শনিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৩
১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঢাকা কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ২০শে নভেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ফাইল ছবি।

আল জুবায়ের: ৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব নৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া জাতির আলোকবর্তিকা, জাতির পিতার "বঙ্গবন্ধু" নামটি যেখান থেকে সর্বপ্রথম দেওয়া হয় সেই  ঢাকা কলেজের ১৮২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সোমবার (২০ নভেম্বর)। 


বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে এই ক্যাম্পাস  জড়িত। আজকের যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা ঢাকা কলেজের ত্যাগের ফসল।


 তবে অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আক্ষেপও কম নেই এই কলেজের প্রতি।  প্রতিষ্ঠার ১৮২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা তো দূরের কথা তেমন কোনো আবাসিক সুবিধা পায় নি  শিক্ষার্থীরা, শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সবসময়।এরপরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  উপলক্ষ্যে কি  ভাবছেন  বর্তমান শিক্ষার্থীরা জানার চেষ্টা করেছে জনবাণীর ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি আল জুবায়ের। 


ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ বিভিন্ন সময়ে জাতির ক্রান্তিকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম দলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ছিলেন ঢাকা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ইকবাল আনসারী খান। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন নজিম উদ্দিন খান খুররম। পরবর্তীতে এই সূর্য-সন্তানের নামে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে 'বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মুহাম্মদ নজিম উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়াম'।


বিভিন্ন অঙ্গনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। বুদ্ধদেব বসু, হুমায়ুন আজাদ, আবদুর রাজ্জাক (অধ্যাপক), আবদুল গাফফার চৌধুরী, হুমায়ূন আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, শেখ কামাল, শেখ জামাল, আব্দুর রউফ (কমান্ডার), আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ), আব্দুল করিম (মৃত্তিকা বিজ্ঞানী), আব্দুল মতিন চৌধুরী (পদার্থবিদ), মোহাম্মদ ইব্রাহিম (বিচারপতি), জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নওয়াব আলী, মহাদেব সাহা, আসলাম তালুকদার মান্না (অভিনেতা) সহ অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান‌ ঢাকা কলেজ যাদের সকলের নাম লিখতে গেলে লেখার কলেবর অনেক বেশি হয়ে যাবে।


বর্তমানে ঢাকা কলেজে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ঢাকা কলেজ। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কলেজ গুলোর মধ্যেও অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত ঢাকা কলেজের গ্রন্থাগার এবং বিভিন্ন পাঠ কক্ষে জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। 


১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ১৮২ বছর যাবৎ এই অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা কলেজ। তবে এখনো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় এবং উদ্বেগজনক। পরীক্ষা চলাকালীন পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবনের সংকট থাকায় কলেজের নিজস্ব একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। গবেষণা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাগার এবং বিভিন্ন উপকরণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গ্রন্থাগার এবং পাঠকক্ষ সমূহে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আসনের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া ছাত্রাবাস গুলোতেও বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসগুলোতে পর্যাপ্ত সিট না থাকার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে অধিক অর্থ ব্যয় করে অবস্থান করতে হয়।


বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্থায়ী অফিস কক্ষের ব্যবস্থা হয়নি এখনো। কিছু কিছু সংগঠনের অফিস কক্ষ থাকলেও সেখানে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।বাংলাদেশের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক ঢাকা কলেজের এ সকল সমস্যা সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।


পরিশেষে, ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২০ নভেম্বরকে বাংলাদেশের জন্য জাতীয়ভাবে 'উচ্চ শিক্ষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।


