ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম বাঁধ ভাঙ্গে কার লাভ-কার ক্ষতি বেশী


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, ১৪ই আগস্ট ২০২৩


ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম বাঁধ ভাঙ্গে কার লাভ-কার ক্ষতি বেশী
ছবি: জনবাণী

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম এর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী ও কহুয়া নদী রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গলে কিছু জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মুখে মুুচকি হাসি দেখা যায় বলে মন্তব্য করেছেন বানবাসী বিক্ষুব্দ ভুক্তভোগীরা। গত ৪ দিন ধরে পরশুরাম ও ফুলগাজীর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এসব কথাই শোভা পাচ্ছে। 


এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বর্ষার মৌসূমে নদীর পানি বৃদ্ধি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে রাস্তা- ঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবিয়ে দেয়। এতে করে জনজীবনে দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। 


নিঃস্ব হয় খেটে খাওয়া কৃষক, মৎস্য চাষী ও অনেক ব্যবসায়ী। বন্যার পানি নামলেই শুরু হয় জোড়া-তালির সংস্কার ও প্রণোদনার নামে লুটপাট হয়। কিন্তু ভাগ্যের বদল হয়না ফুলগাজী পরশুরামের হতভাগা বানভাসি, ক্ষতিগ্রস্থ ও ভুক্তভোগীদের।


স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমে আতংকে দিনাতিপাত করে ফুলগাজী পরশুরামের অন্তত ৫০ হাজার পরিবারের মানুষে। কারণ টানা ৩-৪ দিন বৃষ্টি হলেই তাদের সব স্বপ্ন পানির নিচে তলিয়ে যায়। ভেসে যায় পুকুরের মাছ, ক্ষতি গ্রস্থ হয় আসবাবপত্র, নস্ট হয়ে যায় রাস্তাঘাট, রোগব্যাধী বাড়ে মানবদেহে এবং গবাদী পশু ও প্রাণীর মাঝে। পঁচে যায় ক্ষেতের ফসল। 


বছরের পর বছর সাধারণ মানুষের মাঝে ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় নি:স্ব হলেও এ নিয়ে যেন কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। গত কয়েক দিনের বন্যায় জেলায় ৮২৫ হেক্টর জমির আমন আবাদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষি বিভাগ দাবী করছে। মৎস্য বিভাগ জানায়, ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যায় অন্তত ৩৭৫টি পুকুর ভেসে কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রাস্তা ঘাট মেরামতের জন্য জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্ধ ঘোষণা করবে।


এ ছাড়াও সাধারণ মানুষের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তার কোন হিসাব কেউ করার প্রয়োজন মনে করেনা। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২২ সালে ফুলগাজী-পরশুরামে বেড়িবাঁধে পরপর ৩ দফায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। প্রতিবারই ৩ থেকে ৪টি স্থানে ভেঙ্গে তলিয়ে যায় আশপাশের এলাকায়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। 


পানি বন্দি হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। জনজীবনে নেমে আসে অবননীয় দূর্ভোগ। শুধু তাই নয়, এর আগে ২০২১ সালে বেড়িবাঁধের ৮ স্থানে ভাঙ্গন, ২০২০ সালে ৬ স্থানে ভাঙ্গন, ২০১৯ সালে ৯ স্থানে ভাঙ্গন, ২০১৮ সালে ১৪টি স্থানে ভাঙ্গনে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়ে। তারপরও বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন থেকে স্থানীয়দের রক্ষা করতে জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। সরকার থেকেও কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। 


বানবাসিরা জানান, সবকিছু ডুবিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় এমপি, ডিসি, এসপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ছুটে আসেন আমাদেরকে এক নজর দেখার জন্য। এসময় এসব লোকদেখানে কারবারে দেখা মেলে দেশের খ্যাতিমান গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকেও। অনেকেই আসার সময় আমাদের জন্য শুকনো খাবার নিয়ে এসে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়। এতটুকু করেই দায় সারতে চায় রাস্ট্র। পরবর্তীতে আমাদের কি হল, কি গেল, সে বিষয়ে আর কেউ কোন খবর নেয়না। 


মাহমুদুল হাসান নামের এক বানবাসি বলেন, বছরের পর বছর দেখে আসছি বন্যা হয়। রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্যা নেমে যাওয়ার পর রাস্তা ঘাট মেরামতে হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্ধ হয়। নামকাওয়াস্তে কাজ করে এসব টাকা কিছু জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হয়। 


বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের সমিকরণও একই। এসব কাজ দেখলে মনে হয়, যত ভাঙ্গবে, যত ডুববে, ততবেশি জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তারা লোপাটের সুযোগ পাবে। এই কারণেই বেড়িবাঁধে ভাঙ্গনের স্থায়ী কোন সমাধানের পথ রচনা করতে জন প্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের কোন আগ্রহ নেই।


তবে গত ২-১ বছরে লোক দেখানো কাজের বিষয়ে অনেক সজাগ হয়েছে স্থানীয়রা। তারা ত্রাণ বিতরণের নামে ফটোসেশনকারীদের প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন। তারা এখন আর ত্রাণ চায়না; তারা বাঁধের স্থায়ী সমাধান চান।


আরএক্স/