শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরো সংবেদনশীল হতে হবে


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০২:৫০ পিএম, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ড. আতিউর রহমান - ফাইল ছবি

মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অস্থির বিনিময় হারের কারণেই বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঘিরে বিশেষজ্ঞ ও প্রধান প্রধান অংশীজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। এসবের প্রভাব জনগণের মনেও পড়ছে। তাদের প্রতিদিনের জীবনচলায় চাপ ও তাপ দুই-ই বাড়ছে। তাই নীতিনির্ধারকদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যে আরো সংবেদনশীল হতে হবে সে কথা তো সত্যি। তবে এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। প্রবৃদ্ধির দৌড়ে এখনো বাংলাদেশ এগিয়েই আছে। তা ছাড়া সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়েও খুব বেশি দ্বিমত নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে সমকালীন সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে। সামনে বিপুল নীল সমুদ্র। তাকে পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আগামী দিনের বাংলাদেশের নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বিরাট যেসব ঢেউ এই মুহূর্তে তীরে এসে ধাক্কা মারছে তাতেই শঙ্কা বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশের অর্জন তো মোটেও হেলাফেলার নয়। কিন্তু তবু কেন এই শঙ্কা? এই দুর্ভাবনা কি খুবই সাময়িক? নাকি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মতো কোনো বাস্তব কারণ রয়েছে? আমাদের অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের দিকে কী আমরা যথেষ্ট নজর দিইনি? নাকি বিশ্ব অর্থনৈতিক চাপের মুখে আমরা খানিকটা অগোছালো পদক্ষেপ নিয়েছি? বাজারের মুড বুঝে কি আমরা যথেষ্ট বিচক্ষণ নীতি-সক্রিয়তা দেখাতে দ্বিধান্বিত?


এ কথা ঠিক, শুধু বাইরের অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করে আমরা আমাদের এগিয়ে চলার পথ কণ্টকমুক্ত রাখতে পারব না। আমাদেরও যে দায় আছে সে কথাটি মানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কালান্তর’ পর্বের লেখা ‘বাতায়নিকের পত্র’-এ ঠিকই অনুভব করেছিলেন যে ‘জাহাজের খোলের ভেতরটায় যখন জল বোঝাই হয়েছে তখনই জাহাজের বাইরেকার জলের মার সাংঘাতিক হয়ে ওঠে। ভেতরকার জলটা তেমন দৃশ্যমান নয়, তার চালচলন তেমন প্রচণ্ড নয়, সে মারে ভারের দ্বারা, আঘাতের দ্বারা নয়, এই জন্য বাইরের ঢেউয়ের চড়-চাপড়ের ওপরেই দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে; কিন্তু হয় মরতে হবে, নয় একদিন এই সুবুদ্ধি মাথায় আসবে যে আসল মরণ ঐ ভেতরকার জলের মধ্যে, ওটাকে যত শীঘ্রই পারা যায় সেচে ফেলতে হবে। ...মনে রাখা চাই যে সমুদ্র সেচে ফেলা সহজ নয়, তার চেয়ে সহজ, খোলের জল সেচে ফেলা।’ নিঃসন্দেহে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির উৎস যদি কোনো ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে সেদিকে আগে নজর দিতে হবে।


আমাদের অর্থনীতিতে এখনো নিশ্চয়ই বাইরের বাধা প্রচুর রয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। ডলার বাজারে আগুন। আমদানি করা পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। তাই বলে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? আমাদের মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার পরিচিত কামান কি আসলেই আমরা সজোরে দাগিয়েছি? সমন্বিত মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির তীর কি সময়মতো তূণ থেকে বের করেছি? মুদ্রার একাধিক বিনিময় হারকে কি সমন্বিত করেছি? শ্রীলঙ্কা এবং হালের তুরস্ক যদি নীতি সুদের হার এতটা বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর পথে হাঁটার সাহস দেখাতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারছি না? এসব প্রশ্নের সোজা উত্তর দেওয়া মুশকিল। এর সঙ্গে অনেক কাঠামোগত প্রশ্ন নিশ্চয়ই জড়িয়ে আছে। এ কথাও মানি, নির্বাচনের এই বছরে অনেক ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তবু মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটের মতো প্রধান সমস্যাগুলোর সামনাসামনি দাঁড়াতেই হবে আমাদের।


অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার বাজারটিই আমাদের বেশি ভোগাচ্ছে। আবার এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আছে মুদ্রানীতির ভঙ্গিটির সঙ্গে। অন্য কথায় সুদের হারের নমনীয়তার মাত্রার ওপর। কভিড সংকট ও ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে আমাদের আমদানি মূল্য বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই মূল্য শুধুই রপ্তানি ও প্রবাস আয় দিয়ে পুরোপুরি শোধ করা সম্ভব হয়নি বলেই বাণিজ্য ঘাটতির হাত ধরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার কমতে থাকে। তাই টাকার মান অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। প্রায় একই হারে আমদানি শুল্কও বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার কিছুটা কমালেও সার্বিকভাবে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ন্তই রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানির ওপর নিশ্চয়ই এসবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমাদের আমদানি করা নিত্যব্যবহার্য পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও বিলাসপণ্যের সরবরাহ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাই হালে বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই কমেছে। এর প্রভাবে আমাদের চলতি হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে। যদিও এই উন্নতির পেছনে অনেক ছোটখাটো আমদানি আনুষ্ঠানিক চলতি হিসাবের বাইরে চলে যাওয়ার কারণেও হতে পারে। কেননা ছায়াবাজারে লেনদেনের চাহিদা এখনো বেশ চাঙ্গা বলেই মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে হুন্ডির বাজার কম করে হলেও ১৫ বিলিয়ন ডলারের কম বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে আনুষ্ঠানিক প্রবাস আয় কমছে। একই সঙ্গে নিট এফডিআই ও বিদেশি সহযোগিতার ছাড়সহ আমদানি ঋণ ও রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং কমে যাওয়ার কারণে আমাদের আর্থিক লেনদেন ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। এর প্রভাব সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যের ওপরও পড়েছে। এটিও এখন নেতিবাচক। এসবের চাপ রিজার্ভের ওপর পড়ছে। তা দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার এখনো মন্দ নয়। তবু অর্থনীতির বাড়ন্ত আকারের কথা মনে রাখলে এই ক্ষয়ের ধারা নিয়ে তো শঙ্কা হতেই পারে।


এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রপ্তানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের রপ্তানি আয় আগের চেয়ে কম নগদায়ন হচ্ছে, তা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের এতটা ফারাকই কি এর জন্য দায়ী? এর ফলে কি এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছে যে ডলারের দাম আগামী দিনে আরো বাড়বে? তাই পুরোটা দেশে না আনলেই তাদের জন্য ভালো, নাকি বাকিতে পণ্য রপ্তানি আয় আগাম নগদায়নে বিদেশি ব্যাংক আগ্রহী হচ্ছে না? টাকার অবচিতির ধারা হালের প্রবাস আয় কমে যাওয়ার পেছনেও খাটে? নাকি প্রবাসীদের অনেকেরই আনুষ্ঠানিক কাজের যথাযথ কাগজপত্র নেই? নাকি রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান অনেক সূক্ষ্মভাবে সব আমদানি এলসি দেখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না? তাই তারা ছায়াবাজারে গিয়ে ডলারের চাহিদা বাড়াচ্ছে। তাহলে এই চাহিদা কমানোর উপায় কী? মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতিকে আরো সংকোচনমূলক করাই কি এই সংকটের অন্যতম একটি উত্তর হতে পারে? এসব প্রশ্ন না এড়িয়ে বরং এসবের ভালো ও মন্দ দুই দিক নিয়েই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে আমার কাছে মনে হয়।


আমদানিনির্ভর শিল্পায়নের সুফল আমরা অনেক দিন ধরেই পেয়ে আসছি। কাঁচামাল, মধ্যপণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানি না করা গেলে আমদানি বিকল্প কিংবা রপ্তানি শিল্পই বা সচল রাখা যাবে কী করে? ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পগুলোকে ওবিইউ বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে আমদানি মূল্য সেটলমেন্ট করার বিশেষ সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকই চালু করেছিল। কিন্তু কী কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর এ ধারায় স্বল্পকালীন আমদানি ঋণ দিতে অনীহা তা জানা দরকার। অবিলম্বে বিদেশি ব্যাংকগুলো ও তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে নিবিড় আলাপের প্রয়োজন রয়েছে।


