নিয়মিত সরিষার তেল খেলে যে উপকারিতা
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:২৮ অপরাহ্ন, ১৬ই নভেম্বর ২০২৩
প্রাচীনকালের ধারাবাহিকতা থেকেই ঔষধি গুণাগুণে সমৃদ্ধ সরিষার তেল আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় আজঅব্দি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সবার পছন্দের এই তেলটি যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও বটে। শারীরিক কাঠামো গঠনে এবং ত্বকের নানাবিধ উপকারে কাজে লাগে সুবাসিত এই তেলটি।
গবেষকদের মতে, নিয়মিত সরিষার তেলে রান্না করা খাবার খেলে শারীরিক কাঠামো গঠনে বেশ উপকার হয়। এতে আয়ু ও দীর্ঘায়িত হয়। চিকিৎসকদের মতে, সরিষার তেলে আস্থা রাখাই সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত সরিষার তেল মাথা ও শরীরে ম্যাসেজ করলে জটিল সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবেন।
সরিষার তেলে ১৯২৭ ক্যালরি বিদ্যমান। এক কাপ সরিষার তেলে চর্বি থাকে ২১৮ গ্রামের মতো। সরিষার তেলে যে সমস্ত পুষ্টি উপাদানগুলো হল প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পরিমাণমতো ভিটামিন এ। জেনে নিন সরিষার তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়গুলো-
হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নিয়মিত সরিষার তেল খেলে হার্টের কোনোরুপ ক্ষতি সাধন হয় না। বরং হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বহুগুণে বাড়ে। সেই সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেলে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান যা খারাপ কোলস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমায়। সেই সাথে শরীরের প্রতিটি কোণায় কোণায় ঠিক মতো রক্ত পৌঁছে যেতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে বিদ্যমান লাইনোলেনিক অ্যাসিডের ফলে মানব শরীরে ক্যানসার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়। ফলে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধি শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। বিশেষত স্টমাক এবং কোলন ক্যানসারকে নিমূল করতে এই তেলটির কোনো বিকল্প নেই।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে
সরিষার তেলে বিদ্যমান স্বাস্থ্যকর ফ্যাট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সাথে মনোযোগ বৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতিতেও বেশ সাহায্য করে থাকে।
শরীরের প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে
সরিষার তেলে অ্যান্টি-ইমফ্লেমেটারি উপাদান যে কোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মাথা যন্ত্রণা এবং তলপেটের অস্বস্তি কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি দারুণ উপকারী ও বটে। জ্বর-ঠান্ডা-কাশিতে উপশম পেতে হালকা গরম সরিষার তেলে কালোজিরা মিশিয়ে বুকে-পিঠে মাখুন, ভালো ফলাফল পাবেন।
ত্বকের যত্নে কার্যকরী ভূমিকা রাখে
সামান্য সরিষার তেল হাতের তালুতে মেখে মুখে লাগিয়ে নিন, সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিবে। সরিষার তেলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানে ভরপুর, অ্যালার্জি ও র্যাশ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি রুখতেও সরিষার তেল বেশ কার্যকরী। ত্বকে ডার্ক স্পট, ট্যান বা পিগমেন্টেশন সারতে বেসন, দই, লেবুর রস আর সরিষার তেল মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন, তার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নারিকেল তেলের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে আলতো করে ম্যাসেজ করুন, ত্বক নরম ও উজ্জ্বল থাকবে।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে সহায়তা করে
মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে ম্যাগনেসিয়াম দারুণ কাজে করে। আর সরিষার তেলে এই খনিজটি বিপুল পরিমাণে বিদ্যমান আছে। তাই এমন তেলে রান্না করা খাবার খেলে মাইগ্রেনের কষ্ট একেবারেই কমে যায়। প্রসঙ্গত, সরিষার তেলে ভাজা মাছ খেলে শরীরে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ফলে অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে
হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন। সরিষার তেল আর আদা এই দুটোতে এমন উপাদান থাকে যা ব্যাথা কমাতে বেশ উপকারী। ফলে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সরিষার তেলে পরিমাণ মতো কর্পূর মেশাতে পারেন।এবার তেলটা গরম করে ঠান্ডা হতে দিন। এবার সেই তেল মালিশ করুন। বেশ আরাম পাবেন।
ওজন কমাতে সহায়তা করে
সরিষার তেল ওমেগা -৩, ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির একটি দুর্দান্ত উৎস। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড কেবল খাবারের স্বাদই উন্নত করে না, রক্তে চর্বির মাত্রাও কমাতে সাহায্য করে। যেখানে ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে শরীরে সঞ্চিত বাদামী চর্বি ব্যবহারকে সক্রিয় করতে পারে। সরিষার তেল ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
সরিষার তেল আসল না নকল চিনার উপায়
সরিষার তেলের বিশুদ্ধতা সনাক্ত করার সহজ উপায় হল গন্ধ দ্বারা এটি সনাক্ত করা। আসল সরিষার তেলের গন্ধ খুবই তীব্র হয়। সরিষার তেল থেকে তীব্র গন্ধ না পেলে বুঝবেন সরিষার তেল নকল। এভাবে সহজেই চিনতে পারবেন আসল সরিষার তেল।
সরিষার তেল কিনে আনার পর ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর যদি দেখেন সরিষার তেলের উপর সাদা রঙের কোনো আস্তরণ আছে কিংবা তেল জমে গেলে বুঝবেন এটি নকল সরিষার তেল।
আবার সরিষার তেলের আসল নকল হাতের তালুতে রেখেও চেনা যায়। প্রথমে আপনার হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল ভালো করে মেখে নিন এবং দেখুন যে, আসল সরিষার তেলের রং গাঢ় হলুদ হয় এটা গাঢ় হলুদ হয় কি না। অন্যদিকে নকল সরিষার তেলের রং হালকা হলুদ হয়ে থাকে।