ঐতিহ্য ও সংস্কতি মৃৎশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:০৮ অপরাহ্ন, ২রা ডিসেম্বর ২০২৩


ঐতিহ্য ও সংস্কতি মৃৎশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে
ছবি: জনবাণী

স্বল্প মুলধন এবং স্বল্প পরিসরের শিল্প, কুটির শিল্প যা কুটিরে বসে তৈরি করা যায়। এ কুটির শিল্পের সাথে গ্রাম বাংলার মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। আর এই পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে মৃৎশিল্পের হস্ত শিল্পীরা।


টাংগাইলের মধুপর চাড়ালচানি ও গোপালপুর কালিবাড়ি বাস করেন  প্রায় দুইশতাধিক কুমার সম্প্রদায়ের। এরা পালবংশ নামে পরিচিত। কথিত  আছে  প্রায় দুই থেকে আড়াইশত বৎসর পূর্ব থেকে এই মৃৎশিল্প চলে আসছে। এক সময় এ অঞ্চলে এই শিল্পের খ্যাতি  ছিল কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামাইন এবং বিশেষ করে সিলভারের রান্নার হাঁড়ি এবং কড়াই প্রচুর উৎপাদনের ফলে মৃৎশিল্পের চাহিদা  কমে যাচ্ছে। 


জানা যায়, অতিতে এমন দিন ছিল গ্রামের মানুষ মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, থালাবাসন, কড়াই, সরা, মসলার পাত্র, মাছ ধোঁয়ার গামলা, ধানবীজ সংগ্রহের জালা-কোলা ইত্যাদি মাটির উপকরণ ব্যবহার করত। 


এছাড়াও নানারকম পিঠা তৈরির যেমন-ভাপা পিঠার পাতিল,চিতই পিঠার কড়াই,মুড়ি খই ভাজার ঝাঝরা ব্যবহৃত হতো। এখন এসব খুব  কম ব্যবহার  হয়। যান্ত্রিকতার ভীরে মানুষ হাতে তৈরি করতে  চায় না।সহজে  বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।


সরজমিনে দেখা গেছে আগের মতো চাহিদা না থাকায়  কুমাররা তৈরি করা কমিয়ে দিয়েছে মাটির উপকরণ। আবার কেউ কেউ পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য  রক্ষার্থে  স্বল্প পরিসরে তৈরি  করছে কিছু পণ্যসামগ্রী।প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, চীনামাটি, মেলামাইনসহ আধুনিক  পণ্যসামগ্রী বাজারে  ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার  মাটির উপকরণ  কেউ ব্যবহার করতে চায়  না, বিক্রিও আগের মতো  হয়না। মাটির  স্বল্পতা,  মজুরি  ও খরচ যে পরিমানে পরে সে অনুযায়ী  দাম পাওয়া যায় না। নেই  সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা । তাই  অনেকে  বেছে নিচ্ছে অন্য  পেশা।


আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মৃৎশিল্পে,মাটির  উপকরণ  সেজেছে  নতুন  সাজে, স্থান পেয়েছে  গৃহসজ্জা, চা -কফি হাউজ এবং রেস্তোরাঁয়। ফুলের  টপ, ফুলদানি, হাঁড়ি পাতিল  সাড়া পরেছে ব্যপক। চা-কফি হাউজে মাটির  কাপ চলছে। সাড়া পরেছে রেস্তোরা গুলোতেও, হালিম এবং  নানাধরণের  খাবার পরিবেশন করা হয় সৌখিন মাটির পাত্রে। মৃৎকারিগররা নৈপুণ্যের ছোঁয়া দিয়েছে।


এখন মানুষের দিন দিন পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিত্যনতুন রুপ দিয়ে মৃৎশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। তাহলে বলা যায় এই শিল্পের কারিগররা যুগোপযোগী পণ্যসামগ্রী তৈরি  করে গ্রামীণ  প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেরাও স্বাবলম্বী হতে পারে। শুধু  দেশে নয়, বিশ্ববাজারে  পণ্য রপ্তানি করেও নিজেদের  অবস্থান সুদৃঢ়  করতে পারে।


মধুপুর চাড়ালচানির বংশাল কুমার (৫৫) তিনি বলেন, আগের দিনে চুলায় সবসময় জ্বলতেই থাকতো ডেলিভারি দিতে হিমশিম লেগে যেতো এখন তেমন চাহিদা নেই বলেলই চলে।


গোপালপুর কালিবাড়ির বাসিন্দা উদয় পাল(৬০) জানান,তার বাপ- দাদারা  যুগ যুগ  ধরে  এ পেশায় ছিল। বিভিন্ন  জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ  করে  নানাধরণের  মাটির সামগ্রী  গ্রামে গ্রামে, হাটে বাজারে  বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ  করত।  কিন্তু  কালের বিবর্তনে  এসব  পণ্য  এখন আর আগের  মতো কেউ  ব্যবহার  করে না।


আরো একজন কারিগর  আল্লাদি পাল (৯০) বলেন,আগে গ্রামগঞ্জে হাটবাজারে  খুব চাহিদা  ছিল  মাটির  জিনিসের। এখন আর সেই চাহিদা  নেই । শুধু  মাটির পাট বা রিং এর চাহিদা আছে।  এই পরিস্থিতিতে আমাদের  জীবন চলা কঠিন  হয়ে পরেছে।


গ্রাম বাংলার  ঐতিহ্য মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে  রাখতে  হলে মাঝে মাঝে মেলার বসাতে হবে,বিভিন্ন  স্থানে এসব পণ্যের প্রদর্শনী করা প্রয়োজন। তাছাড়া সরকারি  পৃষ্ঠপোষকতার  মাধ্যমে  ক্ষুদ্র ও কুটির  শিল্পের  আওতায় আনা দরকার । এখন  এসব পণ্য  বিদেশেও রপ্তানি  হচ্ছে  তাই  গ্রামের  মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৃৎশিল্পের নতুন  ধারার  অংশগ্রহণ  করানো প্রয়োজন।


আরএক্স/