আর বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি (এরই মধ্যে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে) চলতি হিসাবে বাণিজ্যিক লেনদেন, বিজ্ঞাপনী ব্যয়, চিকিৎসা ব্যয়, কার্ড পেমেন্টস কী করে সহজ ও ‘সিমলেস’ করা যায়, তা এক্ষুনি ভাবতে হবে। তাহলেই এসব লেনদেনের জন্য তারা ছায়াবাজারে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রপ্তানিকারকদের তাদের রপ্তানি পণ্যের আয় দেশে আনতে হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে (ব্যাংক, কাস্টমস, ইপিবি ইত্যাদি) তাদের রিপোর্ট করতে হয়। একই কথা সার্ভিস রপ্তানির বেলায় খাটে না। তাদের সে জন্য কর সুবিধা ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে এই আয়ও ছায়াবাজারে চলে যেতে পারে।


বিদেশি মুদ্রায় পরিবহন খরচের একটি বড় অংশ আমরা নিজেদের জাহাজ চালু করে বাঁচাতে পারতাম। এ বিষয়টির পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজন সমানতালে সক্রিয় হলে এ ক্ষেত্রে বড় মাপের বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় করা নিশ্চয়ই সম্ভব। বর্তমানের এই টানাপড়েনের মধ্যেই দিল্লিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ টাকা-রুপি কার্ড ও বিনিময়ের যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন দ্রুত করা হলে ডলার খরচের ওপর চাপ বেশ খানিকটা কমানো সম্ভব। এর পাশাপাশি যেসব দেশ থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয় তাদের সঙ্গে ‘সোয়াপ’ লাইন চালু করা যেতে পারে। একইভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে (যেমন—আইডিবির আইটিএফসি) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিশেষ সমর্থন লাইন চাওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা এখনো চালু আছে, তবে সমকালীন বাস্তবতায় তা আরো জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।


এই আলোচনার আলোকে আমরা নিচের প্রস্তাবগুলো করতে পারি :


১. আমদানিসহ চলতি হিসাবের সাধারণ লেনদেন সিমলেস করা। ২. প্রবাস আয়কে আরো নীতি সমর্থন দেওয়া এবং তার লেনদেনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তা দূর করা। ৩. যেসব ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের দেওয়া স্বল্পকালীন ঋণে আমদানি মূল্য সময়মতো মেটায়নি তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেওয়া। একই সঙ্গে ওই সব বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে সব বাধা দূর করার ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। বিনিময় হার ও আমদানি ঋণপত্র মনিটরিংয়ের চেয়ে আমাদের ব্যাংকগুলোর বিদেশি লেনদেন পরিশোধ ব্যবস্থার ধরন মনিটরিং আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৪. আমদানি পণ্যের দাম মনিটরিংয়ের নামে ব্যাংকগুলোকে আতঙ্কিত না করে বরং গাইড করা এবং সাহায্য করা দরকার। যাদের সাধ্য কম তারা কম ইউপাস ব্যবস্থায় যুক্ত হবে—সে বার্তাটি দিতে হবে। ৫. সেবা খাতের আয়কে কর ছাড় ও অন্যান্য প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে আনার সুযোগ করে দেওয়া। ৬. সার্ক ফিন্যান্সের আওতায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত ডলার-রুপির ‘সোয়াপ’ ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ৭. আইডিবির মতো বহুজাতীয় সংস্থার সঙ্গে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য অন্তত দুই বিলিয়ন ডলারের বিশেষ ঋণের লাইন খোলা। এ জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে। ৮. যেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাপক, তাদের আমদানি ঋণসহ সব ধরনের বড় ঋণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটি করেছে। এই ব্যবস্থা সব দুর্বল ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য করা উচিত। ৯. প্রতিটি টাকা খরচের সঙ্গে খানিকটা বিদেশি মুদ্রার খরচও যুক্ত থাকে। তাই যেসব প্রকল্প শিগগিরই সমাপ্ত হতে যাচ্ছে সেগুলো বাদে আপাতত অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ স্থগিত কিংবা ধীরলয়ে করা উচিত। ১০. ব্যাংকগুলো আগাম আমদানি খরচের কথা বলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে বলে বলা হচ্ছে। প্রশাসনিক দৃষ্টিতে না দেখে এই বিষয়টি চাহিদা ও সরবরাহের বাজারভিত্তিক ভারসাম্যহীনতার আলোকে দেখা এবং পরবর্তী সময়ে সহায়ক নীতি সমর্থন দেওয়া উচিত। ১১. সংকটকালে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপের কোনোই বিকল্প নেই। যাঁরা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল, যাঁরা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিরন্তর আলাপ চালিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।


