এখনো বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত মনপুরার লক্ষাদিক মানুষ!


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০২ অপরাহ্ন, ৪ঠা অক্টোবর ২০২৩


এখনো বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত মনপুরার লক্ষাদিক মানুষ!
ছবি: জনবাণী

বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন আর উন্নয়নের ছড়াছড়ি। একসময়ে স্বপ্নের মত অনেকটা কঠিন ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার পুরোপুরি সফল ভাবে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশকে  বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে এখন বাংলাদেশে হাঁটছে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে। সেখানে কিনা এখনো বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত ভোলা জেলা শহরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের একমাত্র উপজেলা মনপুরা। সেই মনপুরা উপজেলার প্রায় লক্ষাদিক মানুষ আজও বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত।


যদিও সরকার সারা বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা করলেও মনপুরা এখনো বিদ্যুতের আওতায় আসেনি। ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত দেওয়ার কথা থাকলেও কেবল মাত্র উপজেলার প্রধান শহর উপজেলার আশপাশের এলাকায় দৈনিক ২ ঘন্টা বিদ্যুত পেয়ে থাকে রাতের বেলায় তাও রুটিন মাফিক। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মনপুরায় জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুত দিয়ে আলোকিত করার জন্য দাবী করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ। বিদ্যুতের অসহনীয় এই লোডশেডিং অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।


২৪ ঘন্টায় জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের দাবীতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন নাগরিক কমিটিসহ সকল শ্রেণির হাজারো মানুষ। সাধারণ মানুষের একমাত্র দাবী জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুত। সৌরবিদ্যুতের আলো মিটমিট করে জ্বলে। এটা কোন শক্তিশালী বিদ্যুত নয়। সাধারণ বিদ্যুত খরচের চেয়ে এই বিদ্যুতের খরচ অনেক বেশী। ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপের একমাত্র উপজেলা মনপুরা যেখানে এখনও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২ ঘন্টা বিদ্যুত রুটিন মাফিক পায়। মুজিববর্ষে ন্যায্যমূল্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পোঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত মনপুরায় জাতীয গ্রীডে বিদ্যুত দিয়ে আলোকিত করার দাবী জানিয়েছেন এখানকার সচেতন মহল।


খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় গ্রাহকদের সুত্রে জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন রাতের বেলায় দৈনিক ৬ ঘন্টা বিদ্যুত দিয়ে আসছে। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় ১হাজার কেভিএ (১ মেঘাওয়াট) উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনটি ভাষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে (নষ্ট) হয়ে যায়। যার ফলে গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা বিদ্যুত বিভাগ। বিকল্প হিসেবে ৬৫০ কেভিএ, ৫০০ কেভিএ ও ৫০০ কেভিএ ৩টি পুরাতন মেশিন চালু করে বিদ্যুত সরবরাহ করলেও তা গ্রাহকের চাহিদা মোটেও পূরণ করতে পারছেনা। ৬ ঘন্টার বিপরিতে মাত্র পার্ট টাইম এলাকা ভিত্তিক ২ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ করে বিদ্যুত বিভাগ। ৩টি পুরাতন মেশিনের মধ্যে ২টি মেশিন আবার নষ্ট হয়ে যায় অতিরিক্ত লোডের কারনে। ১টি মেশিন চালু করে কোন মতে উপজেলার প্রধান বাজার হাজিরহাট বাজার ভাগ ভাগ করে দৈনিক ২ ঘন্টা বিদ্যুত দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। যার ফলে এলাকা এখন পুরো অন্ধকার। কখনও কখনও কোন এলাকায় ২ ঘন্টা বিদ্যুত পায় বাকী এলাকাগুলো অন্ধকারে থাকে। বিদ্যুতের এমন অসহনীয় লোডশেডিং এর কারণে অতিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।


বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের দোকানের ফ্রিজ, টিভিসহ লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিদ্যুত না থাকায় তারা রাতের বেলায় পড়ালেখা করতে বেশ অসুবিধা পড়তে দেখা গেছে। সরকারি কার্যক্রম চালাতেও বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।


উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে সোলার মিনি গ্রিডের বিদ্যুত রয়েছে। সোলার মিনি গ্রিডের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তাও গ্রাহকরা ঠিকমত পাচ্ছেনা। সকলের একটাই দাবী জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুত চাই। 


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মনপুরা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিয়া নিশাত কপি (বাতির) আলোতে খুব কষ্ট করে পড়া-লেখা করছে। হাজির হাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয শ্রেণীর ছাত্র মো. সাঈদ আবদুল্লাহ নিহাল হারিকেনের আলোতে পড়া-লেখা করতে দেখা গেছে। এই চিত্র এখন উপজেলার প্রায় সব বাড়ীতে। ব্যবসায়ীরা সোলার বাতির আলোতে বেচাকিনা করতে দেখা গিয়েছে। বিদ্যুত না থাকায় সবাই কষ্ট করে দিন পার করছেন।


বিদ্যুৎ গ্রাহক কামরুল ইসলাম, মো. বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিদ্যুত পাইনা। অথচ প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। কবে বিদ্যুৎ পাবো তাও জানিনা। 


হাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, আমরা মাত্র রাতের ১০টার সময় ২ঘন্টার জন্য বিদ্যুত পাই। বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দোকানের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের একই অবস্থা। কবে বিদ্যুত পাবো তা বলতে পারেনা বিদ্যুত অফিস।


হাজির হাট মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের কারণে ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছেনা। আমরা তাড়াতাড়ি বিদ্যুতের এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুত চাই।


এব্যাপারে আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস ছালাম বলেন, আমাদের ৩টি মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। ১টি মেশিন দিয়ে আমরা পার্ট টাইম এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুত দিয়ে যাচ্ছি। আমরা মেশিন মেরামতের কাজ করছি। মেশিন ঠিক হলে আমরা আবার আগের মতো বিদ্যুত দিতে পারবো। গ্রাহকদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের আন্তরীকতার কোন ঘাটতি নেই। এ বিষয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।


এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি উপজেলার উন্নয়ন অনেকাংশে বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে। বিদ্যুত না থাকলে উন্নয়ন চোখে পড়েনা। সত্যি কথা বিদ্যুত না থাকায় আমাদের অফিসের কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমি বিদ্যুতের বিষয় জেলাপ্রশাসক মহোদয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের বিষয় যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। আশা করছি দ্রুত বিদ্যুত সমস্যা সমাধান হবে।


আরএক্স/