রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যার সমন্বয়ক নুর কামাল গ্রেফতার


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:২০ অপরাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২৩


রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যার সমন্বয়ক নুর কামাল গ্রেফতার
আরসা’র কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল

বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারি ও সরাসরি অংশগ্রহণকারি এবং আরসা’র কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনকে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব; যার বিরুদ্ধে সীমান্তে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী যৌথ অভিযানে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকেও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।


সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার রাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান তিনি।


গ্রেফতার নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন (৪৮) উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। সে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্রসহ নানা অভিযোগে উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ১৫ টির বেশী মামলা রয়েছে।


র্যাব জানিয়েছে, নুর কামালের নেতৃত্ব রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ২০ জনের একটি কিলার গ্রুপ রয়েছে। যে কিলার গ্রুপটি রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিল। মুহিবুল্লাহকে প্রথম তিনিই প্রথম গুলি করেন এবং হত্যা মিশন শেষে ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়।


এছাড়া গত বছর মধ্য নভেম্বরে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী যৌথ অভিযানে সশস্ত্র হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায়ও সে অংশগ্রহণ করেছিল।


সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, রোববার রাতে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার গহীন পাহাড়ের গোপন আস্তানায় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামি এবং আরসা’র কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন অস্ত্রধারী লোকজন অবস্থান করছে খবরে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৪/৫ জন সন্দেহজনক লোক পালানোর চেষ্টা চালায়। এসময় ধাওয়া দিয়ে নুর কামালকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও অন্যরা পালিয়ে যায়।


“পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালিয়ে পাওয়া যায় বিদেশি ১ টি পিস্তল, দেশিয় তৈরী ৬ টি বন্দুক ও ১৩ টি বিভিন্ন ধরণের গুলি।”


র্যাব সদর দপ্তরের এ পরিচালক বলেন, “ মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনীর নির্দেশে কিলার গ্রুপের ১৫ জনের বেশি সদস্য রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিল। হত্যাকান্ডটি সংঘটনের দুইদিন আগে পার্শ্ববর্তী একটি ক্যাম্পে একটি গোপন সভা হয়। ওই সভায় হত্যার মিশনে অংশগ্রহণকারিদের দায়িত্বও সে বন্টন করে। এছাড়া ঘটনায় প্রথম যে তিনজন মুহিবুল্লাহ’র অফিসে প্রবেশ করে তাদের একজন ছিল সে। আর মুহিবুল্লাহ’কে লক্ষ্য করে সে-ই প্রথম গুলি করে। “


“শুধু তা-ই নয়, সীমান্তে আইন শৃংখলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে সশস্ত্র হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায়ও সে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝি শফিক, জসিম, সেলিম, নুর বশর, সালাম, কালাবদা, সলিম, রহিমুল্লাহ ও খালেদ সহ আলোচিত সিক্স মার্ডারের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।”


গ্রেফতার নুর কামালের সঙ্গে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনীর নিয়িমিত যোগাযোগ রয়েছে এবং আরসা প্রধান প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে অবস্থান করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য জানান খন্দকার আল মঈন।


তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এবং আশপাশের এলাকায় নানা অপরাধ সংঘটনে নুর কামাল নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। সীমান্তে মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালানের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজী, মুক্তিপণ আদায় ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধ তার নির্দেশেই সংঘটিত হতো। পরে অপরাধ সংঘটনের পর সে পার্বত্য জেলার গহীন পাহাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করতো। তার সঙ্গে স্থানীয় অপরাধীদেরও যোগসাজশ রয়েছে। “


গ্রেফতার নুর কামালের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।


আরএক্স/