রাজধানীতে অবরোধ উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, ১৩ই নভেম্বর ২০২৩
শাহাদাৎ হোসেন লাভলু: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ ধাপের ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এদিকে অবরোধ চলমান থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাজধানীর গাবতলী, ফার্মগেট, চিটাগাং রোড, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, মতিঝিল, বাংলা মটর থেকে যানবাহনের চাপও বেড়েছে।
অবরোধ উপেক্ষা করে রাজধানীর আমিনবাজার, আশুলিয়া, সাভার নবীনগর গাজীপুরসহ কর্মজীবীরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে শুরু করেছেন।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর সড়কে চলছে গণপরিবহন, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল। পাশাপাশি এই এলাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা ও অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। সাইনবোর্ড যাত্রাবাড়ী থেকেও স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ শুরুর আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টা থেকে সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ৬টা (অবরোধের আগের রাত) পর্যন্ত মোট ১২টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। ঢাকা সিটিতে ১০ টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ১টি, বরিশাল বিভাগ(বরিশাল সদর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০টি বাস, ১টি পিকআপ পুড়ে যায়। এ অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ২১টি ইউনিট ও ২০১ জন জনবল কাজ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং আজমপুর, গাবতলী থেকে গুলিস্থান, জসিমউদদীন ও বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন অলিগলিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের লোকজন অবস্থান নিয়েছে। যাতে এই এলাকায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। সড়কে যাতে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করতে পারে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা হাউজবিল্ডিং, আজমপুর, বিমানবন্দর সড়কে যানবাহনের চাপ থাকতে দেখা গেছে। সড়কে যাত্রীদের সংখ্যাও বেড়েছে।
সাইনবোর্ড এর খুদে দোকানে শরিফুল ইসলাম বলেন আমরা ফুটপাতে ব্যবসা করে খাই ডর ভয় করে এই অবরোধের জন্য কিন্তু কি করব পেট তো থামে না তাই জীবনের ফুটপাতের পারে পেপা বিক্রয় করে সংসার চালায়।
প্রেসক্লাব এলাকায় রিক্সা চালক আজিবুর রহমান বলেন, আমি বরিশাল থেকে এসেছি ঢাকাতে রিক্সা চালাচ্ছি। দুই বছর যাবত অবরোধের কারণে মানুষজন বাহিরে বের হচ্ছে কম। তাই এখন আমার রিক্সায় আর আগের মত রোজগার করতে পারিনা। এখন আমার সংসার চালাতে গায়ে বেধে যাচ্ছে।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা ফারহান সাদিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বলেন, অবরোধ দিয়েছে, কিন্তু এই অবরোধে সাধারণ মানুষের জীবন নাজেহাল। আমাদের কাজ করে খেতে হয়। অফিসে না গেলে সেলারি কাটবে। আর অবরোধে যে বাসে উঠবো সেটাও ভয় লাগে। কারণ বাসে আগুন দিয়ে যাচ্ছে অবরোধ সমর্থনকারীরা।
ফার্মগেট ফুটপাতে পিঠা বিক্রয়তা আব্বাস আলী বলেন অবরোধের আগে তুলনায় এখন আমার পিঠা বিক্রয় কম হচ্ছে কারণ সেভাবে আর মানুষজন বাহিরে আসছে না আর না আসার কারণে আমি মনে করছি আমার বিক্রয় কম হচ্ছে এতে আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে আমাদের সংসারের খরচ যোগাতে হয়। এসব অবরোধ পাত্তা দিলে সংসার চলবে না-যোগ করেন তিনি।
মহাখালী বাস টার্মিনালের সহ-সভাপতি মৃধা বলেন, অবরোধের কারণেই দুর্বৃত্তরা সুযোগ বুঝে বাসের ভিতরে উঠে পাউডার তাকেও ছিটিয়ে দিচ্ছে কিছুক্ষণ পরে বাসে আগুন লেগে যাচ্ছে কিন্তু আমরা আমাদের মালিক শ্রমিকের পক্ষ থেকে সকল বাসের স্টাফদের বলে দিয়েছি বাসে যখন যাত্রী উঠবে তাকে সকল প্রকার চেক করেবে তারপরেও যেন দুর্বৃত্তরা বাসের ভিতর প্রবেশ করে বাসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে এতে আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং আমাদের বাসের স্টাফদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা হয়ে পড়তে হচ্ছে।
আশুলিয়া গার্মেন্টস শ্রমিক আশিবুল ইসলাম বলেন, ভাই চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছি দুই বছর হয়ে যাচ্ছে গার্মেন্টসে কাজ করি কিন্তু এই অবরোধের কারণে বাহিরে বের হতে পারছি না জীবনের রিক্স নিয়ে বাহিরে বের হয়ে কখন যেন ঘরে ফিরবো এটা বলতে পারিনা রাজধানীতে অবরোধের কারণে বাস প্রাইভেটকারে ছুড়াছুড়ি কখন নিচের গায়ে লেগে মারা যাবো নিজেই বুঝতে পারি না।
গাজীপুর পরিবহনের চালক শাহাদাত হোসেন, সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার। এই দিন যাত্রীর অনেক চাপ থাকে। কিন্তু অবরোধের কারণে যাত্রী খুব বেশি নাই। আমাদেরও পেট চালাইতে হয়। অবরোধে গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের লস। আবার ভয় লাগে, যদি গাড়িতে আগুন দেয় তবে আরও বিপদ। এই ঝুঁকিতেও গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কারণ একদিন বসে থাকলে কেউ তো আমাকে খাওয়াবে না।
অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে রাজধানীতে যাতে কোনো নাশকতা না ঘটে সেজন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো রাজধানীতে র্যাব-পুলিশের টহল রয়েছে। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাজধানীতে টহল দিচ্ছে র্যাবের পর্যাপ্ত সদস্য। এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরাও টহলে রয়েছেন। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুনসহ সারাদেশে ১৫২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এদিকে জনজীবন স্বাভাবিক রাখা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র্যাব ফোর্সেস নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ”
তিনি বলেন, “দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে দেড় শতাধিকসহ দেশব্যাপী র্যাব ফোর্সেস এর ১৫টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৪শ টহল দল নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ যদি কোন ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতার পরিকল্পনা করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
জেবি/এসবি