মো. শাহাদাত হোসাইন 

সাধারণ সম্পাদক 

ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি।


উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির কথা চিন্তা করলে অধিকাংশ অভিভাবকবৃন্দই মনে করেন , ঢাকা কলেজ রাজনৈতিকভাবে একটি অস্থিতিশীল জায়গা । সেখানে পড়ালেখা হয়না । সিনিয়ররা সেখানে মিছিল করতে বাধ্য করেন , মিটিং করতে বাধ্য করেন , ছাত্রাবাসে থাকতে হলে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয় । বাস্তবিক অর্থে এই সবগুলো ধারনাই ভুল । ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান । সেখানে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলে , মিছিল হয় , মিটিং হয় ; তবে কোনো শিক্ষার্থীকেই সেই কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়না । আমি শহীদ শেখ কামাল ছাত্রাবাসে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি , কোনো উত্তপ্তময় পরিস্থিতি তৈরি হলেও শিক্ষকদের পাশাপাশি সিনিয়ররাও সর্বপ্রথম উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন । আমার দেখা সবচেয়ে সেরা মানের শিক্ষকেরা ঢাকা কলেজে ক্লাস নেন । একজন মানুষ তখনই প্রকৃত শিক্ষক হয়ে ওঠেন , যখন তারা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বাস্তবিক শিক্ষাও দিয়ে থাকেন । আজ চার বছর হয়ে গেছে আমি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছি । অথচ অসংখ্য শিক্ষক আছেন , যাদের সাথে আমার এখনো যোগাযোগ হয় । কথা হয় । এই চার বছরেও শিক্ষকদের সেই ভালোবাসা বিন্দু পরিমাণ কমেনি , বরং বেড়েছে । আমি দেখেছি , আমার অনেক বন্ধুর বই কেনা থেকে শুরু করে ফর্ম ফিলাপ , এমনকি মাসিক খরচও অনেক শিক্ষক বহন করেছেন । বাবা-মায়ের মতো আগলে রেখেছেন তারা । কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি ।


 উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীকে বাস্তবিক এবং পরিণত পৃথিবীর সাথে পরিচিত হতে হয় । বহুমত সম্পর্কে জানা , ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা , বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া ইত্যাদি । ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এমন বাস্তবিক পরিবেশের সাথে পরিচিত ও পরিণত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় । প্রতিটি অঞ্চলের একেকজন মেধাবী তরুণ এসে ঢাকা কলেজকে এক টুকরো বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে । এই কলেজ থেকে শুরু হওয়া বন্ধুগুলো একেকজন গৌরব !


আমি মাঝে মাঝেই ছুটি হলে কলেজের সামনে দাঁড়াতাম । অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতাম , এরাই বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম ! দেশকে নেতৃত্ব দেবে এমন অসংখ্য ছেলেরা এই পথ দিয়েই হেঁটে বের হয় !


ঢাকা কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমার কাছে বরাবরই আবেগের ! আমি যখন স্কুলে পড়তাম , তখন থেকেই এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের সমৃদ্ধশালী ইতিহাসের একটা ছোট্ট অংশ হতে পারার স্বপ্ন দেখতাম । আমি মনে করি , এই এক জীবনে ঢাকা কলেজের ইতিহাসের অংশ হতে পারাটা একটা সৌন্দর্য !


মো. খশরু আহসান 

উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ'২০ , ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক যুগ্ম - সাধারণ সম্পাদক ।


২০ নভেম্বর উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের জন্মদিন। এ দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা কলেজ প্রশাসনের আবেগ কতটুকু এখনো জানিনা কিন্তু নতুন শিক্ষার্থীদের আবেগ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মস্থলের পত্রিকা এবং পোর্টালের জন্য লেখা চেয়েছে। পরিক্ষার চলমান থাকায় সেভাবে লেখা হয়ে ওঠেনি দীর্ঘ কয়েক বছর কমবেশি ঢাকা কলেজ নিয়ে লিখছি। কয়েক বছর আগের ক্যাম্পাস যেমন ছিলো সামান্য পরিবর্তন ছাড়া এখনো ঠিক তেমনই আছে। ক্লাসরুম এবং সহ শিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন উপকরণের তীব্র সংকট থাকার পরেও হরহামেশাই দেশের অন্যতম আধুনিক বিদ্যাপীঠ হিসেবে বেশ ঢোল পেটানো হয়েছে। কিন্তু সংকটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কেমন যেনো আবেগ শুকিয়ে যাচ্ছে। 


বাংলাদেশের অনেক বড় বড় কর্মকর্তা ঢাকা কলেজের স্মৃতি নিয়ে মাঝেমধ্যেই  আবেগঘন লেখা লিখে। আগে এসব দেখে অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু এখন কেমন যেনো ইতস্তত বোধ করি। অনেক শুক্রবারেই ঢাকা কলেজের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বড় বড় সরকারি আমলা এবং ব্যবসায়ীদের অডিটোরিয়ামে নাচগান করতে দেখি। ফেসবুক স্ক্রোল করলে মাঝেমধ্যেই দেখি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ঢাকা কলেজের বিশাল আয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ঢাকা কলেজ নিয়ে আয়োজন! কানাডার টরেন্টো তে ঢাকা কলেজ কেন্দ্র করে আয়োজন। গতবছর দেখলাম, নরসিংদীর কোনো এক রিসোর্টে অস্থায়ীভাবে প্রায় আস্ত একটি ঢাকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ঐ মানুষ গুলো ঢাকা কলেজের সংকটের কোনো তথ্য সেভাবে রাখে না। অধিকাংশই শুধু ফল ভোগের সময় এসে হাজির হয়। ভোগ করে চলে যায়। 


