প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি!


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ১৫ই আগস্ট ২০২৩


প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি!
বাবুই পাখি

প্রকৃতি থেকে একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা! এক সময় প্রকৃতি ধাবরিয়ে বেড়ানো এ পাখি গুলো আজ কালের বিবর্তনে বাংলার আবহমান চির চেনা সবুজ প্রকৃতি থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলার এখানে ওখানে তাল গাছের পাতায় কত না মেধা শক্তি খাটিয়ে নিপুণ কারুকার্য করে নিজেদের নীড়কে গড়া সেই বাবুই পাখি। 


কেন যেন মনে পড়ে গেল,বিখ্যাত কবি রজনীকান্ত সেনের কবিতার ভাষা। তার কবিতার ভাষায় তিনি বলেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। হ্যাঁ আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিঁখুত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি নিজেই আজ অস্তিত্ব সংকট বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের ধারণা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ একেবারেই বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির চিরচেনা বাবুই পাখির বাসা। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা।


১৪ ও ১৫ আগষ্ট গত দুই দিন ভোলার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে এখন আর আগের মতো চোখেই পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কষ্টকর। প্রতিটি তালগাছে ১শ’ থেকে ১১০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ৮-১০ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবন ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে।


সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। নিচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।


ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মহাবিদ্যালয়ে প্রকৃতিমনা ইংরেজি প্রভাষক মোঃ মাকসুদুর রহমান তুহিন বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙত। কিছু এখন আর সেই শব্দও শুনা যায় না। 


১৫ ই আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুর ১টা ঘটিকায় ভোলা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন,বাসস্থান সংকটের কারণে এ পাখি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ পাখিদের বাসস্থানের প্রধান দুটি গাছ তাল এবং খেজুর গাছ। তবে প্রকৃতিতে এখন খেজুর গাছ আর তাল গাছ নেই বললেই চলে। এজন্য পাখি গুলো চরম অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় পরিবেশ থেকে আজ বিলুপ্তি পথে এ বাবুইপাখি। তিনি আরও বলেন এ বছর তারা জেলায় ৫০ হাজার তাল গাছ লাগানোর জন্য বীজ সংরক্ষণ শুরু করেছেন।


আরএক্স/