আমি মাত্র কয়েকটি পরামর্শ দিলাম। এমন সময়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, প্রতিনিধি, বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ উপযুক্ত অংশীজনদের সঙ্গে বসে নিবিড় আলাপ-আলোচনা করে চলমান আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটানোর পথ নিশ্চয়ই বের করা সম্ভব। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির ধারাবাহিকতার জোরে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রয়েছে। এই সময়ে যে মেগা অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যেগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কানেক্টিভিটিরও প্রশংসনীয় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমাদের সামনে তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সাফল্যের অমিত সম্ভাবনা। কিন্তু তার আগে এই মুহূর্তে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা চাই। সম্পদ পাচার, সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের দৌরাত্ম্যের মতো সমস্যাগুলো যে রয়েছে তা স্বীকার করতে হবে এবং সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে এসব সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে ২০০৮ সালে মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার রিজার্ভকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল মুদ্রানীতি ও বাজেটের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে। সে সময়ে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনাও সম্ভব হয়েছিল। কী করে তা সম্ভব হয়েছিল সে নীতির ফুটপ্রিন্টগুলো তো রয়ে গেছে। তাহলে এখন তা পারব না কেন? সে জন্য সব অংশীজনকে বিদ্যমান বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।


 

লেখক :  ড. আতিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

আধ্যাত্মিক সাধনায় সূফীজম ও কাশফের প্রয়োজনীয়তা


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০৯:১১ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: সংগৃহীত

সূফী তথা সুফিজমের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ‘সুফ’ তথা ছাগল বা ভেড়ার লোম থেকে সূফী নামটির উৎপত্তি । কেউ কেউ বলেন ‘সাফি’ অর্থাৎ ময়লা পরিষ্কারক থেকে সূফী কথাটি এসেছে। তবে আরবি ‘সাফা’ (পবিত্র) শব্দ থেকে সূফী শব্দটির উৎপত্তি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বস্তুত: অন্তরের ময়লাকে পরিষ্কার করার লক্ষ্যেই সূফূীরা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।


পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে সূফী দর্শন বা সূফীবাদ বলা হয়। হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) ছাহেবের মতে, " মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। মহব্বতের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বে লীন হয়ে যাওয়া। যাকে মনছুর হাল্লাজ (র.) ছাহেব পরিণত করেছিলেন ‘ফানা ফিল্লা’তে।


যে মতবাদ ধর্মের গতানুগতি কতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে বিচার করে, সেটাই সূফীবাদ। হজরত জুনাইদ বোগদাদি (র.) ছাহেব সূফীবাদকে অভিহিত করেছেন ‘নিজের অজ্ঞতার উপলব্ধি’ বলে। অজ্ঞতা বলতে বলা হচ্ছে "বিশালত্ব" তথা আল্লাহকে জানার ও তাঁকে চেনার ব্যাপারে অজ্ঞতা। আল্লাহকে জানার ও চেনার উপায় হোল ভক্তি ও প্রেম । এই প্রেমের অন্য নামই সূফীবাদ। আর এই প্রেমের সাধকরাই সূফী সাধক জগতে পরিচিত।


অনেকে নবী পাক (সা.)’র মাধ্যমে সূফীজমের প্রারম্ভ বলতে চেয়েছেন। এর পক্ষে যৌক্তিকতা হল নবী পাক (স.) নবুওয়্যাত প্রাপ্তির আগে পবিত্র কাবার প্রায় ৫ কি.মি. দূরত্বে হেরা গোহায় মহান আল্লাহ পাকের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আর এখানেই পবিত্র কুরআনের প্রথম শব্দ "ইকরা" নাযিল হয়। এক মতে হযরত হাসান আল বসরী (রহ.) ছাহেব সর্বপ্রথম সূফী বলে গণ্য হয়ে থাকেন ।


প্রিয় নবী (সাঃ) সাহাবাদেরকে ৪টি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন---শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা দূর হয়, হৃদয় আলোকিত হয়। মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশে (রহমতের সময়) জেগে বা অন্য যে কোন সময় আল্লার ধ্যনে মগ্ন থাকা নিজের জীবনের ভুল, বেয়াদবীর জন্য মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা । এভাবেই অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। আর ঐ চোখেই কেবল মো'মেন বান্দার নামাজ মেরাজ সম হয়ে থাকে।


