কক্সবাজারে নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৯ অপরাহ্ন, ৯ই আগস্ট ২০২৩


কক্সবাজারে নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন
নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। বুধবার ভোর হালকা বৃষ্টি হলে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। 


এ পরিস্থিতিতে নামতে শুরু করেছে বন্যা কবলিত এলাকার পানি। এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সরাসরি যান চলাচল। তবে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যান চলাচল করছে।


পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। কোথাও মহাসড়ক, সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট, ভেঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। বীজ তলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেন ল-ভ- হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।


পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন শংকায় কবলিত এলাকার মানুষ। যে রান্না করে খাবার কোন পরিবেশ নেই। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির।


বুধবার সকালে চকরিয়া উপজেলার পানিতে ডুবে থাকা কিছু সড়কের দৃশ্য দেখা মিলে ভাঙনের তীব্রতা। কাকড়া-মিনাবাজার সড়কটির ৩ কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৫০ টি ভাঙন সড়কটিকে চলাচল অনুপযোগি করে দিয়েছে।


ওই এলাকার বৃদ্ধ রহিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ৪ দিন ধরে কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানিতে বন্ধি ছিলেন তারা। পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। সাথে সাথে সড়কের ভাঙন, ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত, ফসলী জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। যাদের বাড়ি-ঘর এখনও রয়েছে তারাও বাড়িতে গিয়ে রান্না করার সুযোগ নেই। বাড়ির ভেতরে পানি বের করার চেষ্টা করছেন। খাবার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।


এলাকার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজন ও সরেজমিনে দেখা যায়, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশে ভাঙন রয়েছে। মাতামুহুরী নদী নিকটবর্তী গ্রামের বসতঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে নানাভাবে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় বেশ কয়েকটি বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে মিশে আছে পানি। চকরিয়ার পৌর শহরের শপিং কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পানি বের করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করছেন।


চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পরিস্থিতিও একই।


এছাড়াও মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামুতে নানা ক্ষত-ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।


উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ।


তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক যে তথ্য হাতে এসেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকার বেশি। এটা অনেক বেশি হতে পারে। এ পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে বন্যা কবলিতা এলাকার মধ্যে চকরিয়া-বদরখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটার, ইয়াংগা-মানিকপুর- শান্তিবাজার সড়কের ১১ কিলোমিটার, লক্ষ্যারচর- বেথুয়াবাজার- বাগগুজারা সড়কের ১১ কিলোমিটার, একতাবাজার- বনৌজা শেখ হাসিনা সড়কের আধা কিলোমিটার, বরইতলী- মগনামা সড়কের ৭ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম- কক্সবাজার- টেকনাফ মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার, ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, ৩ টি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে। এর সাথে ঘর, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ফসল, বীজতলা সহ অন্যান্য ক্ষতি রয়েছে। যা এখনও নির্ধারণ করতে কাজ চলছে।


এদিকে আংশকার কথা হচ্ছে, চকরিয়া-পেকুয়া এলাকা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১ টা) বৃষ্টি হচ্ছে না। তবে কক্সবাজার শহর ও আশে-পাশের এলাকায় দুপুর ১২ টার পর থেকে থেমে থেমে মাঝারি মানের বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আশে-পাশে এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা দেখা দিয়েছে।


আরএক্স/