দারিদ্রতা না প্রাচুর্যতা, সন্তানকে কী শেখাবেন?
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:০৬ অপরাহ্ন, ৩০শে নভেম্বর ২০২৩
আপনার সন্তানকে কী শেখাবেন? দারিদ্রতা না প্রাচুর্যতা ? বেশকিছু দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নিয়ে চলছে আলোচনা। যেখানে একপক্ষের মতামত, সন্তানকে প্রাচুর্যতা শেখান তো আরেক পক্ষের মতামত, সন্তানকে দারিদ্রতা শেখান। দুই পক্ষই বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরছেন নিজ নিজ মতামতের সমর্থনে। তবে আপনি কী ভাবছেন? সন্তানকে আসলে কী শেখাবেন?
পিতা-মাতাকে আচরণে সংযত হতে হবে
পিতা-মাতাই সন্তানের জন্য প্রথম শিক্ষক, এর মানে এই নই যে কাগজে-কলমেই শেখাতে হবে। সন্তান মূলত তা-ই শিখবে, যা সে আপনাদের আচরণে দেখতে পাবে। তাই মা এবং বাবার আচরণে সংযত হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাচ্ছার সামনে যদি মিথ্যা বলেন, তাহলে আপনার বাচ্ছা মিথ্যাকেই সহজভাবে গ্রহণ করবে এবং সেও মিথ্যা বলতে শিখবে। আপনার সন্তান হলো আপনার আয়না। পিতার প্রতিবিম্বই তার মাঝে প্রতিফলিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সবার আগে নিজের দিকে লক্ষ্য করুন। নিজের ভেতরে এমন কিছুর অভ্যাস রাখবেন না, যা নিজ সন্তানের মধ্যে দেখতে চান না।
দারিদ্রতা নাকি প্রাচুর্যতা
অভাব আর আভিজাত্যের লড়াই চলবেই। তবে সবার প্রথমে সন্তানকে শেখাতে হবে, এই দুই জিনিস আসলে কী? মূলত অভাব কিংবা আভিজাত্য থাকে মানুষের আচরণে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন যে, অনেক আছে কিন্তু তারা সন্তুষ্ট নন। আবার অনেকেই অল্পতে খুশি থাকতে শেখেন। সম্পদের হিসাবে একজন ধনীর থেকে আরেকজন ধনী, এভাবে অনেক পাওয়া যাবে। আবার গরিবের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই। তবে যিনি যে অবস্থানে আছেন, সেখান থেকে কতটা সুখী বা অভাবমুক্ত, সেটাই আসল বিষয়। তাই অর্থের অভাব হলেও অন্তরের আভিজাত্য যেন নষ্ট না হয়, নিজ নিজ সন্তানকে সেটাই শেখান।
ইতিবাচকতা নাকি নেতিবাচকতা
সন্তানকে একজন ইতিবাচক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করুন। এই শেখানো মানেই তো সিলেবাস মেনে শেখানো নয়, প্রথমেই যেমনটা বলেছি, এটি থাকতে হবে আপনার স্বভাবে। মা-বাবার মধ্যে ইতিবাচকতা, অন্যের যেকোনো খুশির খবরে আনন্দিত হওয়া, অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া, ক্ষমা করতে জানা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্গিুলো লক্ষ্য করলে শিশু তা-ই শিখবে। সন্তানের মধ্যে কোনো নেতিবাচকতা গড়ে উঠতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে সতর্ক করতে হবে। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে তাকে অবগত করতে হবে। একজন ইতিবাচক চিন্তার মানুষ শুধু আপনার না এই পৃথিবীরও সম্পদ , এ ক্ষেত্রে সে হোক ধনী কিংবা দরিদ্র।
নির্লোভ করে গড়ে তুলুন
সন্তানকে একজন নির্লোভ মানুষ হিসেবে দেখতে চাইলে সবার আগে নিজেকে নির্লোভ হতে হবে। আপনি যদি অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করেন,এমনকি কর্মজীবনে অসৎ হন, যদি ঘুষ-সুদ ইত্যাদি গ্রহণ করেন, যদি গরিবের সম্পদ দখল করেন, যদি আত্মীয়ের হক নষ্ট করেন, আপনজনদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনার সন্তানের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো ফলাফল আশা করা ভুল হবে। নিজে যে পথে হাটবেন, সন্তান তো সেই পথেই হাটবে। তাই নিজের পথটা সরল রাখুন। তখন সন্তানই আপনার জন্য সম্পদ হয়ে উঠবে।
বিনয়ী ভাব এবং ক্ষমা করা শেখান
একজন ভালো মানুষের আচরণে থাকে বিনয়, থাকে ক্ষমা করার মতো উদারতাও। এই দুই শিক্ষাই সন্তান যেন আপনার কাছ থেকে পায়। তাকে শেখান, ঘৃণার চেয়ে ক্ষমা সুন্দর হয়, আর আঘাতের চেয়ে ভালোবাসা। আর সুন্দর কিছু স্বভাবে থাকলে সেই মানুষই সমাজে সবচেয়ে সুন্দর ফুল হয়ে ফুটে থাকে বা সমাজকে আলোকিত করে। সেই সৌরভে সুবাসিত হয় আরও অনেকেই। আপনার মধ্য থেকেই আপনার সন্তানের মাঝে অব্যাহত থাকুক এই ভালোবাসার ধারা।
প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কঠোর হতে শেখান
শুধু ফুলের কোমলতা নয়, সন্তানকে শেখান প্রয়োজনে লৌহ সমান কঠিনও হতে। ফুল ভেবে কেউ যদি তাকে পায়ে দলতে আসে, তাকে যেন সেই সুযোগ না দেওয়া হয়, সন্তানকে এটুকুও শেখাতে হবে। সমাজে চলার ক্ষেত্রে কখন কোমল হওয়া প্রয়োজন এবং কখন তাকে কঠিন হতে হবে, তাকে এটা বুঝতে শেখান। পরিস্থিতি বুঝতে পারা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক বড় গুণ এটা। এই স্বভাব আপনার সন্তানের মধ্যে গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চিন্ত হতে পারবেন অনেকটাই।