মোরাকাবা হল নফল ইবাদতের অর্ন্তভূূক্ত। নফল ইবাদত হল মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রথমে মোরাকাবা করেছেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত নির্দেশিত হয়েছে।


অবশ্য আরেক মত হচ্ছে পবিত্র আসহাব-ই-সুফফা অর্থাৎ বান্দার এ সাহাবাগণের আদর্শই সূফীরা গ্রহণ করেছিলেন এবং সূফফা থেকে সূফী শব্দটি নেয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববীর বারান্দায় একটা ছাউনির নিচে থাকতেন। রাসুল (সাঃ) সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে বসে হজ্ব ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, ধ্যান বা মোরাকাবা, দরুদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে থাকেন। ছাউনি শব্দটা থেকেই এসেছে সূফী শব্দটা। তাঁরা সেখানে থাকতেন সংসার তথা দুনিয়াবী সব কিছু ত্যাগ করে। তাঁরা লোমের কম্বল এবং পোশাক ব্যবহার করতেন । ওই সাহাবিগণ ব্যবসা-বাণিজ্য-চাষাবাদ কিছুই করতেন না, এমনকি থাকতেন না পরিবারের সাথেও। মক্কা - মদিনা অথবা যেখানেরই অধিবাসী হোন না কেন- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে নিবেদিত ও সমর্পিত হয়েছিলেন তাঁরাই এসে থাকতেন ওই তিনদিক খোলা ছাউনির তলায়। পুরো দলের মধ্যে হয়ত দু-চারজন কাঠ কাটতে গেলেন, বিক্রি করে সবার জন্য দু-চার টুকরা করে রুটির জোগান দেবেন- বাকিরা ওই ছাউনিতেই। নবী পাক (সাঃ)  গোলামিতে। তিঁনার পবিত্র কদমের তলায়। দিন নেই, রাত নেই, গ্রীষ্ম-শীত-ধূলিঝড় নেই সব সময়। তাঁদের না আছে এক টুকরা বাড়তি কাপড়, না একটা বাক্স-পেঁটরা। দাঁড়াতে পারেন না, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান- এই এঁরাই আবার কী করে যেন রাতের পর রাত পার করে দেন সালাতে। দয়ার সাগর রাসূল (সাঃ) তাঁদের ছাড়া খাবেন না। বসবেন না। উঠবেন না। এই আসহাবে সুফফারা দিনের পর দিন রোজা রেখে রাতের পর রাত কুরআন তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক সাধনায় এমন মগ্ন ছিলেন, যে ইসলামের ব্যবহারিক প্রকৃত রূপ হিসাবে তাঁদের দেখেই মানুষ দলে দলে শান্তির ধর্মে শামিল হত। এসে পড়ত তাদের পান্ডিত্য দেখে, মোহ- বরজনের আজব মোহ দেখে। এভাবে যারা করেছেন, তারাই শুধু সূফী নন। ইসলামের পূরো রীতিটা যেই অনুসরণ করেন, শেষ মেশ তিনিই সূফী।


কাশফ কি ;-- কাশফ মানে হল অজানা কোন বিষয় নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক তার কোন বান্দার নিকট এমন কিছুর জ্ঞান প্রকাশ করা যা অন্যের নিকট অপ্রকাশিত। আর এটি কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিঁনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। তিঁনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কাহারো নিকট প্রকাশ করেন না’। ‘তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তিঁনি তার (অহীর) সম্মুখে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন’ (জিন ৭২/২৬-২৭)। এখানে ‘ওহী’ ও ‘রাসূল’ বলতে জিবরীল ও নবী-রাসূলগণকে বুঝানো হয়েছে। তবে কখনও কখনও অন্য কারু নিকট থেকে অলৈাকিক কিছু ঘটতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন ছাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে হয়েছে। অতএব এরূপ যদি কোন মুমিন থেকে হয়, তবে সেটা হবে ‘কারামত’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে এর দ্বারা সম্মানিত করেন।

ঋণ খেলাপি প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিনিধি
🕐 প্রকাশ: ০৭:৫০ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

প্রতীকী ছবি

নিয়ম অনুযায়ী ঋণ খেলাপি কোন গ্রাহক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ব্যাংক ঋণের হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে। 


গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এর কারনে কেউ খেলাপি হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ৭দিন আগে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে নিয়মিত করার নিয়ম ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা হয়। গত জুলাই আবারও ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা হয়। নতুন আইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার একদিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাড় দেওয়ার কারণে ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সহজ হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগের মত ১০ শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হচ্ছে না। এখন অনেক কম অর্থ জমা দিয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছে। একই সাথে ঋণ পুনঃ তফসিলের তথ্য  বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো যে যার মত করে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে দিচ্ছে।


আরএক্স/

জাবিতে এক মাস ধরে বন্ধ মসজিদের নির্মাণ কাজ, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন


ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
🕐 প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: জনবাণী

প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম বরকত হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংলগ্ন মসজিদের নিমার্ণ কাজ। মসজিদের নির্মাণ কাজ পুনরায় চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছে দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। চলতি মাসেই নির্মাণকাজ শেষ করার আল্টিমেটাম দেন তারা।

 

শুক্রবার (১লা ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে নির্মাণাধীন মসজিদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুই হলের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় নির্মাণ কাজ চালু করার দাবি জানান এবং আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও প্রকল্প অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার আল্টিমেটাম দেন তারা।


মানববন্ধন অনুষ্ঠানে  রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র রাফিউল ইসলাম রনি বলেন, মসজিদ নির্মাণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন টালবাহানা শুরু করেছে। এরই মধ্যে চারবার স্থগিত হয়েছে কাজ। অথচ বিশ^বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য প্রকল্পের কাজ দিন রাত ২৪ ঘন্টা চলমান। আমরা এই মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী ১০ তারিখ মধ্যে কাজ শুরু না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন এবং প্রকল্প অফিসে আমরা তালা ঝুলিয়ে দিবো। যতদিন কাজ শুরু না হবে ততদিন এই তালা থাকবে। আমরা আগামী মাসের মধ্যে এই মসজিদে নামাজ শুরু করতে চাই।


নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো: মূসা ভূঁইয়া বলেন, মসজিদের কাজ নিয়ে এতো টালবাহানা আমরা আর কোথাও দেখি নাই। এক বছরের মধ্যে একতলা একটি মসজিদ তারা করতে পারেনি। এটা স্পষ্টতই উদাসীনতা।

 

উল্লেখ্য, দুই হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সমন্বিত একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় ১৯৯০ সালে। তবে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার কিছুদিন পর থেকে পাঁচবার সংস্কার করা হয়েছিল পুরাতন মসজিদটি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে জরাজীর্ণ মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলে। এর মধ্যে নকশা ও আর্থিক জটিলতায় কয়েক দফায় কাজ স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে চলতি বছরের  ১৯ আগস্ট সকালে ঢালাইয়ের কাজ চলাকালীন ছাদ ধসের ঘটনা ঘটে।


আরএক্স/

শীতে রান্না করুন হাঁসের সুস্বাদু ঝাল মাংস


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০২:২৭ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি; সংগৃহীত

শীতের সময় সবচেয়ে মজার একটি খাবার হলো হাঁসের ঝাল মাংস। এ সময় নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে রুটি বানিয়ে অথবা গরম ভাতের সঙ্গে হাঁসের মাংস যেন অমৃত এক খাবারে নাম। হাঁসের মাংস রান্না সহজ মনে হলেও সবাই সুস্বাদু করে রাঁধতে পারেন না। সঠিক মসলার পরিমাণ আর রান্নার কৌশল জানা থাকলে খাবারটি হবে অনেক সুস্বাদু। তবে চলুন রেসিপিটি জেনে নিন।


কি কি লাগবে -


মধ্যম সাইজের হাঁস ১টি, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া ২ চা চামচ, এলাচ ৪টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, কাঁচা মরিচ ৬টি, তেল আধা কাপ, জিরার গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ২ চা চামচ, জায়ফল গুঁড়া এক ।


যেভাবে রান্না করবেন-


প্রথমে পেঁয়াজ তেলে বাদামি করে ভেজে নিতে হবে, তারপর সব মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে আবার অল্প পানি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। এরপর সেই কষাণো মসলায় মাংস ও লবণ দিয়ে দিন। এবার চুলার আঁচ মৃদু করে মাংস ভালোমতো কষিয়ে নিন। বেশকিছু পরে তেল ওপরে উঠে এলে মাংসে গরম পানি দিবেন। মাংস সেদ্ধ হলে ঝোল সামান্য শুকিয়ে গেলে কাঁচা মরিচ ও জিরার গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। সবশেষে পোলাও বা পরোটা দিয়ে পরিবেশন করুন বেশ জমে যাবে। 

ধর্মে সূফীবাদের গুরুত্ব কী?


