উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ ১৮৩ বছরে


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:০৯ অপরাহ্ন, ১৯শে নভেম্বর ২০২৩


উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ ১৮৩ বছরে
ঢাকা কলেজে।

‘Know Thyself ’ মূলমন্ত্র ধারণ করে দীর্ঘ ১৮২  বছরের পথচলায় সময়ের সঙ্গে শিক্ষার আলো বিতরণের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবেই পরিচিত শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠ। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজটি হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার শিক্ষা বিস্তারের মূল কেন্দ্রবিন্দু। শুধু ঢাকা নগরীই নয় এই উপমহাদেশের বিদ্যারণ্যে প্রবীণ এক বৃক্ষের নাম ‘ঢাকা কলেজ’।


 ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এই তিন ধরনের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ইতিহাসের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠে ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে মাত্র ৬টি বিষয়ে স্নাতক কোর্স শুরু হলেও বর্তমানে ২০ টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে পাঠদান করা হয়।


১৮৪১ সালে পথচলা শুরুর পর ১৮৫৯-৬০ সালে কলেজের ছাত্রসংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়ায়। ১৯১৭-১৮ সালে তা ৯৯৫ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।


উন্নত নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য নন-ক্রেডিট কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগে ২৩০ জনের বেশি শিক্ষক রয়েছেন। কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই পিএইচডি ও এমফিলসহ অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রিধারী। ঢাকা কলেজে অনেক খ্যাতিমান পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ অধ্যায়ন করেছেন। ঢাকা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। 


কলেজে প্রবেশের প্রধান ফটক, পাশেই মন জুড়ানো ফুলের বাগান পেরিয়ে অধ্যক্ষের বাসভবন। এর একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলে স্মৃতিরোমন্থনের ঝুড়ি নিয়ে বসে থাকা এক ক্যান্টিন, যেখানে আড্ডা, ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিনের পাশেই রয়েছে বিস্তৃত এক পুকুর। পুকুর জলে শিক্ষার্থীদের দুরন্তপনা দেখলে যে কাউকেই ফিরে যেতে হবে শৈশবে। আর পুকুর পাড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুল যেন অফুরন্ত মুগ্ধতা ছড়ায়৷ পাশেই বিশাল এক খেলার মাঠ।শীতের সকালে হালকা  কুয়াশা, চারিপাশে গাছপালা-সবুজে পরিপূর্ণ যে কারো মন মেতে উঠতে বাধ্য। বিকালে মাঠের এক প্রান্তে খেলা চলছে তো অন্য প্রান্তে খোশ  গল্পে মেতে উঠছে সহপাঠীরা। এর পাশেই রয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদ৷


বর্তমানে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসের সংখ্যা ৮টি। এসব ছাত্রাবাসে কত যে দেশ বরেণ্য মানুষের বসবাস ছিল তার সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন।


 দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ২০৬ নং কক্ষ। এই কক্ষে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন দেশবরেণ্য খ্যাতিমান লেখক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক ‘চিলেকোঠার সেপাই’ খ্যাত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ থেকে ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এই লেখকের স্মরণে নির্মিত হয়েছে ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস’।


‘পশ্চিম ছাত্রাবাস’ স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে। এই ছাত্রাবাসে শুধু সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের বসতি। পাশেই রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস’। এই ছাত্রাবাস একটা বিশেষ কারণে বিখ্যাত। এই ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলায় ২০৯নং কক্ষে নিজের শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল কাইয়ুম।আরেক ছাত্রাবাসের নাম ‘শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস’। শহীদ ফরহাদ সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছিলেন ১৯৯১-৯২ সেশনে দ্বাদশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ১৯৯২ সালের ২৫ আগস্ট নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেটে ঘাতকরা নির্মমভাবে ফরহাদকে হত্যা করে। তারই স্মরণে নামকরণ করা হয় এই ছাত্রাবাসের। এ ছাড়া উত্তর ছাত্রাবাস, দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে শেখ কামাল ছাত্রাবাস।


ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজের ছাত্রসংসদের রয়েছে একটি অনন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনেক উজ্জ্বল নেতা বা প্রয়াত অনেক জাতীয় নেতা ঢাকা কলেজ থেকে তাদের সোনালী রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেছিলেন।


ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদ সম্পর্কে সবচেয়ে পুরনো যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো, ১৯৩২-৩৩ সালের ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নুরুল হুদা, তখন সাধারণ সম্পাদকের পদটিই ছিল সর্বোচ্চ পদ। বর্তমানে সহ-সভাপতি বা ভিপি হলো নির্বাচিত সর্বোচ্চ পদ। এরপর ৫০ এর দশকে ৮টি, ৬০ এর দশকে ৭টি, ৭০ এর দশকে ৩টি, ৮০ এর দশকে মাত্র একটি এবং সর্বশেষ ৯০ এর দশকে ৪টি ছাত্রসংসদ গঠিত হয়। সর্বশেষ ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৩-৯৪ সালে।


 পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে রয়েছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী এবং সামাজিক সংগঠন। ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, ঢাকা কলেজ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাবসহ আরও অনেক সংগঠন।


১৮৬৬ সালে ঢাকায় কর্মরত ইংরেজ জয়েন্ট কালেক্টর আর্থার লয়েড ক্লে’র লেখা ‘Principal Heads of the History and statistics of the Dacca Division’ নামক এক প্রতিবেদনে ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে চমৎকার তথ্য পাওয়া যায়। এখানে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠার তারিখ হিসেবে ২০ নভেম্বরের কথাই উল্লেখ আছে। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল ঢাকা কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও ওই ভবনের নকশা করেছিলেন কর্নেল গ্যাসটিন। খাঁটি ব্রিটিশ ঢঙ আর বিলাতি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আদলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।



