বিপদ-আপদে মুমিনের যা করণীয়


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩:০৫ অপরাহ্ন, ২৫শে নভেম্বর ২০২৩


বিপদ-আপদে মুমিনের যা করণীয়
ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়াবি জীবনে বিপদ-আপদ মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুমিনদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তবে আল্লাহ পাক মুমিনদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার কিছু উপায়ও বলে দিয়েছেন। বিশেষত আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং পরকালে পুরস্কারের আশা মুমিনকে বিপদে-আপদে ভেঙে পড়তে দেয় না।


যে বিশ্বাস মুমিনের ঈমান দৃঢ় করে


১. পাপ হতে মুক্তির প্রত্যাশা : মুমিন তার বিপদের বিনিময়ে পাপ হতে মুক্তির প্রত্যাশা করে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নারী-পুরুষের ওপর, তার সন্তানের ওপর ও তার ধন-সম্পদের ওপর অনবরত বিপদ-আপদ লেগেই থাকে।


২.  প্রতিদান লাভ : মুমিন তার ওপর প্রতিত দুঃখ-কষ্টের কারণে আল্লাহর কাছে প্রতিদান প্রত্যাশা করে। কেননা হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়বস্তু দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু (প্রতিদান) নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২৪)


সবশেষে মহান আল্লাহ তাআলার সাথে সে পাপমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৯)


৩. তকদীরে বিশ্বাস : মুমিন বিশ্বাস করে যে জীবনের সুখ ও দুঃখ সব কিছুই মহান আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘দুনিয়াতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে সমস্ত বিপদ আসে আমি তা সংঘটিত করার আগে তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহর পক্ষে তা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২২)


৪. মহান আল্লাহ জুলুম করেন না : বান্দার জন্য দুঃখ-কষ্ট নির্ধারণ করে আল্লাহ তাঁর প্রতি জুলুম করেননি; বরং এতে নিশ্চয়ই কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে যে, ‘আপনার প্রতিপালক! তাঁর বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৪৬)


৫. ধৈর্যের ফল সুমিষ্ট: দুঃখ-কষ্টে মুমিন যদি ধৈর্য ধারণ করে, তবে মহান আল্লাহ তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ১০)


৬. নিজের কর্মই দায়ী: পার্থিব জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদের জন্য বান্দার নিজের কর্মই বেশি দায়ী।


মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি মার্জনা করে দেন।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৩০)


৭. কল্যাণের আশা করা : পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদ যা মানুষ পছন্দ করে না, তার পিছনেও কোনো কল্যাণ থাকতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)


৮. সুদিন দূরে নয় : আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের কষ্টে রাখতে চান না; বরং তিনি তাদের জীবন সহজ করত চান। ফলে দুর্দিনের পর সুদিন আসবে এটাই মুমিনের বিশ্বাস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি সহজতা চান, তিনি তোমাদের প্রতি কঠোরতা চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)


অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে যে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আছে স্বস্তি।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৫)


৯. বিপদ-আপদ অস্বাভাবিক নয় : বিপদ-আপদ মানবজীবনেরই অংশ। পৃথিবীর সব মানুষেরই কিছু না কিছু দুঃখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তাদেরও লেগেছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ মুমিনদের জানতে পারেন।’ (সুরা আলে ইরমান, আয়াত : ১৪০)


১০. আম্বিয়া সকলও কষ্ট ভোগ করেছেন : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ আম্বিয়া সকল। পৃথিবীতে তাঁরাও অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন। তাই বিপদে পতিত হওয়ার অর্থ হতভাগ্য হওয়া নয় বা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়। যেমন হযরত ইয়াকুব (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনঃস্তাপে ক্লিষ্ট।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৪)


আর আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এবং স্মরণ কোরো আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)


বিপদ-আপদে মুমিনের করণীয়


মুমিন যখন বিপদ-আপদে পতিত হবে, তখন নিচের কাজগুলো করবে।


১. মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু হওয়া : কোনো সংকটে পড়লে মুমিনের প্রথম কাজ হলো আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আপতিত হলো তখন তারা কেন বিনীত হলো না? অধিকতর তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের চোখে শোভন করেছিল।’ (সুরা আনআম, আয়াত :  ৪৩)


২.মহান আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা : বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির ব্যাপারে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘আমি বান্দার সঙ্গে আমার প্রতি তার ধারণার অনুরূপ আচরণ করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৫০৫)


৩. অবিরাম দোয়া করা : অবিরাম দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুমিনের সকল বিপদ ও সংকট দূর করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘বরং তিনিই আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ দূর করেন।...’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)


৪. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা : ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা বিপদ ও দুশ্চিন্তা হতে মুক্তি দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২)


৫. ধৈর্যধারণ করা : যেকোনো বিপদ- আপদে মুমিন কখনোই ধৈর্যহারা হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত চমৎকার। তার জন্য শুধুই কল্যাণ—কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। যদি তার জন্য কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে তবে সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্যধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)