৭ মার্চের ভাষণ যুগ যুগ ধরে মানুষকে প্রেরণা দিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিকে যুগে যুগে প্রেরণা দিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সোমবার (৭ মার্চ) সংস্কৃতি
বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির
স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা
দিয়েছিল। একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করার এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একদিকে আমরা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি
হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩টি বছর যে শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল বাঙালি জাতি যে অত্যাচার নিপীড়ন
সহ্য করেছিল, নিজের অধিকারে কথা বলতে গিয়ে গুলি খেয়ে জীবন দিয়েছিল, সেই কথাগুলি তিনি
ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে ঠিক ওই মুহূর্তে কী কী করণীয়, সেই নির্দেশনাও জাতিকে তিনি
দিয়েছিলেন। অর্থ্যাৎ অসহযোগের যে আন্দোলনের ডাক দেন বাংলাদেশের মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে
পালন করেছিল।
১৫ আগস্টের পর ৭ মার্চের ভাষণ
নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর এই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার
বিকৃত ইতিহাস শুনেছে। আর ২১ বছর ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লাখো শহিদের রক্ত দান,
আমাদের সংগ্রাম সবকিছু ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে এটা প্রমাণিত
সত্য যে সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। আর ৭ মার্চের ভাষণেই তো জাতির পিতা বলে
গেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। তাই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই।
সব বাধা পেরিয়ে ৭ মার্চের ভাষণ
এখন বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর
ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য যত ভাষণ দেওয়া হয়েছে, তার কোনোটাই কিন্তু পুনরাবৃত্তি হয়নি
কখনো। যেদিনের ভাষণ সেদিনেই এটা শেষ হয়েছে। কিন্তু এই ভাষণটা আজকের আমাদের স্বাধীনতা
অর্জনের ৫০ বছর। এই ৫০ বছর পর্যন্ত কিন্তু এই ভাষণটা বারবার আমাদের প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।
কেউ হিসাব করে বের করতে পারবে না, কত ঘণ্টা কত মিনিট কত দিন এই ভাষণটা বাজানো হয়েছে।
এটার হিসাব করাটাই হবে একটা কঠিন ব্যাপার। যুগ যুগ ধরে এটাকে আমরা শুনছি এবং বাজানো
হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যতই
বাধা দেয়া হয়েছে, ততই যেন এই ভাষণটা আরও উদ্ভাসিত হয়েছে। এখনো এই ভাষণ আমাদেরকে অনুপ্রেরণা
দেয়। যে ভাষণের প্রতিটি লাইনই হচ্ছে এক একটা যেন কবিতার অংশ। যা মানুষের ভিতরে, অন্তরে
একটা অন্য অনুভূতি নিয়ে এসে দেয়, প্রেরণা দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে
মুক্তিযোদ্ধারা যখন যুদ্ধ করেছে, এই ভাষণটাই ছিল তাদের প্রেরণা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্র থেকে এটা নিয়মিত এই লাইন বাজানো হতো। জাতির পিতা তার ভাষণ শেষ করেছেন জয় বাংলা
স্লোগান দিয়ে। বাঙালির জয়, বাংলাদেশের জয়, বাংলার মানুষের জয়। এই জয় বাংলা স্লোগানটা
প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা যখনই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, শত্রুকে আঘাত করতে গেছে, এই জয় বাংলা
স্লোগান দিয়েই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখনই ভাষণ দিতে যাবেন তখন
অনেক রাজনৈতিক দল, অনেক ছাত্রনেতা পরামর্শ দিতে থাকে যে, কী করা উচিত। কয়েকটা ছাত্রনেতা
তো বলেছিলেন যে আজ সরাসরি তো স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে। না হলে তো মানুষ হতাশ হয়ে
যাবে এমনটাও বলেছিল। আমাদের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী অনেকে অনেক পয়েন্ট লিখে দিয়ে গেছেন।
অনেকেই পরামর্শ দিয়ে গেছেন। আমাদের বাসাটা তখন উন্মুক্ত ছিল। সকলের জন্য খোলা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমার আব্বাকে আমার মা একটা কথাই বলেছিলেন, সারাটা
জীবন তুমি সংগ্রাম করেছে এদেশের মানুষের জন্য। তুমি জানো এদেশের মানুষের জন্য কোনটা
ভালো। তোমার মনে যেটা আসবে তুমি ঠিক সেটাই বলবা। তোমার কারো কথা শোনার প্রয়োজন নাই।
আজ আপনারা যে ভাষণটা দেখেন তার (বঙ্গবন্ধুর) কাছে কিন্তু কোন কাগজ নাই, কিছু নাই। তিনি
একাধারে বঞ্চনার ইতিহাস পড়ে যাচ্ছেন।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে
আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু
মনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
ওআ/