অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূর শরীরে আগুন দিয়েছে বখাটেরা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৩৭ অপরাহ্ন, ২৮শে নভেম্বর ২০২৩


অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূর শরীরে আগুন দিয়েছে বখাটেরা
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুর শহরের কাগদী গ্রামে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক গৃহবধূর শরীরে আগুন দিয়েছে বখাটেরা। ওই গৃহবধু রাত নয়টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে জোর করে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায় বখাটেরা। 


সেখানেই হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়দের সহায়তায় ওই গৃহবধুর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচলেও শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। 


শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাতে কাগদি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়। তবে পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।


ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত ৩ মাস যাবৎ প্রতিবেশী ইদ্রিস পাহাড়ের ছেলে রাসেল পাহাড় ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারে টাকার লোভ দেখিয়ে একই গ্রামের মৃত ইউনুস সরদারের মেয়ে হিমাকে উত্যক্ত করতো। রাসেলের কু-প্রস্তাবে হিমা রাজি না হওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয় সে। 


এরই জেরে শনিবার রাত নয়টার দিকে হিমা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে হিমাকে জোর করে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায় রাসেল ও তার এক সহযোগী। হিমা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেখানেই হিমার হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এতে তার কোমরের নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত পুড়ে যায়। 


এসময় হিমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে পালিয়ে যায় তারা। তাৎক্ষণিক পাশের পুকুরে লাফ দিয়ে প্রাণে বাঁচেন হিমা। ওই রাতেই স্থানীয়দের সহায়তার হিমাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনরা।


শরীয়তপুর সদর হাসপাতে চিকিৎসাধীন হিমা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো রাসেল। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে খারাপ কথা লিখে টাকা দেয়ার কথা বলে তার বাড়ি যেতে বলতো। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি। এতে ক্ষিপ্ত হয় সে। 


শনিবার রাতে আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রাসেল ও তার সহযোগী, দুজন মিলে আমার মুখ চেপে ধরে বাথরুমের পিছনে থাকা বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। 


এসময় তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা আমার হাত-পা বাঁশের সঙ্গে বেঁধে জামায় আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি চিৎকার দিলে আমার মা-বোন ছুটে আসে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওরা দুজন পালিয়ে যায়। আমি জীবন বাঁচাতে পাশে থাকা পুকুরে ঝাঁপ দেই। আমি তাদের বিচার চাই।


হিমার বোন ইভা আক্তার জানায়, হিমার কান্না কান্না শুনে দৌড়ে বাহিরে যাই। গিয়ে দেখি আমার বোনের শরীরে আগুন জ্বলছে। কোন উপায় না দেখে বোনকে পানিতে ঝাঁপ দিতে বলি। তার কোমরের নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ পুড়ে গেছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। 


শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) শামীম আব্দুল্লাহ বলেন, শনিবার রাতে আগুনে পোড়া অবস্থায় হিমা আক্তার নামে এক রোগী ভর্তি হয়। তার শরীরের ১০ শতাংশ অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সে এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় রয়েছে। 


শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহাবুবুল আলম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।


আরএক্স/