যতটুকু বুঝি, যে বা যারাই নিজেদের কিছুটা মেলে ধরেছে বা ধরার চেষ্টা করেছে। তাদের প্রত্যেকের জীবনেই অ্যাকাডেমিক শিক্ষার চেয়েও সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর অবদান অনেক বেশি। কিন্তু পজিশন পেয়ে গেলে কেউ সেভাবে এসব প্রকাশ বা স্বীকার করে না। প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিকাশে যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন, বর্তমান ঢাকা কলেজে তা নেই। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঐতিহ্য বজায় রেখে এগিয়ে যাক ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীণ বিদ্যাপীঠ।


আব্দুর রহমান

সভাপতি,ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি।

আধ্যাত্মিক সাধনায় সূফীজম ও কাশফের প্রয়োজনীয়তা


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০৯:১১ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: সংগৃহীত

সূফী তথা সুফিজমের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ‘সুফ’ তথা ছাগল বা ভেড়ার লোম থেকে সূফী নামটির উৎপত্তি । কেউ কেউ বলেন ‘সাফি’ অর্থাৎ ময়লা পরিষ্কারক থেকে সূফী কথাটি এসেছে। তবে আরবি ‘সাফা’ (পবিত্র) শব্দ থেকে সূফী শব্দটির উৎপত্তি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। বস্তুত: অন্তরের ময়লাকে পরিষ্কার করার লক্ষ্যেই সূফূীরা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।


পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার আকাঙ্খা মানুষের চিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে সূফী দর্শন বা সূফীবাদ বলা হয়। হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) ছাহেবের মতে, " মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফী বাদ। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। মহব্বতের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বে লীন হয়ে যাওয়া। যাকে মনছুর হাল্লাজ (র.) ছাহেব পরিণত করেছিলেন ‘ফানা ফিল্লা’তে।


যে মতবাদ ধর্মের গতানুগতি কতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে বিচার করে, সেটাই সূফীবাদ। হজরত জুনাইদ বোগদাদি (র.) ছাহেব সূফীবাদকে অভিহিত করেছেন ‘নিজের অজ্ঞতার উপলব্ধি’ বলে। অজ্ঞতা বলতে বলা হচ্ছে "বিশালত্ব" তথা আল্লাহকে জানার ও তাঁকে চেনার ব্যাপারে অজ্ঞতা। আল্লাহকে জানার ও চেনার উপায় হোল ভক্তি ও প্রেম । এই প্রেমের অন্য নামই সূফীবাদ। আর এই প্রেমের সাধকরাই সূফী সাধক জগতে পরিচিত।


অনেকে নবী পাক (সা.)’র মাধ্যমে সূফীজমের প্রারম্ভ বলতে চেয়েছেন। এর পক্ষে যৌক্তিকতা হল নবী পাক (স.) নবুওয়্যাত প্রাপ্তির আগে পবিত্র কাবার প্রায় ৫ কি.মি. দূরত্বে হেরা গোহায় মহান আল্লাহ পাকের ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আর এখানেই পবিত্র কুরআনের প্রথম শব্দ "ইকরা" নাযিল হয়। এক মতে হযরত হাসান আল বসরী (রহ.) ছাহেব সর্বপ্রথম সূফী বলে গণ্য হয়ে থাকেন ।


প্রিয় নবী (সাঃ) সাহাবাদেরকে ৪টি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন---শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা দূর হয়, হৃদয় আলোকিত হয়। মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশে (রহমতের সময়) জেগে বা অন্য যে কোন সময় আল্লার ধ্যনে মগ্ন থাকা নিজের জীবনের ভুল, বেয়াদবীর জন্য মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা । এভাবেই অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। আর ঐ চোখেই কেবল মো'মেন বান্দার নামাজ মেরাজ সম হয়ে থাকে।


মোরাকাবা হল নফল ইবাদতের অর্ন্তভূূক্ত। নফল ইবাদত হল মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রথমে মোরাকাবা করেছেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত নির্দেশিত হয়েছে।


