টেকনাফে অপহরণ

২ লাখ টাকা মুক্তিপণে ৫ দিন পর ছাড়া পেলেন সোনা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৯ অপরাহ্ন, ২৩শে অক্টোবর ২০২৩


২ লাখ টাকা মুক্তিপণে ৫ দিন পর ছাড়া পেলেন সোনা
মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত সোনা আলী। ছবি: জনবাণী

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় থেকে মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ব্যক্তি সোনা আলী (৪৭) ৫ দিন পর সোমবার সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেছেন। সন্ত্রাসীদের দাবি করা মুক্তিপণ বাবদ ২ লাখ টাকা পরিশোধের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ।


সোনা আলী বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামের নাজির হোসাইনের ছেলে এবং তিনি একজন পান বরজের চাষী। বৃহস্পতিবার সকালে সোনা আলী পানবরজে কাজ করতে যান। হঠাৎ মুখোশধারী কিছু লোক অস্ত্রের মুখে তাঁকে জিম্মি করে। তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে সোনা আলীকে নিয়ে গহিন পাহাড়ে দিকে চলে যায়।


বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ জানান, সোমবার অপহৃত সোনা আলীর ভগ্নিপতি নুরুল আমিনের মোবাইলে ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় তাকে   ছেড়ে দেয়া হয়।


ফরিদ উল্লাহ  বলেন, বিকেলের দিকে একজন কিশোরকে ওই টাকাসহ পাহাড়ের ভিতর পাঠানো হয়। পাহাড়ের জিরির পাশে পাথরের উপর টাকাগুলো রেখে চলে আসেন কিশোরটি। এর কিছুক্ষণ পরে সন্ত্রাসীরা সোনা আলীকে ছেড়ে দেন। যদিও এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃতের স্ত্রী সখিনা খাতুন বাদি হয়ে অঞ্জাতনামা ১৪-১৫জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় একটি অভিযোগ দায়ে করেছেন।


ফেরত সোনা আলী জানিয়েছেন, ঘরের মোবাইল নম্বর জানা না থাকায় তাকে প্রচুর মারধর করেছে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা। পরে তারা ভগ্নিপতি নুরুল আমিনের মোবাইল নাম্বার জোগাড় করে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। টাকার জন্য প্রচুর মারধর করা হয়েছে। তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রয়েছে।


ফেরত আসা চাষীর স্ত্রী ছখিনা খাতুন বলেন, তাকে (সোনা আলী ) প্রচুর মারধর করা হয়েছে। তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার নেয়া হয়েছে।


বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, অপহৃত ব্যক্তির স্ত্রী বাদি হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করার জন্য কয়েকটি স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছিলেন। তবে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসার বিষয়ে তারা পুলিশকে কোন কিছু অবহিত করেননি।


এদিকে, রবিবার রাত ১০ টার দিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীয়াপাড়ার (খামারপাড়ার) পাহাড়ের পাদদেশে বসতঘর থেকে বাহির হয়ে প্রশ্রব করতে গেলে অপহরণের শিকার হন আবুল হাশেম (২২) নামের আরও এক যুবক।


তিনি উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীযাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিমের ছেলে।


বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওযার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, অপহৃত যুবক আবুল হাশেম আমার চাচাত ভাইয়ের ছেলে। সে টেকনাফ পৌরসভার একটি খাবার পানি সবরবাহ প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন। সে সন্ধ্যায় টেকনাফ থেকে বাড়িতে আসেন। রাতে ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাবার আগে প্রশ্রব করার জন্য ঘর থেকে বাহির হলে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রেরমূখে তাকে জিম্মি করে টেনেহিঁচড়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাবার সময় সে চিৎকার করে উঠেন। এসময় বাড়ির লোকজন বাহির হয়ে টচ লাইটের আলোতে দেখতে পান মুখোশধারী কিছু লোকজন হাশেমকে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সোমবার (সন্ধ্যা ৭ টা) অপহরণকারিদের হয়ে কেউ ফোন করেনি।


জানতে চাইলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তিনি অপহরণের বিষয়টি শুনেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়েছে।


এই ২ জন ছাড়া ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ এর ৯ অক্টোবর পর্যন্ত শুধু মাত্র টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা ঘটে ১২৯ টি। যার মধ্যে ৬৮ জন স্থানীয় এবং ৬১ জন রোহিঙ্গা। যেখানে ২৯ জন মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের কোন তথ্য পাওয়া না গেলে অপর ১ শত জন সকলেই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করে আসছে।


আরএক্স/