হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

পাবনা প্রতিনিধি: বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে। "বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা। ”রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতার সেই বাবুই পাখি আজ কালের বির্বতনে পাবনায় হারিয়ে যাচ্ছে। 

একসময়ে গ্রামের তালগাছ, খেজুর গাছ, কিংবা নারিকেল গাছে বাবুই পাখির স্বাধীন বিচরণের জন্য নান্দনিক বাসা চোখে পড়তো। শুনাযেত বাসায় বসে তাদের কিচির মিচির শব্দ। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর চোখে পরে না।  কালের বিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টি নন্দন পাখি তার বাসা, তালগাছে বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য ও গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তালগাছ দুটোই আজ হরিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামে আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টি নন্দন ছোট্ট বাসা। গ্রামঞ্চলে দুই একটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা ও বিচরণ থাকলেও আগের মতো আর নেই। কয়েক বছর আগেও গ্রাম কিংবা শহরে সড়কের পাশে তালগাছে এদের শৈল্পিক বাসা ও বিচরণ দেখা যেত। 

তালগাছ কমে যাওয়ায় এদের বিচরণ এখন কমে গেছে। শিল্পী স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে সাধারণত উঁচু তালগাছে বাসা বেঁধে থাকে। শৈল্পিক এসব বাসা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও এদের বাসা ছিড়ে পড়ে না। বর্তমানে প্রাকৃতিক বির্পযয়ের কারণে গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির এক অপরুপে সৃষ্টি বাবুই পাখি, অথচ এক যুগ আগেও প্রায় সর্বত্র দেখা যেত তাদের। এখন আর তালগাছের পাতায় চোখে পড়ে না তাদের শৈল্পিক বাসা, শোনা যায় না কিচির মিচির শব্দ। 

নিবির্চারে বৃক্ষ নিধন, শিকারিদের দৌরাত্ম, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ মানববসতি বাড়ায় ও জলবায়ু পরির্বতনের বিরুপ প্রভাবে আজ পাবনায় বাবুই পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। বাবুই পাখি দলবদ্ধ প্রাণী। খুব ভালো বাসা বোনে বলে এরা তাঁতি পাখি নামেও পরিচিত। বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ধরণের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট্ট উদ্ভিদের পাতা,ফুলের মধু রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। গ্রীষ্মকাল এদের প্রজনন মৌসুম। বাংলাদেশের বাংলা ও দাগি বাবুই এর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে তবে দেশি বাবুইকে এখনো গ্রামের তালগাছ, নারিকেলগাছ, খেজুরগাছে, দলবেঁধে বাসা তৈরি করতে দেখা যায়। 

চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়ালের কিছু প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আমাদের এলাকায় আগের মতো আর বাবুই পাখির বাসা না দেখা গেলেও এখনো গ্রামের অনেক তালগাছে বাবুই পাখি ও তার বাসা চোখে পড়ে। 

তারা জানান, মানববসতি বাড়ায় নির্বিচারে গাছকেটে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর নির্মাণের ফলে আমাদের গ্রাম থেকে বাবুই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, শুধু বাবুই পাখি নয়, অন্যান্য পাখিও আমাদের গ্রাম থেকে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র পাবনা জেলার নেটওয়ার্ক সদস্য শফিক আল কামাল বলেন, শুধু বাবুই পাখি নয় কালের বির্বতন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীটপতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। নিবির্চারে বৃক্ষ নিধন করে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর নির্মাণ, শিকারিদের দৌরাত্ম ও জলবায়ু পরির্বতনের বিরুপ প্রভাবে আজ পাবনায় বাবুই পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময়ে পাবনার বিভিন্ন গ্রামঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেলেও এখন আর চোখে পরে না। তিনি আরও বলেন, পাখি এবং বৃক্ষহীন পরিবেশ একসময় মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে। শুধু তাই নয় এখন বসতবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা ঘাট, ফসলি জমিতে ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ বন্ধে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভাবে এবং জনগণের সচেতনতায় এসব পাখি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে এক সময় সব ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছ এবং পাখি পরিবেশের জন্য ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যার যতটুকু সম্ভব নিজ উদ্যেগী হয়ে পাখি রক্ষা করি এবং পরিবেশ রক্ষায় পাখির অভয়ারণ্যে গড়ে তুলি।