সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করতে রংপুরে মতবিনিময় সভা
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:২৫ পূর্বাহ্ন, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয়, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ ও পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান-এঁর নেতৃত্বে রংপুরে অভিযান পরিচালনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) জেলার হাজীরহাট থানাধীন উত্তম হাজীর হাট এলাকায় সকাল ০৯:০০ থেকে সকাল ১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার পরে মতবিনিবয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযান পরিচালনাকালে আরমান কোল্ড স্টোরেজের জেনারেল ম্যানেজার রেজাউল করিম ও রাসেল নামের একজন মজুদদার ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীকে বাজার স্থিতিশীল করার প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরা হয় এবং পুলিশের হেফাজতে সোপর্দ করা হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা প্রশাসক, রংপুর অভিযানে কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রয় করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন ।
পরবর্তীতে সকাল ১১.৩০ মিনিটে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক, স্থানীয় সরকার, রংপুর বিভাগ মো. ফজলুল কবীর।
সভায় আরও এসময় মহাপরিচালকের সাথে উপস্থিত রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, অতরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল হাসান, বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশনের প্রতিনিধি, ওবায়দুর রহমান, উপপরিচালক, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মো. আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত উপপরিচালক, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মো. রবিউল হাসান, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, বোরহান উদ্দীন, সহকারী পরিচালক, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, এনএসআই প্রতিনিধি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিধি, রংপুর জেলা পুলিশ প্রতিনিধি এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
মহাপরিচালক সভার শুরুতে সভা আয়োজন ও উপস্থিতির জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার চলবে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি নির্ভর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে যা দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। নিত্যপণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ এর আওতায় সরকার চিনি ও ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করছে। কৃষি বিপণন আইনে উৎপাদক, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে কে কতটুকু লাভ করবে তার উল্লেখ আছে। সে অনুযায়ী কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হয়। কিন্তু আলুর বর্তমান দর কোন আইন মানছে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু-পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করেছে। সরকার নির্ধারিত এই দর মেনে তিনি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা করতে এবং মুনাফা করার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের দায়িত্ব আছে; সে দায়িত্বের জায়গা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ী এবং আলু সংরক্ষণকারীদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং পাকা রশিদ নিশ্চিত করতে হবে। দেশে আলুর কোন ঘাটতি নেই। তিনি আরও বলেন, কোন কোল্ড স্টোরেজ থেকে সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা মূল্যে আলু বিক্রয় না করলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিত করা হবে।
সভায় রংপুর চেম্বারের পরিচালক জনাব শামসুর রহমান পায়েল বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে চেম্বারের কোন সম্পর্ক নেই। অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারকে অনুরোধ করেন।
আলোচনায় রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার এর পরিচালক জনাব আতিকুল ইসলাম বলেন, কার্যকর নীতিমালা তৈরীর মাধ্যমে সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে।
সভায় রংপুর ক্যাবের প্রতিনিধি জনাব লুৎফুর রহমান বলেন, কৃষক হিমাগারে সরাসরি আলু রাখতে পারে না কতিপয় মধ্যসত্বভোগীদের কারণে। এরূপ অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ জানান।
আলোচনায় আলু ব্যবসায়ী প্রতিনিধি জনাব বিশ্বজিৎ বণিক বলেন, তিনি ৫০ হাজার বস্তা আলু মজুদ করেছেন এবং এ জন্য তিনি হোমল্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ হতে ৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আব্দুল মান্নান ও বাহার উদ্দিন পাটোয়ারী নামক ব্যবসায়ী শাহ আমানত হিমাগারের রবিউল ইসলাম এর নিকট হতে ঋণ নেন। এই বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় হিমাগারগুলো মৌসুমে তাদের নিয়োগকৃত এজেন্টদেরকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের নিকট হতে কম মূল্যে আলু ক্রয় করে হিমাগারে মজুদ করছে এবং এখন বেশি দামে বিক্রয় করছে ফলে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে কিন্তু কৃষক মূল্য পায়নি। অন্যদিকে হিমাগারগুলো বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ব্যাংক হতে লোন নিয়ে অনৈতিক অর্থ লগ্নি করছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই অনিয়মের বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রংপুর জেলা প্রশাসন ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশকে অনুরোধ করেন।
সভায় কৃষি রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, রংপুর বিভাগে আলু উৎপাদনে ব্যয় গড়ে কেজি প্রতি প্রায় ৮.৭৭ টাকা। কৃষক ৮ থেকে ১০ টাকায় জমি হতে আলু বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছে। কোনভাবেই আলুর খুচরা মূল্য ৫০ টাকা হতে পারে না।
সভায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার জনাব আবু বকর সিদ্দিক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আলুর সঠিক মূল্য নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয়ায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় সচেষ্ট এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।
বিশেষ অতিথি মো. ফজলুল কবীর, পরিচালক, স্থানীয় সরকার, রংপুর বিভাগ বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা সকলকে ক্ষমা করতে পারেন কিন্তু মানুষের হক তথা অধিকার বিনষ্টকারীকে ক্ষমা করবেন না। তিনি সকলকে নীতি নৈতিকতা মেনে ব্যবসা করতে অনুরোধ করেন।
পরিশেষে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক সভায় উপস্থিত সকলকে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়নে সবাই সবার অবস্থান থেকে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
জেবি/এসবি