অবশ্য আরেক মত হচ্ছে পবিত্র আসহাব-ই-সুফফা অর্থাৎ বান্দার এ সাহাবাগণের আদর্শই সূফীরা গ্রহণ করেছিলেন এবং সূফফা থেকে সূফী শব্দটি নেয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববীর বারান্দায় একটা ছাউনির নিচে থাকতেন। রাসুল (সাঃ) সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে বসে হজ্ব ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, ধ্যান বা মোরাকাবা, দরুদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে থাকেন। ছাউনি শব্দটা থেকেই এসেছে সূফী শব্দটা। তাঁরা সেখানে থাকতেন সংসার তথা দুনিয়াবী সব কিছু ত্যাগ করে। তাঁরা লোমের কম্বল এবং পোশাক ব্যবহার করতেন । ওই সাহাবিগণ ব্যবসা-বাণিজ্য-চাষাবাদ কিছুই করতেন না, এমনকি থাকতেন না পরিবারের সাথেও। মক্কা - মদিনা অথবা যেখানেরই অধিবাসী হোন না কেন- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে নিবেদিত ও সমর্পিত হয়েছিলেন তাঁরাই এসে থাকতেন ওই তিনদিক খোলা ছাউনির তলায়। পুরো দলের মধ্যে হয়ত দু-চারজন কাঠ কাটতে গেলেন, বিক্রি করে সবার জন্য দু-চার টুকরা করে রুটির জোগান দেবেন- বাকিরা ওই ছাউনিতেই। নবী পাক (সাঃ)  গোলামিতে। তিঁনার পবিত্র কদমের তলায়। দিন নেই, রাত নেই, গ্রীষ্ম-শীত-ধূলিঝড় নেই সব সময়। তাঁদের না আছে এক টুকরা বাড়তি কাপড়, না একটা বাক্স-পেঁটরা। দাঁড়াতে পারেন না, অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান- এই এঁরাই আবার কী করে যেন রাতের পর রাত পার করে দেন সালাতে। দয়ার সাগর রাসূল (সাঃ) তাঁদের ছাড়া খাবেন না। বসবেন না। উঠবেন না। এই আসহাবে সুফফারা দিনের পর দিন রোজা রেখে রাতের পর রাত কুরআন তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক সাধনায় এমন মগ্ন ছিলেন, যে ইসলামের ব্যবহারিক প্রকৃত রূপ হিসাবে তাঁদের দেখেই মানুষ দলে দলে শান্তির ধর্মে শামিল হত। এসে পড়ত তাদের পান্ডিত্য দেখে, মোহ- বরজনের আজব মোহ দেখে। এভাবে যারা করেছেন, তারাই শুধু সূফী নন। ইসলামের পূরো রীতিটা যেই অনুসরণ করেন, শেষ মেশ তিনিই সূফী।


কাশফ কি ;-- কাশফ মানে হল অজানা কোন বিষয় নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক তার কোন বান্দার নিকট এমন কিছুর জ্ঞান প্রকাশ করা যা অন্যের নিকট অপ্রকাশিত। আর এটি কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিঁনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। তিঁনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কাহারো নিকট প্রকাশ করেন না’। ‘তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তিঁনি তার (অহীর) সম্মুখে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন’ (জিন ৭২/২৬-২৭)। এখানে ‘ওহী’ ও ‘রাসূল’ বলতে জিবরীল ও নবী-রাসূলগণকে বুঝানো হয়েছে। তবে কখনও কখনও অন্য কারু নিকট থেকে অলৈাকিক কিছু ঘটতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন ছাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে হয়েছে। অতএব এরূপ যদি কোন মুমিন থেকে হয়, তবে সেটা হবে ‘কারামত’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে এর দ্বারা সম্মানিত করেন।

ঋণ খেলাপি প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিনিধি
🕐 প্রকাশ: ০৭:৫০ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

প্রতীকী ছবি

নিয়ম অনুযায়ী ঋণ খেলাপি কোন গ্রাহক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ব্যাংক ঋণের হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে। 


গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এর কারনে কেউ খেলাপি হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। এর আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ৭দিন আগে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে নিয়মিত করার নিয়ম ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা হয়। গত জুলাই আবারও ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা হয়। নতুন আইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার একদিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাড় দেওয়ার কারণে ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সহজ হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগের মত ১০ শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হচ্ছে না। এখন অনেক কম অর্থ জমা দিয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছে। একই সাথে ঋণ পুনঃ তফসিলের তথ্য  বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো যে যার মত করে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে দিচ্ছে।


