কমলা চাষে সফল গোবিন্দগঞ্জের আব্দুল হালিম
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:১৯ অপরাহ্ন, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৩
কয়েক বছর আগে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শ্রমিক হিসেবে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নেন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের আব্দুল হালিম নামের এক যুবক। কিন্তু দালাল দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে বিদেশে যেতে পারেননি। বিদেশে যেতে না পেরে অনেকটা ভেঙে পড়েন তিনি। এরইমধ্যে হঠাৎ একদিন ইউটিউবে নজরে আসে বিদেশি জাতের কমলা চাষে সফল হওয়া ভিডিও। পরে এক বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী ২০১৯ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে নিজেদের পুকুরপাড়ের তিন বিঘা জমিতে শুরু করেন দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ। কমলা চাষে এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী আব্দুল হালিম নামের সেই যুবক। স্বপ্ন বুনছেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার।
আব্দুল হালিম এর বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের বাল্যা গ্রামে, তার বাবার নাম আব্দুস সামাদ। বর্তমানে তার কমলা বাগানে গাছের সংখ্যা ২ শতাধিকের মতো। গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা লেবু। এটা রোপণের ২ বছর পর হতে কমলা ধরা শুরু করে। এর পরের বছর ২০২২ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ৩ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেন এ যুবক।
তার বাগানের কমলার স্বাদ-রস তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এ খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়। আবার ওই ২০০ গাছে চলতি বছর উৎপাদিত কমলা বিক্রি হয়েছে প্রায় সোয়া লাখ টাকার বেশি। আরো ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করার মতো কমলা বাগানে আছে।
আব্দুল হালিমের বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকেই। পাহাড়ি ফল হিসেবে কমলার পরিচিতি হলেও সমতল এলাকায় চাষ হওয়ায় অনেকের ভিতরেই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ বাগানে বারি-২, চায়না-থ্রি ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ হয়।
সেখানখার স্থানীয়রা জানান, যে সময় আব্দুল হালিম কমলা চাষ শুরু করেন; তখন তার কাজটিকে অনেকেই পাগলামি বলে ধারনা করেছেন। ও্ই সময় তার কাজটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও গাছে কমলা দেখে সবাই অভিভূত হয়। আব্দুল হালিম এখন এলাকার সবার অনুকরণীয় আদর্শ কমলা চাষি। তার এমন সফলতায় অনেক বেকার যুবক কমলা চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছে।
এ যুবক আরো বলেন, ‘আমার বাগানে কমলার পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের গাছও আছে। কমলার বাজার ভালো থাকায় চাষের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। আমার বাগানে বারি-২, চায়না-থ্রি ও দার্জিলিং জাতের ২ শতাধিক গাছ আছে। ২০২২
সালে এখান থেকে বেশ ভালোই লাভ হয়েছে।’
বাগান দেখতে আসা শক্তিপুর গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘আমাদের উপজেলার মাটিতেও যে কমলা চাষ করা যায়, তা এখানে এসেই দেখলাম। এখানকার কমলা বেশ মিষ্টি আর রসালো। আমি নিজেই আমার জমিতে কমলা চাষ শুরু করবো।’
দর্শনার্থী সানোয়ার হোসেন জনান, ‘এই কমলা বাগান দেখে আমি উৎসাহ পেয়েছি। এভাবে কমলা চাষ শুরু করলে আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। এতে দেশের অর্থ যেমন বেঁচে যাবে; ঠিক তেমনই টাটকা ফলও পাওয়া যাবে।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ বলেন, ‘কমলা চাষে হালিম যে সফলতা দেখিয়েছেন, তা কৃষি বিভাগের জন্য গৌরবময়। আগামীতে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে আরও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। অন্য কেউ যদি কমলা চাষে আগ্রহী হন, তাহলে তাকেও সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
গাইবান্ধা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘কমলা চাষ উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় নতুন এক সম্ভাবনার তৈরি হয়েছে। কমলা চাষের এখনও পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আব্দুল হালিমের কমলা বাগানে কৃষি বিভাগের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
এমএল/