জাকের পার্টির জাতীয় কাউন্সিল

দেশের মধ্যে দুর্যোগের ঘনঘটা, কালো মেঘ ধেয়ে আসছে: মোস্তফা আমীর ফয়সল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, ২৫শে আগস্ট ২০২৩


দেশের মধ্যে দুর্যোগের ঘনঘটা, কালো মেঘ ধেয়ে আসছে: মোস্তফা আমীর ফয়সল
জাকের পার্টির জাতীয় কাউন্সিল। ছবি: জনবাণী

জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদী বলেছেন, দেশের মধ্যে দুর্যোগের ঘনঘটা। কালো মেঘ ধেয়ে আসছে। দেশি-বিদেশি চক্রের লোভ অব্যাহত আছে। এবং সেই চক্রান্তের সঙ্গে এই দেশের সব রাজনৈতিক দলই জড়িত। 


শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাকের পার্টির চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।


মাস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদী বলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরে বাংলাদেশে একটি নির্বাচনও নিরপেক্ষ হয় নাই। প্রশাসনকে ব্যবহার করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচন করা হয়েছে। ফলাফল পক্ষে নিয়ে গেছে । আমরা এ ধরনের নির্বাচন দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই । আমরা চাই গণতান্ত্রিক অধিকার, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা, প্রাণ খুলে কথা বলার অধিকার।


জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদী বলেছেন, উন্নয়ন করলেই দেশের মানুষের সমর্থন পাবেন, এটা আশা করবেন না। শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাকের পার্টির চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষ এখন ভয়ে-ভয়ে কথা বলে। টকশোতে, প্রকাশ্যে কিংবা হাটে-বাজারে সব জায়গায় মানুষ ভয়ে-ভয়ে কথা বলে। কথা বললেই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য জনগণ সন্তুষ্ট নয়। জনগণ বাক স্বাধীনতা চায়। তারপর তার গণতান্ত্রিক অধিকার চায় । শান্তিপূর্ণভাবে যার যার ভোট দিতে চায়। তারপরে উন্নয়ন চায় অতএব, উন্নয়ন করলেই আপনি বা আপনারা যারা রাজনীতি করেন, দেশের মানুষের সমর্থন পাবেন, এটা কিন্তু আশা করবেন না।


তিনি বলেন, উন্নয়ন এক জিনিস, আর গণতন্ত্র আরেক জিনিস। পৃথিবীর বহু ডিক্টেটর উন্নয়ন করেছে, বহু স্বৈরাচার উন্নয়ন করেছে। সারা জগতের দিকে যদি তাকান, ইরাকে সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ায় গাদ্দাফি তারা কি উন্নয়ন করে নাই? কিন্তু, জনগণের সমর্থন তারা পায় নাই। পাকিস্তানের আইয়ুব খান। তদানীন্তন সময়ে উন্নয়ন কি করে নাই? জনসমর্থন পায় নাই।


তিনি আরো বলেন,জাকের পার্টি একটি আদর্শ, যেই আদর্শের পথে মানুষ মুক্তি পেতে পারে ,যে আদর্শের পথে মানুষ শান্তি পেতে পারে। আমরা নীতি -নৈতিকতাকে প্রাধাণ্য দিই। আমরা মানব রূপি দানবের কাজ করিনা, আমরা মানুষ শয়তান নই। কিন্তু দুভাগ্যজনক হলেও বাংলাদেশে মানুষ শয়তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।


জাকের পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের কল্যাণে জাকের পার্টির যা করা লাগে তাই করবে । জাকের পার্টি ১৪ দলেও নাই ৩৬ দলেও নাই,জাকের পার্টি আছে এ দেশের মানুষের সাথে ।


জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ড. সায়েম আমীর ফয়সল বলেন, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। বর্তমানে যে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, বাংলাদেশে যখন রাজনীতি হাতিয়ারকে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নির্বাচন অনেক দূরের কথা বর্তমানে আমার জেলাতেও রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই।


তিনি আরও বলেন, জাকের পার্টি হানাহানি মারামারিতে বিশ্বাসী নয়। তবে ধৈর্যের সীমালঙ্ঘন করতে করতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, সংগ্রাম কিন্তু আমরাও করতে পারি।


জাকের পার্টির চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিল গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার  সকাল ১০ টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪ টায়। সুবেশী ডেলিগেট কাউন্সিলর,নেতা,নেত্রী,কর্মী,সমর্থক,শুভানুধ্যায়ী -সব মিলিয়ে লাখো প্রাণের গগন বিদারী তাকবীর ধ্বনী, হর্ষধ্বনী ও করতালিতে বার বার প্রকম্পিত হয় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। উদ্বোধনী অধিবেশনে সমবেত জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাকের পার্টি চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্ব খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর খাজা সায়েম আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী কাউন্সিলের উদ্ভোধন করেন। এ সময় সকলে দাড়িয়ে একযোগে জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলান। সুবৃহৎ ব্যাক ড্রপ, সে সাথে ফুলে ফুলে সুসজ্জিত দৃষ্টিনন্দন, নজড়কাড়া, আকর্ষণীয় এবং সুউচ্চ মঞ্চ উৎসবের মাত্রায় সুষ্পষ্ট প্রভাব তৈরী করে। মহা উৎসবের কাউন্সিলে সকাল থেকে রাজধানীর চারপাশে স্থাপিত ৮ টি পয়েন্টে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা,কর্মীগন এবং মহানগরের বিভিন্ন থানা ও আশপাশের জেলা থেকে মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে। জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জাকের পার্টি চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ছবি সম্বলিত বাহারী ও বর্ণিল ব্যানার, ফেষ্টুন ও প্ল্যাকার্ডসহ বর্ণাঢ্য মিছিল রাজধানী মাতিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকলে অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হয়। একই সাথে জাকের পার্টির সহযোগী সংগঠনসমূহ পৃথক পৃথক বিশাল মিছিল নিয়ে কাউন্সিলে উপস্থিত হয়। মিছিলে ব্যান্ড পার্টি ভিন্ন রঙ ছড়ায়। ভক্ত মিশনের মিছিল বৈচিত্র্য তৈরী করে। তবে কাউন্সিল অভিমুখে আশপাশের জেলা থেকে নেতা, কর্মী ও জনতার উজ্জীবনী মিছিল দারুন মাত্রা যোগ করে। 


এদিকে, ৪র্থ জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জুড়ে সুদৃশ্য সুবিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়। হাজার হাজার চেয়ার, ফ্যান ও কার্পেট দিয়ে জমকালো করা হয় প্যান্ডেল। ত্রিপল দিয়ে ছেয়ে দেযা হয় পুরো প্যান্ডেল। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের চৌকষ বাহিনী অনুষ্ঠানস্থল ও আশাশের গোটা এলাকায় অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভুমিকা নেয়।


এরআগে, কাউন্সিলে মোস্তফা আমীর ফয়সল জাকের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন। কাউন্সিলে জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সায়েম আমীর ফয়সলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিভিন্ন স্তরের হাজারও নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। জাকের পার্টি রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে ১৯৮৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাকের সংগঠন নামে যাত্রা শুরু হয়। আটরশির পীর ছাহেব ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে  ১৯৮৯ সালে জাকের পার্টির ফলক উম্মোচন করেন।


আরএক্স/