মুরাদনগরে শিশুশ্রমের প্রভাবে হুমকির মুখে স্বর্ণালি শৈশব


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, ৮ই নভেম্বর ২০২৩


মুরাদনগরে শিশুশ্রমের প্রভাবে হুমকির মুখে স্বর্ণালি শৈশব
রামচন্দ্রপুরে চায়ের দোকানে কেটলি হতে চা দিচ্ছে কোমলমতি শিশু জুবায়ের। ছবি: জনবাণী

রং চা হবে পিচ্চি, কত টাকা করে কাপ? বলতেই ওপাস থেকে ক্ষুদে কণ্ঠে উত্তর ভেসে আসলো রং চা ৫টাকা কাপ। পড়াশোনা করেছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। বয়সটি প্রাথমিক শিক্ষার হলেও পেটের তাগিদে বাবার সাথে ছোট বয়সেই সামলাতে হয় চায়ের দোকান। রামচন্দ্রপুরে ভাড়ায় দেওয়া সড়কের পাশে দোকনটির জন্য মাসে গুনতে হয় ১০০০টাকা। প্রতিদিন ইনকাম হয় দেড় থেকে দুইশত টাকা। বলছিলাম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের সাদেকের ছেলে শিশু জুবায়েরের কথা।


শিশুদের পড়াশোনার বয়সে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে জড়িয়ে পড়ছে কায়িক শ্রমের দিকে। শিশু বয়সে পড়াশোনার প্রতি কম-বেশি সকলেরই উদাসীনতা কাজ করে। শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে আদর স্নেহ করে। খেলাধুলার বয়সে কাজে প্রবেশ করানোতে নষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের শৈশব। তৈরী হচ্ছে আহত কিংবা বিকলাঙ্গ হবার ঝুঁকি।


পথিমধ্যে দেখা মিলে দুইজন অটোচালকের সাথে। বয়স বারো থেকে তেরো বছরের উর্ধ্বে নয়। স্কুলে যেতে ভালো লাগে না, কেউ পেরুতে পারেনি প্রাথমিকের গণ্ডি। তাই অটোরিকশা চালিয়ে ইনকাম করছে টাকা। বড়দের গাড়ী চালানোতে প্রায়শই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনা। 


সেখানে শিশুরা গাড়ী চালিয়ে সড়কে ছুটে বেড়ায় যাত্রী নিয়ে, তৈরী হয় জীবনঝুঁকি। খেলাধুলার বয়সে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছতা ফেরাতে নেমে গিয়েছে রাস্তায়। শুধু রামচন্দ্রপুর নয়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেরুলো নজরে পরবে এজাতীয় অহরহ শিশুশ্রমের দৃশ্য।


শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈশবকে সোনায় মুড়িয়ে জ্ঞান লাভের আশায় প্রাথমিকে শতভাগ শিশু পড়ার কথা। পারিবারিক ভুল ধারণাসমূহ শিশুদের শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সবার জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা আছে। তারপরেও শিশুদের দিয়ে কায়িকশ্রম করানো দুঃখজনক। এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক সহ সর্বস্তরের মানুষদের সম্মিলিত এগিয়ে আসতে হবে এসব শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুখী করতে। যদি সম্ভব না হয়, তখন তারা একটা পর্যায়ে মাদক সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পরবে। তাদের মাঝে থাকবেনা বিন্দুমাত্র নৈতিক শিক্ষাটি।


সার্ক মানবাধিকার সংগঠনের কুমিল্লা উত্তর জেলার সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, শিশুশ্রম তাদের সুন্দর জীবনকে ঢেলে দেয় বিপদের মুখে। সকলের সম্মিলিত কাউন্সিলিং পারবে জনসচেতনতা তৈরী করতে। 


বর্তমানে পৃথিবী অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে শিশুশ্রম নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। মানুষের অসচেতনতা ও বাবা-মায়ের সঠিক শিক্ষার অভাবেই তারা শিক্ষার আলোতে নিজেদের সন্তানদের আলোকিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না।


আরএক্স/