তবে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠার পটভূমিও বেশ চমৎকার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইংরেজরা ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এতদঞ্চলের শাসকে পরিণত হয় তারা। ইংরেজরা নিজেদের শাসক হিসেবে পরিচয় না দিলেও ১৭৭২ সালে গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস এই মুখোশ খুলে দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে সরাসরি এ দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। পরবর্তী ৬২ বছর পর্যন্ত তারা এই অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এত দীর্ঘ সময়ে এই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা ঐতিহ্যগতভাবেই চলছিল।


এরপর ১৮২৮ সালের ২০ আগস্ট রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। রামমোহন রায়ের ধর্ম প্রচারে অনেকেই এতে আকৃষ্ট হয়।


মানুষের এই আগ্রহ দেখে ১৮৩০ সালে সরকার এক শিক্ষানীতি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৮৩৫ সালে ২০ এপ্রিল দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (General Committee of Public Instruction) লর্ড বেন্টিকের নিকট একটি প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনটিতে ইংরেজি সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য যতগুলো সম্ভব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। এই প্রতিবেদনের হাত ধরেই ১৮৩৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে বুড়িগঙ্গার তীরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ‘ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী’ যেটি বর্তমানে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত।’ শিক্ষাদীক্ষায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তৎকালীন সিভিল সার্জন ড. জেমস টেইলর ও ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মি. গ্রান্টের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজের সামগ্রিক চিত্র বদলে যেতে থাকে।পাশ্চাত্যের কলাবিদ্যা, বিজ্ঞান এবং দর্শন বিষয়ে জ্ঞানলাভের পথ উন্মুক্ত হয় এদেশের মানুষের মাঝে। মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আর সাড়া দেখে ঢাকা ইংলিশ সেমিনারি স্কুলকে একটি কলেজে বা একটি আঞ্চলিক উচ্চতর ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। যার নাম দেয়া হয় ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ বা সংক্ষেপে ঢাকা কলেজ।


এরপর ঢাকা কলেজের জন্য নির্মাণ করা হয় কার্জন হল। ভিক্টোরীয় স্থাপত্যরীতি, মোগল স্থাপত্যশৈলী আর বাংলার স্বতন্ত্র সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি এই ভবনটি ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি ভাইসর লর্ড কার্জন ঢাকায় এসে এর উদ্বোধন করেন।


১৯০৮ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ওই বছরই ঢাকা কলেজ কার্জন হলে অভিবাসিত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা কলেজ তার সর্বস্ব দিয়ে ঠাঁই নেয় পুরাতন হাইকোর্টের লাট ভবনে (বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে)।


১৯৩৯ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সশস্ত্র সেনারা হাইকোর্ট ভবন দখল করে তাঁবু হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৪৩ সালে ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমান কবি নজরুল কলেজের মূল ভবনে) কিছুদিন অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালায়। এর অল্পদিন পরেই ফুলবাড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন সিদ্দিকবাজারে খান বাহাদুর আবদুল হাইয়ের মরচে ধরা পুরাতন দালানে কার্যক্রম শুরু করে।


১৯৫৫ সালে তার আপন গৃহের সন্ধান পায় ঢাকা কলেজ। স্থায়ী ঠিকানা হয় মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ঢাকা-১২০৫ এ। সে সময়ে ঢাকা কলেজের আয়তন ছিল ২৪ একর। তবে স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের সময় ৬ একর জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে ঢাকা কলেজের মোট জমির পরিমাণ ১৮ একর।


১৮৪১ সালে ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে. আয়ারল্যান্ডকে ঢাকা কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৮৪১ থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।


দেশ ও জাতির দুর্দিনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দুঃশাসনের মরণ-যন্ত্রণা আর কষ্ট সংগ্রামকে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে। ১৯৩৯-৪৫ সালের বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪১ সালের দোল দাঙ্গা, ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তথা শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে এ কলেজের ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল অগ্রভাগে।


১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা কলেজের ৮ জন ছাত্র শহীদ হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া এসব বীর সেনানীদের জীবনের সঠিক ইতিহাস ও প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে বর্তমানে কাজ করছে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া এ ৮ বীরকে শ্রদ্ধায় জড়িয়ে রাখতে মূল ভবনের প্রবেশদ্বারের বাম পাশে দেয়ালে পাথরে খচিত স্মৃতিফলক রাখা আছে।


ঢাকা কলেজকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রাজ্জাক ১৯৫৮ সালে এক রাজনৈতিক স্মৃতিচারণে লেখেন, ‘সামরিক শাসনের স্টিমরোলার থেকে কিভাবে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা যায় এ ব্যাপারে পথ বের করার জন্য কতদিন যে সন্ধ্যার পর ঢাকা কলেজের মাঠে বসে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে গোপনে শলাপরামর্শ করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেদিন আমার সে বিদ্রোহী সত্তা পরবর্তীকালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। বিদ্রোহের এ বীজ আমার মাঝে রোপিত হয়েছে ঢাকা কলেজেই।’


ঐতিহ্যের ১৮২ বছর পেরিয়ে আজ ১৮৩ বছরে পদার্পণ করেছে ঢাকা কলেজ। দেশের আঙিনায় নিজস্ব স্বকীয়তায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের কল্যাণে কাজ করছেন এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া লাখ লাখ শিক্ষার্থী। ‘নিজেকে জানো’ এ নীতিবাক্যকে ধারণ করে ঢাকা কলেজ তার গর্ব নিয়ে পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকুক- এ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের৷শিক্ষার্থীরা দাবি করেন,২০ নভেম্বরকে বাংলাদেশের জন্য জাতীয়ভাবে 'উচ্চ শিক্ষা দিবস' হিসেবে  স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আপন আলোয় উদ্ভাসিত হোক ঢাকা কলেজ।


আরএক্স/