উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের তুলে দিয়ে বসলেন জাবি ছাত্রলীগ
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৫৩ অপরাহ্ন, ১৪ই নভেম্বর ২০২৩
রহমান সজীব: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ৬টি হল ও একটি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে এসব স্থাপনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষগণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুইজন শিক্ষকে উঠিয়ে দিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বসানোর ঘটনা ঘটেছে।
অনুষ্ঠান শুরুর ২৪ মিনিট পর প্রায় ২০জন নেতাকর্মী সমেত অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। ততক্ষণে অডিটোরিয়াম ভবন অতিথি দিয়ে ভরে যায়।
পরিপূর্ণ হলরুমে জায়গা না পাওয়ায় ক্ষেপে যান হাবিবুর রহমান লিটন। এসময় তাদের শান্ত করতে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত হোন। এসময় প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের সাথে কথা কাটাকাটি হলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রক্টর তাদের নিয়ে অডিটোরিয়ামের বাইরে যান। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী স্লোগান দিতে শুরু করেন। পরে প্রক্টরের অনুরোধ স্লোগান বন্ধ করেন তারা৷
অডিটোরিয়াম ভবনের সামনে গিয়ে প্রক্টরের সাথে আরেক দফায় বাকবিতন্ডায় জড়ান জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার অনুসারীরা।
এসময় সহ-সভাপতি পদমর্যাদার এক নেতা অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অডিটোরিয়াম ভবনে তালা দেয়ার হুমকি দেন। ঐ নেতা বলেন, আমাদের জন্য জায়গা রাখা হয়নি, আমরা তাহলে অডিটোরিয়ামে তালা দিয়ে চলে যাই।
এর কিছুক্ষণ পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হোন শাখা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে তৃতীয় সারিতে বসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও দর্শন বিভাগের দুই প্রভাষককে তাদের জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান। পরে শিক্ষকদের যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম সারির আসনে বসানো হয়। শিক্ষকদের তৃতীয় সারির আসনে শাখা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে বসানো হয়।
পরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পূর্বেই ঐ দুই শিক্ষককে অডিটোরিয়াম হল ত্যাগ করতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণকে ‘অশোভন’ ও শিক্ষকদের জন্য ‘লজ্জাকর’ বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত শিক্ষকরা। জীববিজ্ঞান অনুষদের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, এমন জাঁকযমক পূর্ণ প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের এমন আচরণ খুবই অশোভন। ভরা মজলিসে দুইজন সম্মানিত শিক্ষককে তুলে দিয়ে সেই জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাদের বসানো শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজনক ও লজ্জার। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটা অনুষ্ঠানে অধ্যাপকদের চিঠি দিয়ে দাওয়াত করা হয়নি। পূর্বে এরকম কোন ঘটনার নজির নেই। প্রশাসন সম্ভবত বিরোধীমত পোষণকারীদের ভয় পায়, তাদের উপস্থিতিতে অস্বস্তিবোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেক অধ্যাপক বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম সারিতে জায়গা যখন ফাঁকাই ছিল তখন ছাত্রলীগ নেতাদের সেই আসনে বসানো যেতো। দুইজন শিক্ষককে তুলে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাদেরকে তুলে দিয়ে শিক্ষক সমজকে নিচু করা হয়েছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা ছাত্রলীগকে আগে আসতে বলেছিলাম। আগে আসলে এই ঘটনা ঘটতো না। সকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দাবি করেছিল যে স্ক্রীনে যাতে সভাপতি-সেক্রেটারিকে দেখা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সারিতে বসতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার ওখানে অনুরোধ করার মত জুনিয়র ঐ দুজনই (শিক্ষক) ছিল। আর অন্য কাউকে অনুরোধ করার কোন সুযোগ ছিল না। ম্যাক্সিমাম সিনিয়র এবং অন্য অপরিচিত যারা, স্কুল কলেজের শিক্ষক-অফিসাররা সেখানে ছিল। এই দুজন আমার অত্যন্ত কাছের এবং আপনজন দেখেই আমি তাদের অনুরোধ করতে পেরেছি। তারা হয়তো মনে কষ্ট পেলেও অনুরোধ রেখেছে।
প্রক্টর আরও বলেন, আমাদের তো সব মিলিয়ে সমন্বয় করতে হয়। ওরা আগে আসলে এই সমস্যাটা হত না। সামনের দিকে বসতে পারত। আমি প্রত্যাশা করব যে, এর পরে কোন প্রোগ্রামে তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং তারা যেখানে বসতে চায়, সেখানে বসতে পারে। পুরো প্রোগ্রামটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থেই আমি খুব কাছের দু'জন মানুষকে অনুরোধ করেছি।"
এবিষয়ে জানতে চেয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
আরএক্স/