আরএক্স/

জাবিতে এক মাস ধরে বন্ধ মসজিদের নির্মাণ কাজ, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন


ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
🕐 প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: জনবাণী

প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম বরকত হল ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল সংলগ্ন মসজিদের নিমার্ণ কাজ। মসজিদের নির্মাণ কাজ পুনরায় চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছে দুই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। চলতি মাসেই নির্মাণকাজ শেষ করার আল্টিমেটাম দেন তারা।

 

শুক্রবার (১লা ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে নির্মাণাধীন মসজিদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুই হলের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় নির্মাণ কাজ চালু করার দাবি জানান এবং আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও প্রকল্প অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার আল্টিমেটাম দেন তারা।


মানববন্ধন অনুষ্ঠানে  রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র রাফিউল ইসলাম রনি বলেন, মসজিদ নির্মাণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন টালবাহানা শুরু করেছে। এরই মধ্যে চারবার স্থগিত হয়েছে কাজ। অথচ বিশ^বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য প্রকল্পের কাজ দিন রাত ২৪ ঘন্টা চলমান। আমরা এই মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী ১০ তারিখ মধ্যে কাজ শুরু না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন এবং প্রকল্প অফিসে আমরা তালা ঝুলিয়ে দিবো। যতদিন কাজ শুরু না হবে ততদিন এই তালা থাকবে। আমরা আগামী মাসের মধ্যে এই মসজিদে নামাজ শুরু করতে চাই।


নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো: মূসা ভূঁইয়া বলেন, মসজিদের কাজ নিয়ে এতো টালবাহানা আমরা আর কোথাও দেখি নাই। এক বছরের মধ্যে একতলা একটি মসজিদ তারা করতে পারেনি। এটা স্পষ্টতই উদাসীনতা।

 

উল্লেখ্য, দুই হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সমন্বিত একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় ১৯৯০ সালে। তবে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার কিছুদিন পর থেকে পাঁচবার সংস্কার করা হয়েছিল পুরাতন মসজিদটি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে জরাজীর্ণ মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলে। এর মধ্যে নকশা ও আর্থিক জটিলতায় কয়েক দফায় কাজ স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে চলতি বছরের  ১৯ আগস্ট সকালে ঢালাইয়ের কাজ চলাকালীন ছাদ ধসের ঘটনা ঘটে।


আরএক্স/

শীতে রান্না করুন হাঁসের সুস্বাদু ঝাল মাংস


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ০২:২৭ পিএম,১লা ডিসেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি; সংগৃহীত

শীতের সময় সবচেয়ে মজার একটি খাবার হলো হাঁসের ঝাল মাংস। এ সময় নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে রুটি বানিয়ে অথবা গরম ভাতের সঙ্গে হাঁসের মাংস যেন অমৃত এক খাবারে নাম। হাঁসের মাংস রান্না সহজ মনে হলেও সবাই সুস্বাদু করে রাঁধতে পারেন না। সঠিক মসলার পরিমাণ আর রান্নার কৌশল জানা থাকলে খাবারটি হবে অনেক সুস্বাদু। তবে চলুন রেসিপিটি জেনে নিন।


কি কি লাগবে -


মধ্যম সাইজের হাঁস ১টি, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া ২ চা চামচ, এলাচ ৪টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, কাঁচা মরিচ ৬টি, তেল আধা কাপ, জিরার গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ২ চা চামচ, জায়ফল গুঁড়া এক ।


যেভাবে রান্না করবেন-


প্রথমে পেঁয়াজ তেলে বাদামি করে ভেজে নিতে হবে, তারপর সব মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে আবার অল্প পানি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। এরপর সেই কষাণো মসলায় মাংস ও লবণ দিয়ে দিন। এবার চুলার আঁচ মৃদু করে মাংস ভালোমতো কষিয়ে নিন। বেশকিছু পরে তেল ওপরে উঠে এলে মাংসে গরম পানি দিবেন। মাংস সেদ্ধ হলে ঝোল সামান্য শুকিয়ে গেলে কাঁচা মরিচ ও জিরার গুঁড়া দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। সবশেষে পোলাও বা পরোটা দিয়ে পরিবেশন করুন বেশ জমে যাবে। 

ধর্মে সূফীবাদের গুরুত্ব কী?


