২ ডিসেম্বর ১৯৭১

রণাঙ্গন ছেড়ে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:০৮ অপরাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২৩


রণাঙ্গন ছেড়ে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী
ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা বাহিনী গেরিলা আক্রমণ ছেড়ে সম্মুখ রণাঙ্গনে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুজিবনগর সরকার অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের বিজয় আসন্ন।


পরাজয় আসছে জেনে চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংস্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজি তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। তবে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের কাছে হানাদার বাহিনীর সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে থাকে এবং দিশাহারা হয়ে তারা পিছু হটতে থাকে।



২ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমণ করলে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে এবং আখাউড়া রেলস্টেশনে তখনো চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানিরা এই যুদ্ধে ট্যাংক ব্যবহার করেছে। সম্মুখযুদ্ধে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া এলাকা এবং সঙ্গে সঙ্গে আখাউড়া সংলগ্ন আগরতলা শহরও কেঁপে ওঠে। কসবা থেকে মুকুন্দপুর আর আখাউড়া থেকে উজানিসার পর্যন্ত তিন দিনের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানিদের ধরাশায়ী করে ফেলে। কুমিল্লা-সিলেট সিএন্ডবি রোডের সংযোগ মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ঢাকা রেল যোগাযোগও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিন দিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং অনেক পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়েছে।


সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সমসেরনগর বিমানবন্দর মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ দখল করে নেয়। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকিস্তানি সৈন্যদের শক্ত অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে একযোগে আক্রমণ করে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যকে হতাহত করতে সক্ষম হয় এবং এখান থেকে বেশ কিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী।


এদিনে চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা হানাদারদের সঙ্গে খণ্ড খণ্ড ভাবে সম্মুখযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।


সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভারতীয় বাহিনী। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থান পঞ্চগড়ে ক্ষিপ্রগতিতে আকস্মাৎ আক্রমণ করলে পঞ্চগড় মুক্ত হয়য় এবং ঠাকুরগাঁও বিজয়ের পথে এগোতে থাকে।


খুলনা অঞ্চলে লে. জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা আগেই শত্রুমুক্ত করেছিল এবং পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটিয়ে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রূপসা নদীর ওপারে খুলনার কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানা মুক্ত করে এবং টাঙ্গাইল আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে।


একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা রাজধানী ঢাকাকে দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করে করে ঢাকার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে।


জেবি/এজে