কলেজ ছাত্রকে ডেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, ২রা অক্টোবর ২০২৩
মহিপুর ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামে মো. রাসেল (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রকে বাড়িতে ডেকে জোর পূর্বক আটক করে বাল্যবিবাহ দেয়ার অভিযোগ করেন ওই কলেজ ছাত্রের বাবা মো. জয়নাল ব্যপারী।
জয়নাল ব্যপারী বলেন, তার ছেলে রাসেল ব্যপারী (১৭) এবং পার্শ্ববর্তী ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর সরদারের নবম শ্রেনীতে পুড়ুয়া মেয়ের সাথে তাদের অজান্তে প্রমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই প্রেমের সম্পর্কের জেরে গত ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় জরুরী কথা শুনতে প্রেমিকার নিজ বাড়িতে রাসেলকে ডেকে পাঠায়।
কিন্তু প্রেমিকার রাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ করে জাহাঙ্গীর সরদারসহ ৪/৫ জন রাসেলকে ধরে নিয়ে তার নিজের বাড়িতে আটক করে রাখে। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার হুকুমে জাহাঙ্গীর সরদারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে (১৪) এর সাথে ওই কলেজ ছাত্রের জোর পূর্বক বল্যবিবাহ দিয়ে ছেলের বাবাকে জানানো হয়।
একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর সূত্রে জানাযায়, এই দুজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীদের বিবাহ রেজেষ্ট্রার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটার কাজী মাওঃ জাহিদুল ইসলাম। ছেলে মেয়ে উভয় শিক্ষার্থী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ছেলের বাবা এই বাল্যবিবাহকে মেনে নিতে পারেনি এবং এই বাল্যবিবাহ কখনো মানবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
জয়নাল ব্যপারী বলেন, এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো। জোর করে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেই ছেলেকে মেয়ের বাড়িতে জরুরী কথা বলে ডেকে আনা হয়েছিলো। আর এই ঘটনার পরিকল্পনার শুরু থেকে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। সেই প্রভাবশালী মহল এই বাল্যবিবাহকে মেনে নিতে ছেলের বাবাকে রিতিমত হুমকি ও বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে চাপপ্রয়োগ করো আসছিলো বলে জানাযায়।
অভিযোগ সূত্রে সরেজমিনে পাওয়া, কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র মোঃ রাসেল (১৭) ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মো. জাহাঙ্গীর সরদারের ১৪ বছরের মেয়ে নবম শ্রনীর ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জানাযায়, ঐ স্কুল ছাত্রী বর্তমানে মিশ্রীপাড়া ফাতিমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
এ বিষয়ে ফাতিমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিন এই ৯ম শ্রনীতে অধ্যায়নরত থাকার কথা নিশ্চিত করেন ও এই বাল্যবিবাহকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ আখ্যয়িত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা মোঃ নাশা মৃধা এই বিয়ের প্রতাক্ষ্যদর্শী ছিলেন। তিনি বলেন কুয়াকাটার জাহিদুল কাজী এই বিয়ে রেজিস্ট্রার করেছেন। স্থানীয় মোঃ মোজাম্মেল কাজী, মোঃ আবুল চৌকাদার ও মোঃ জলিল মৃধা ছিলেন বিয়ের স্বাক্ষী। স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে ছেলে তুলে আনা থেকে শুরু করে কাজী এনে বিয়ে রেজিস্ট্রি সবকিছুই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডালবুগঞ্জ ইউ,পি সদস্য আঃ খালেক হাওলাদার বলেন, তিনি লোক মুখে শুনছেন ছেলে মেয়ের বিবাহ হয়ে গেছে। তাকে এ বিষয়ে কেউ অবগত করেনি বিধায় এর বেশী কিছু জানেন না বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে জানতে কুয়কাটার কাজী মাওঃ জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোন ( ০১৭৩৬ ৩৩৮৩০১) নম্বরে কল দিয়ে গণমাধ্যমের পরিচয় পেয়ে প্রথমে কিছু নাবলেই কলটি কেটে দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ফোন দিয়ে আবারও ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে পূনরায় কলটি কেটে দেয়।
বিশিষ্ঠজনদের মতে, প্রেমিকার পাতানো ফাঁদে প্রমিককে জিম্মি করে মারধর, মোটা টাকার মুক্তিপন ও জোর করে বিবাহ দেয়ার মতো অপরাধ এখন বর্তমান সমাজে অহরহ। যুগল প্রেমের পরিনয় দেয়ার নামে আমাদের চারপাশে প্রায়ই ঘটেই চলছে এমন দণ্ডনীয় অপরাধ। আর এই অপরাধের বলিদান থেকে মুক্তি নেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর, কিশোরী ও শিক্ষার্থীদের, যেটা ভুক্তভোগী পরিবারকে বহন করতে হয় সারাজীবন। এহন অপরাধ থেকে সমাজ থেকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলা দরকার।
রবিবার (১ অক্টোবর) ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রের বাবা নাবালক ছেলেকে জোর করে বাল্যবিবাহ দেয়ার সাথে জড়িত ৭ জনকে আসামি করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আরএক্স/