জনবাণী ডেস্ক
🕐 প্রকাশ: ১০:০৪ পিএম,৩০শে নভেম্বর ২০২৩

Janobani Bangla NewsPaper

ছবি: প্রতিকী

সূফীবাদ হল ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা-সম্পর্কিত আলোচনাই এর মূল বিষয়বস্তু। নিজ নিজ আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা। ‘সুফ’ অর্থ পশম আর তাসাউফের অর্থ পশমি বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস (লাবসুস-সুফ)। মরমিতত্ত্বের সাধনায় কারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাউফ। যিঁনি নিজেকে এরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন, তাঁকেই সূফী বলে। 


তাসাউফ বা সূফীবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বোঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহর (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহতায়ালা নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র পন্থা হতে পারে। তাসাউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে ‘তরিকত’ বা খোদা-প্রাপ্তির পথ বলা হয়। আর তরিকত সাধনায় মুর্শিদের প্রয়োজন আব্যশক। সেই পথ হলো ফানা ফিশ শায়েখ , ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হাছিলের পর বাকাবিল্লাহ হাছিল হয়। 



বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সূফী আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সূফীর অন্তরে সর্ব অবস্থায় শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে।


হযরত মোহাম্মদ (সা.) ফরমান, ‘মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো, এটি হলো কলব বা হৃদয়। আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কলব কলুষমুক্ত হয়।’ সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কলবকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সূফীবাদের উদ্দেশ্য।


সূফীবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যের নগরে। সেখানকার প্রখ্যাত সূফী-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকেরা নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এই দর্শনকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত অলিদের কেন্দ্র করে বিভিন্ন তরিকা গড়ে ওঠে।


তার মধ্যে চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে: ১. বড় পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানি (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা, ২. সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দীন চিশতি (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা, ৩. হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং ৪. হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী সেরহিন্দী (র.) ছাহেব প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দেদীয়া তরিকা। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দি, মাদারিয়া, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া নামে আরও কয়েকটি তরিকার প্রসার ঘটে।


আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সূফীরা বাংলাদেশে সূফীবাদ প্রচার করেন। খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে যেসব সূফী-সাধক এ দেশে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: শাহ সুলতান রুমি (র.) ছাহেব, বাবা আদম শহিদ (র.) ছাহেব, শাহ সুলতান বলখি (র.) ছাহেব, শাহ নিয়ামতুল্লাহ বুতশেকন (র.) ছাহেব, শাহ মখদুম রুপোশ (র.) ছাহেব, শেখ ফরিদউদ্দিন শক্করগঞ্জ (র.) ছাহেব, মখদুম শাহ দৌলা শহিদ (র.) ছাহেব প্রমুখ। এঁরা গভীর পাণ্ডিত্য ও বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বলেও প্রচলিত আছে। বেশ কয়েকজন সূফী-দরবেশ ইসলাম ও সূফীবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের মধ্যে শেখ জালালুদ্দিন তাব্রিজি (র.) ছাহেব, শাহ জালাল (র.) ছাহেব ,শাহ পরাণ (র.) ছাহেব ,শাহ আলী বাগদাদী (র.) ছাহেব, খান জাহান আলী (র.) ছাহেব, শাহ ফরিদউদ্দিন (র.) ছাহেব,শাহ সূফী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র.) ছাহেব, শাহ সূফী বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ছাহেব প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।


হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের গুরুসাধকেরা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে যেভাবে দীক্ষা দান করতেন, সেভাবে মানবপ্রেম তথা সৃষ্টির প্রতি প্রেমের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রেমার্জন সূফীবাদের মূল আদর্শ। সূফীরা নিজেদের আদর্শ জীবন এবং সূফীবাদের প্রেম-ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের মধুর বাণী প্রচার করে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এ দেশের সাধারণ মানুষের মন মনন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনেও সূফীদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন পানি পথে যাতায়াতের সময় মাঝিরা ‘বিভিন্ন পীরের’ নাম স্মরণ করে। শুধু তা-ই নয়, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে শহরের যানবাহনে পর্যন্ত বিভিন্ন পীর-আউলিয়ার নাম লেখা থাকে। লৌকিক ধারার মুর্শিদি-মারফতি গান, গাজীর গান, গাজীকালু-চম্পাবতী কাব্য ও অন্যান্য মরমি সাহিত্য, মাদার পীর ও সোনা পীরের মাগনের গান ইত্যাদি বিভিন্ন পীর-দরবেশকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।