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ১০:০৪ পিএম,৩০শে নভেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: প্রতিকী

সূফীবাদ হল ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা-সম্পর্কিত আলোচনাই এর মূল বিষয়বস্তু। নিজ নিজ আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা। ‘সুফ’ অর্থ পশম আর তাসাউফের অর্থ পশমি বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস (লাবসুস-সুফ)। মরমিতত্ত্বের সাধনায় কারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাউফ। যিঁনি নিজেকে এরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন, তাঁকেই সূফী বলে। 


তাসাউফ বা সূফীবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বোঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহর (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহতায়ালা নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র পন্থা হতে পারে। তাসাউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে ‘তরিকত’ বা খোদা-প্রাপ্তির পথ বলা হয়। আর তরিকত সাধনায় মুর্শিদের প্রয়োজন আব্যশক। সেই পথ হলো ফানা ফিশ শায়েখ , ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হাছিলের পর বাকাবিল্লাহ হাছিল হয়। 



বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সূফী আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সূফীর অন্তরে সর্ব অবস্থায় শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে।


হযরত মোহাম্মদ (সা.) ফরমান, ‘মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো, এটি হলো কলব বা হৃদয়। আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কলব কলুষমুক্ত হয়।’ সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কলবকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সূফীবাদের উদ্দেশ্য।


সূফীবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যের নগরে। সেখানকার প্রখ্যাত সূফী-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকেরা নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এই দর্শনকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত অলিদের কেন্দ্র করে বিভিন্ন তরিকা গড়ে ওঠে।


তার মধ্যে চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে: ১. বড় পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানি (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা, ২. সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা, ৩. হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং ৪. হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সেরহিন্দী (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দেদীয়া তরিকা। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দি, মাদারিয়া, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া নামে আরও কয়েকটি তরিকার প্রসার ঘটে।


আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সূফীরা বাংলাদেশে সূফীবাদ প্রচার করেন। খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে যেসব সূফী-সাধক এ দেশে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: শাহ সুলতান রুমি (র.) ছাহেব, বাবা আদম শহিদ (র.) ছাহেব, শাহ সুলতান বলখি (র.) ছাহেব, শাহ নিয়ামতুল্লাহ বুতশেকন (র.) ছাহেব, শাহ মখদুম রুপোশ (র.) ছাহেব, শেখ ফরিদউদ্দিন শক্করগঞ্জ (র.) ছাহেব, মখদুম শাহ দৌলা শহিদ (র.) ছাহেব প্রমুখ। এঁরা গভীর পাণ্ডিত্য ও বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বলেও প্রচলিত আছে। বেশ কয়েকজন সূফী-দরবেশ ইসলাম ও সূফীবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের মধ্যে শেখ জালালুদ্দিন তাব্রিজি (র.) ছাহেব, শাহ জালাল (র.) ছাহেব ,শাহ পরাণ (র.) ছাহেব ,শাহ আলী বাগদাদী (র.) ছাহেব, খান জাহান আলী (র.) ছাহেব, শাহ ফরিদউদ্দিন (র.) ছাহেব,শাহ সূফী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) ছাহেব, শাহ সূফী বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেব প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।


হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের গুরুসাধকেরা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে যেভাবে দীক্ষা দান করতেন, সেভাবে মানবপ্রেম তথা সৃষ্টির প্রতি প্রেমের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রেমার্জন সূফীবাদের মূল আদর্শ। সূফীরা নিজেদের আদর্শ জীবন এবং সূফীবাদের প্রেম-ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের মধুর বাণী প্রচার করে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশের সাধারণ মানুষের মন মনন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনেও সূফীদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন পানি পথে যাতায়াতের সময় মাঝিরা ‘বিভিন্ন পীরের’ নাম স্মরণ করে। শুধু তা-ই নয়, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে শহরের যানবাহনে পর্যন্ত বিভিন্ন পীর-আউলিয়ার নাম লেখা থাকে। লৌকিক ধারার মুর্শিদি-মারফতি গান, গাজীর গান, গাজীকালু-চম্পাবতী কাব্য ও অন্যান্য মরমি সাহিত্য, মাদার পীর ও সোনা পীরের মাগনের গান ইত্যাদি বিভিন্ন পীর-দরবেশকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।