টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পিরোজপুরের জনজীবন
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, ৫ই অক্টোবর ২০২৩
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে থমকে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় নদীবেষ্টিত জেলা পিরোজপুরের জনজীবন। পেটের দায়ে এই বৃষ্টিতেও প্রতিনিয়তই বাইরে বের হতে হচ্ছে রিকশাচালক, শ্রমিক ও দিনমজুরদের।
বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করলেও অর্ধেকে নেমেছে তাদের আয়। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে হচ্ছে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত। যার প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুরে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে টানা বৃষ্টিপাত।
এমন পরিস্থিতিতেও পেটের দায়ে কাজে বের হয়েছেন শ্রমিক, রিকশা চালক ও দিনমজুররা। অতিরিক্ত বৃষ্টির প্রভাবে তাদের আয় নেমেছে অর্ধেকে। যেখানে আগে প্রতিদিন তারা আয় করতেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা সেখানে তাদের আয় নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
আর যারা অটোরিক্সা ভাড়ায় নিয়ে চালান তাদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। এদিকে পিরোজপুর পৌরসভায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ রিকশা চালিয়ে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বৃষ্টিতে ভিজে হলেও তারা কাজে বের হচ্ছেন তা না হলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। এদিকে এই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে দিনমজুরদের সঙ্গে।
সড়কের পাশেই ছোট ঝুড়িতে শাক-সবজি, পান, দেশীয় ফলসহ নানা জিনিসপত্র সাজিয়ে বসেন ভ্রাম্যমাণ এসব বিক্রেতারা। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা তাদের টাটকা কৃষি পণ্য বিক্রি করে যেখানে সংসার চলতো তাদের, সেখানে টানা বৃষ্টির কারণে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা মূল খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
রিকশাচালক সোহেল আকন বলেন, রোদ বা বৃষ্টি যে অবস্থাতেই থাকি না কেন রিকশাচালাতে বের হতেই হয়। কারণ দিনশেষে পেটের দায়েই রাস্তায় নামতে হয় উপার্জনের জন্য। বর্ষায় তো ভিজেই গাড়ি চালাতে হয় তবুও বৃষ্টি থাকলে তো আয় ইনকাম খুবই কম হয়।
আবহাওয়া ভালো থাকলে ইনকাম একটু হয়। আরেক রিকশাচালক রাকিব ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন আমাদের ইনকাম হয় না বললেই চলে। যা হয় তাতে চলতেই কষ্ট হয়। লোকজন রাস্তায় বের হয় না। আগে যে ইনকাম হতো তার তিন ভাগের এক ভাগও এখন হয় না।
তবুও পরিবারের কথা চিন্তা করে বৃষ্টিতে ভিজে হলেও রাস্তায় নামতে হয়। দিনমজুর নাসির মৃধা বলেন, বৃষ্টি বাদলের কারণে আমরা যে শাকসবজি নিয়ে আসি তা ঠিকমতো বিক্রি করতে পারি না। লোকজন ঘর থেকে বের হয় না। চালকুমড়া-বেগুনসহ বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে এসেছি।
ব্যবসার মূল টাকা কখনো ওঠে আবার বেশিরভাগ সময়ই ওঠে না। পিরোজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শহিদুল ইসলাম শিকদার বলেন, পিরোজপুর পৌরসভায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করেন। যাদের বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে স্বল্পমূল্যে টিসিবি এবং ওএমএস এর পণ্য প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
এছাড়া পিরোজপুর পৌরসভার পক্ষ থেকেও তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। জেলা কৃষি অবস্থার পরিস্থিতি জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, বর্তমান সময়ে কৃষি ক্ষেত্রে জেলায় বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
তবে বেশি বৃষ্টি হওয়ার ফলে পানি স্থায়ী হলে জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সর্বিক খোঁজ-খবর রাখছি।
আরএক্স/