২৫০ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ বৌদ্ধ জাদি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৪৩ অপরাহ্ন, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৩


২৫০ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ বৌদ্ধ জাদি
রাখাইন ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন। ছবি: জনবাণী

রাখাইন ঐতিহ্যের প্রাচীন নিদর্শন কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের খাপড়াভাঙ্গা বৌদ্ধ জাদি (প্যাগোডা)। এটি এই এলাকার প্রাচীন একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের ২৫০ বছর পূর্বে এদেশে আগমের ইতিহাসের সাথে খাপড়াভাঙ্গা বৌদ্ধ জাদি (প্যাগোড়া) জড়িত। 


আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, রীতিনীতি, ঐতিহ্যের লালন ও বিকাশ সাধনে ঐতিহ্যবাহী খাপড়াভাঙ্গা বৌদ্ধ জাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই বৌদ্ধ জাদিটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চলের ইটের প্রথম স্থাপত্য পুরানকীর্তি। এটির উচ্চতা ৪৭ ফুট ও প্রস্থ ১৭ ফুট ২ ইঞ্চি। অযত্ন অবহেলার কারণে জরাজীর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন এই বৌদ্ধ জাদির চারিদিকের দেয়ালে প্লাষ্টারসহ ইটের গাঁঠুনি খসে পড়েছে। জাদির দেয়ালের প্লাস্টার ভেঙ্গে বেড়িয়ে পড়েছে লাল ইটের গাঁথুনি, পুরানো ইটের সুরকিগুলো উড়ে যাচ্ছে। জাদিটির চারিদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকার কারনে প্রতিনিয়ত গৃহপালিত পশুদের চরণভূমিতে পরিণত হয়েছে।


২৫০ বছরের পুরানো এই জাদিটির সঠিক তথ্য জানেনা  এই এলাকার বাসিন্দারা তাদের ধারণা নেই এই জাদি নির্মাণ সম্পর্কে। তারা বলছেন তাদের বাপ দাদারাও জানেনা এটা কবে নির্মাণ হয়েছে। ফোরকান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন আমার দাদায় এসে এই জাদিটি দেখেছে কবে কারা নির্মাণ সেটা জানেনা।


২০০৮ সালে রাখাইনরা লঞ্চ ট্রলার যোগে এখানে এসে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করলেও বেশ কয়েক বছর ধরে আসছেনা রাখাইনরা। এটা সংস্কার করতে পাড়লে আবারও রাখাইনরা আসবে এখানে।


প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় অফিসের একটি টিম ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই এলাকার বৌদ্ধ জাদিটি পরিদর্শন করে চূড়ান্ত একটি প্রতিবেদন প্রস্তাবনা আকারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। টিমের প্রধান খুলনা অফিসের সহকারী গবেষক গোলাম ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ছিল রাখাইন জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ দেয়া হয়েছে এবং  ২০১৯ সালে পটুয়াখালী পুরাকীর্তি জরিপে ও অনুসন্ধান চলাকালে এই মন্দিরটি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । তিনি মনে করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার সংস্কৃতিক নিদর্শন হিসাবে একে যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষন করা হলে পর্যটন সমৃদ্ধ কুয়াকাটার পর্যটনের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে ।


কুয়াকাটা থেকে ১২ কিঃ মিঃ দূরে এই জাদিটির অবস্থান, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার থেকে মাত্র ৪ কিঃ মিঃ দূরে থাকলেও প্রচারের অভাবে এই ঐতিহ্যবাহী জাদিটি কেউ দেখতে আসেনা।


পরিত্যক্ত জাদিটি পরিস্কার পরিছন্ন করছেন মচোংথির তালুকদার, তিনি বলেন, আমি এটা বেশ কয়েকবার পরিস্কার পরিছন্ন করেছি এখন গাছের ডালপালা কেঁটে পরিস্কার রাখছি।


খাপড়াভাঙ্গা বৌদ্ধ জাদিটি অতি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও সংরক্ষন করতে পাড়লে এখানে পর্যটকদের আসবে পরিবর্তন ঘটবে এই এলাকার রাস্তাঘাটের।


কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই জাদিটি সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে জানলাম খোঁজ নিয়ে অতিদ্রুত  সংস্কারের জন্য অবেদন করবো এই উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করবে সব সময়।


আরএক্স/