রায় শত একর জমি এখন বেদখল হয়ে গেছে।কাকনী ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজায় তাদের জমি ছিল। আমরা শুনেছি তারা ভারতে গিয়ে মারা গেছেন।কখনও তাদের এবং তাদের ঔরারিশানদের এখানে আসতে দেখিনি।

এই বিষয়ে আরও কয়েকজনের দাবি কাকনী ইউনিয়নের পানিহরি, বাগুন্দা, কাকনী, গোয়াতলা, দাদরা, হাটপাড়া, পাগুলী, আতকাপাড়া এমনকি আরও কয়েকটি স্থানে অনেক সম্পত্তি ছিলো তাদের।বাড়ীটিতে একটি প্রাচীন কূয়া ছিল। যার অস্তিত্ব এখন বিলীণ হয়ে গেছে। তাদের চলে যাবার পর যা কার্যত বেদখল হয়ে গেছে।

তবে কতটুকু জমি দখল হয়েছে তার হিসেব সঠিক বলতে পারেনি কেউ। কিভাবে বেদখল হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ১৯৮২-৮৩ সালে বিআরএসে নাম অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি নিজেদের করে নিয়েছেন। যারা এটিও করতে পারেননি তারা এমনি দখল বজায় রেখেছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যে দখলসূত্রে জমি অন্যদের হস্তান্তরও করেছেন বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে কাকনী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ইকবাল জানান প্রত্যার্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকা (অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন,২০০১ এর ধারা ৯ অনুযায়ী প্রকাশিত অংশ-১ এবং (প্রত্যার্পণ যোগ্য জনহিতকর সম্পত্তি ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যার্পণ যোগ্য সম্পত্তির আইনের ধারা ৯(২) অনুযায়ী কেইসনথি ও তালিকাভুক্তির তারিখ ২৫/N,P/77 এবং সরকার কর্তৃক দখল/নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের তারিখ ৯/৬/১৯৭৭ ইং।

সে মতে বাড়ীটির মূল মালিক প্রসন্ন কুমার ভট্টাচার্য্য এর ছেলে ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য্য যার বিআরএস খতিয়ান নং-২,দাগনং-২০৭(বাড়ী)-২ একর ৪০ শতাংশ,৫৬৪ দাগে (খিলা)-১৩ শতাংশ,৫৬৫ দাগে (খিলা)-৭ শতাংশ ভুমি ফুলপুর উপজেলা ভূমি অফিস হতে বর্তমানে বসবাসরত গোয়াতলা সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান হেলাল (৫৫) এবংশেখ রেজাউল করিম খোকন (৫০) নামের দুই ভাই লিজ হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা প্রতিবছর নিয়মিত লিজের টাকা পরিশোধ করে আসছেন।

এ বিষয়ে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমত এর সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার কথা জানান এবং বিষয়টির খোঁজখবর নিতে কাকনী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ইকবালকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

এসএ/