পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইদে মিলাদুন্নবীর (সা.)পালনের অকাট্য প্রমাণ


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬:০৩ অপরাহ্ন, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৩


পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইদে মিলাদুন্নবীর (সা.)পালনের অকাট্য প্রমাণ
মাওলানা শামীম আহমেদ

সকল ঈদের ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোমিনেরই ঈদ’।


মহান আল্লাহর অপার রহমত ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মানবতার মুক্তির দূত রহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয়নবী (সা.)-এর পৃথিবীতে শুভাগমনের আনন্দকেই ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ বলা হয়। যার নূরের আলোয় সারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল। তার ওপরই নাজিল হয়েছে আসমানি গ্রন্থ আল-কোরআন।


তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের আলো হয়ে। হযরত  ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরো জানাচ্ছি, আমি হাবিব আমার পিতা নবী হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার ফসল এবং নবী হযরত ইসা (আ.)-এর সুসংবাদ, আর আমার মাতা (আমিনার) স্বপ্ন।


নবীদের মাতারা এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন। রাসুল (সা.)-এর মা তাকে প্রসবের সময় এমন এক নূর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল (তাবারানি, হাদিস নম্বর : ১৫০৩৩)।


রাসুল (সা.)-এর আগমনের উৎসব আল-কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সেই সমুদয় থেকে, যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)


রাসুল (সা.) প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে সোমবার দিন রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসলিম : ১১৬০)।


আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ ঈদ কীসের ঈদ? উত্তর এ ঈদ প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমন তথা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঈদ। প্রশ্ন হতে পারে, হাদিসে কি মিলাদুন্নবীর কথা আছে? জি, আমরা দেখতে পাই জামে তিরমিজি দ্বিতীয় খণ্ডে ২০৩ পৃষ্ঠায় মিলাদুন্নবী (সা.) নামে একটি অধ্যায়ই রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর দালায়েলুন নবুয়ত প্রথম খণ্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় ফি মিলাদে রসুলুল্লাহ (সা.) শীর্ষক একটি অধ্যায়ও রয়েছে।


নবীজি (সা.)-এর সাহাবিরাও মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করেছেন।  হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজরত আমির আনসারি (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি রাসুল (সা.) বিলাদাত উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতি- গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে রাসুল (সা.)-এর আগমনের ঘটনাগুলো শোনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রাসুল (সা.) জমিনে তাশরিফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে। তখন রাসুল (সা.) শুনে খুশি হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন। (দুররুল মুনাজ্জাম)।


তাই আসুন, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা নফল রোজা রাখি। দান-সদাকা করি। জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা নবীজির শুভাগমনের আনন্দ শোভাযাত্রা, নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ মাহফিল উদযাপন করি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ছড়িয়ে দিই আমাদের কাজে-কর্মে-আচরণে। পরিবার সমাজ সর্বক্ষেত্রে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসিলায় সারা বিশ্বের মুমিন মুসলিম নর-নারীরদের প্রিয় নবীজি সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।


লেখক- মাওলানা শামীম আহমেদ,

আলোচক,বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা। 


জেবি/এসবি