খোঁজ মিলছে না ভোলার মনপুরার মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০ জেলের!


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১৭ অপরাহ্ন, ৫ই নভেম্বর ২০২৩


খোঁজ মিলছে না ভোলার মনপুরার মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০ জেলের!
ছবি: জনবাণী

ভোলার  মনপুরা থেকে এফবি রিনা-১ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার ২২ অক্টোবর ২৩ তরিখ থেকে ২০ জন জেলে ও মাঝিসহ গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায় ১২ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। 


পরিবারের মুখে দু-বেলা তিন মুঠো ভাত তুলে দিতে জীবন বাজি রেখে গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরতে গিয়ে ২০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। 


শনিবার (৪ নভেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন এফবি রিনা-১ ট্রলার মালিক মো আক্তার হোসেন। তিনি আরও জানান,প্রায় ১২ দিন ধরে তাদের কোন হদিশ বা সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যা নিয়ে তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে এখন দেখা দিয়েছে গভীর শঙ্কা ও চরম হতাশা। অনেকেই ধারণা  করছেন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পরে গভীর বঙ্গোপসাগরের তলিয়ে গেছে তাদের মাছ ধরার সেই এফবি রিনা- ১ নামের ট্রলারটি।


নিখোঁজ জেলেরা হলেন, এফবি রিনা-১ ট্রলারের মাঝি জাহাঙ্গীর (৪০), তিন সহোদর শেখ ফরিদ (৫৫), সিদ্দিক (৪৫) ও শামীম (২৩) জেলে আলাউদ্দিন (৫৬), আবুল খায়ের (৬৫), বাতেন (৪০), ইয়াসিন (৩৫), জয়নাল আবেদীন (৭০), মিলন (৩৫), ইসলাম আলী (৫৫), ফিরোজ (৪৫), সোহাগ (৪৫), অলিউদ্দিন (৪১), সোহাগ আখন (৩৬), সুমন (৩০), আবুল কালাম (৬৪), আজাদ (৩৫), ইয়াকুব আলী (৬০), নুর সর্দার (৫৫)। সবার বাড়ি মনপুরা উপজেলার দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে পরিবারের সকলের ভরণপোষণের জন্য গত ২২ অক্টোরব সাগরে রাতের আধারে অন্যান্যদের মতো করে মাছ শিকারের ট্রালার গুলোর সাথে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা দক্ষিণ সাকুচিয়া জনতা বাজার লঞ্চঘাট হতে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আমির হোসেন এর ছেলে মোঃ আক্তার হোসেন মাঝী মালিকানাধীন ইঞ্জিন চালিত এফবি রিনা-১ ট্রলারটি মোট ২০ জন জেলে মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও গত ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুন এর প্রভাবে অন্যান্য মাছ শিকারের ট্রলার গুলো উপকূলে আসলেও ঔ ট্রলাটি এখনো উপকূলে আসেনি। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে ঔ ট্রলারটির কারো সাথে এখনো পর্যন্ত কোন যোগাযোগ বা খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।


এর আগে (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এফবি রিনা-১ ট্রলার মাঝি জাহাঙ্গীর এর সাথে অন্যান্য মাঝির সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। এ সময় জানায় যে তারা ড্রাম বয়ার কাছে মাছ শিকার করছে। পরদিন ঘূর্ণিঝড় হামুর প্রভাব শুরু হলে তাদের সাথে মোবাইল ফোনে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এদিকে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজে ট্রলার মালিক আক্তার হোসেনের ভাই আবুল ও মনির এর দু’টি মাছধরা ট্রলার সমুদ্র চষে বেড়াচ্ছে। দশদিন অনুসন্ধান শেষে বৃহস্পতিবার সকালে ট্রলার দু’টি জনতা ঘাটে ফিরে এসেছে বলে এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনতা। নিখোঁজ এর ঘটনায় (৩ নভেম্বর) মনপুরা থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন এফবি রিনা-১ এর মালিক আক্তার হোসেন।


স্বাভাবিকভাবে ৬/৭ দিনের মধ্যে মাছ ধরে কূলে ফিরে আসার নিয়ম থাকলেও ১২ দিনেও ট্রলারসহ জেলেরা ফিরে না আসায় তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 


নিখোঁজ ট্রলার এর পাশে থাকা শিপন মাঝি জানান, সাগরে বাতাস যখন বাড়ছে তখন রেডিও ওপেন করে শুনি সাত নাম্বার বিপদ সংকেত চলে। সাথে সাথে নিখোঁজ ট্রলার জাহাঙ্গীর মাঝির কে বলে জাল টানা শুরু করি। পরে আমার জাল টেনে ঘাটে দিকে চলে আসি। পিছন থেকে আর সে ট্রলাটি দেখা পাই নি। তবে অনেকের ধারণা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় হামুর প্রভাবে সাগরে ট্রলারটি ডুবে যেতে পারে। উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া বিভিন্ন আড়তঘাটে অপেক্ষা করছেন নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা। 


এ বিষয়ে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ সম্পর্কে মালিক পক্ষের কাছ থেকে জানতে পারলাম। নিখোঁজ জেলেদের খুঁজে পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং সারা বাংলাদেশে আমাদের পক্ষ থেকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে।


আরএক্স/