ভরা মৌসুমেও দেখা নেই ইলিশের, বিপাকে বাগেরহাটের জেলে-মহাজনরা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৫৮ অপরাহ্ন, ২০শে আগস্ট ২০২৩
ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের জেলেদের জালে ধরা পরছে না কাঙ্কিত ইলিশ। এমন অবস্থায় খরচের টাকা তুলতে বিপাকে পরেছেন জেলে মহাজনরা। ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলে-মহাজনদের অনেকেই চিন্তা করছেন পেশা পরিবর্তনের।
খরচের টাকা তুলতে না পেরে জেলো মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর মহাজনরা বলছেন ইলিশ না মেলায় লাভ তো দূরের কথা আড়ত চালানোই কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে। সরোজমিনে বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের অভাবে অনেকটা শূণ্য অবস্থায় রয়েছে কেবি বাজারের আড়ত গুলো।
দেখা যাচ্ছে না আগের মত ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। এ বাজারে যে পরিমান ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলায় তার পরিমান খুবই কম। শনিবার কেবি বাজারের আড়ত গুলোতে কেজি প্রতি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে সাড়ে ১৫শ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া ৪০০শ থেকে ৫০০শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ ও ২৫০ গ্রাম থেকে ৩শ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা পর্যন্ত। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে আফজাল মোল্লা বলেন, মোগো জাইল্লাদের অবস্থা ভালো না। কয়েডাদিন আগে গেল ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা।
সে সময় ভারতের জাইল্লারা সব মাছ ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝড়-তুফান মাথায় লইয়া সাগরে গেছিলাম ইলিশ না পাইয়া খালি হাতে ফেরত আইতে হইছে। মোরা যে ট্যাহা খরচ কইরা সাগরে গেইলাম তার অর্ধেক টাকাও উডাইতে পারিনি। সামনে আবার ২১ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসচ্ছে। মোগো এহন এই মাছ ধরার কাজ বন্ধ দেওন ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার জেলে বশিরুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর ধরে মাছ ধরছি। এ বছরের মত কম মাছ কখনো পাইনি। মাছ ধরে ভারতের জেলেরা সাথে চট্রগ্রামের বড় বড় ট্রলার। অমরা ছোটখাট জেলেরা খালি হাতেই ফিরে আসচ্ছি সাগর থেকে।
ভারতের জেলে ও চট্রগ্রামের জেলেদেও ট্রলারে এক ধরনের মেশিন থাকে যা দিয়ে কোথায় ইলিশ মাছ রয়েছে তা সনাক্ত করা যায়। ওই মেশিন দিয়ে ওরা সব মাছ ধরে নিয়ে যায়।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাযায়, বাগেরহাট জেলায় জেলে রয়েছে ৩৯ হাজার ৬শ ২৭ জন এর মধ্যে ইলিশ আরহনে সাগরে যাওয়া নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৩ জাহার। তবে বেসরকারি হিসাবে মত সাগরে ইলিশ আহরনে জন্য প্রতি মৌসুমে সাগরে যায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের জেলেরা মূলত প্রযুক্তিগত সহায়তা না নিয়ে সাগরে গিয়ে বিপাকে পরছেন। কারন আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আমাদের দেশের জেলেরা এখন ইলিশের ঝাক চিহ্নিত করার জন্য সোনারা নামের একধনের যন্ত্রের ব্যবহার করছে।
এ কারনে তারা সাগরে ভালো মাছ পাচ্ছেন। এর বিপোরিতে বাগেরহাটের জেলেরা এখানও সেই পুরাতন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তারা ধরনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সাগরে মাছ ধরে, যে কারনে সগরে তারা কাঙ্খিত ইলিশ পাচ্ছে না। এখনই সময় এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের।
আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ ধরার জন্য জেলে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি মোঃ আবেদ আলী বলেন, গত এক সপ্তারে কেবি বাজারে ট্রলার এসেছে ৭ থেকে ৮টি। ওই ট্রলার গুলোতে ইলিশ ছিলো মাত্র দুই টনের মত, যা খুবই সামন্য। কারনে মৌসুমের এ সময় টাতে কেবি বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টন ইলিশেও উঠতো।
বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের দাদনের টাকাই উঠাতে পারছেন না জেলেরা। সব মিলিয়ে জেলে-মহাজনরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
আরএক্স/