বাংলাদেশে আরব আমিরাতের বড় বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বাংলাদেশে আরব আমিরাতের বড় বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য, আইসিটি ও আইটিইএস খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক বাজার এখন উন্নত বেসরকারি ইকুইটি ও ফিন-টেক সমাধান দিতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় ১২ বছর আগে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এজন্য আমাদের অংশীদার হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাদের।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার অবস্থানস্থলের ভার্চুয়াল মিটিং রুম থেকে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আয়োজিত এক যৌথ ব্যবসা পরিষদে (জেবিসি) বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষনীয় সুযোগ লাভের দেশ।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বিশ্ব-বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের উৎপাদন উপকরণসমূহকে যুক্ত করা। আমাদের জনগণ যুবক, উদ্যমী ও উচ্চাভিলাষী। কৃষিতে বর্তমান সরকারের ব্যাপক ও নানা ধরনের উদ্ভাবন, কৃষি-সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশের শ্রমাশ্রয়ী আয় অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ চমৎকার একটি ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং সকল প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ রুটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আমরা জনবহুল ও ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলের মিলনস্থলে রয়েছি। আমাদের একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো রয়েছেই। পাশাপাশি আমাদের নিকটবর্তী অনেক দৃশ্যত সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।

তিনি বলেন, এসব সুবিধা বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে এবং আমাদের দেশ এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পণ্য উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আমাদের নীতি হচ্ছে, ‘সকলের সাথে মিত্রতা, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। এ নীতিই আমাদের মুক্ত-বাজার বাণিজ্য ও একটি স্বাধীন অর্থনীতির সব প্রতিবন্ধকতা থেকে পৃথক করে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। আমরা চামড়া, পরিবেশ-বান্ধব পাট ও পাটজাত দ্রব্য, খাদ্য, আইসিটি ও আইটিইএসে ভালো ও দক্ষ। আমাদের ৬৫০ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার রয়েছে। বাংলাদেশ উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের জন্য পূর্ণ স্পেকট্রাম পাচ্ছে। একটি বিষয় না বললেই নয়, বাংলাদেশের জনশক্তি আমাদের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে- তারা কঠোর পরিশ্রমী, সাশ্রয়ী শ্রমিক এবং দ্রুত কাজ শিখতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আমাদের হাই-টেক পার্কগুলো এখন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে তাদের নিজ দেশ হিসেবে বেছে নিতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ হিসেবে তুলে ধরতে নীতিগত ও অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্র-বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং এ ধরনের মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে অবকাঠামোগত বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। এসব প্রকল্প তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থানের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ করিডোরের অর্থনৈতিক স্থানগুলোকে সংযোগ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন খাদ্য, আর্থিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি স্তরে আমাদের যোগাযোগ বাড়াচ্ছি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগকারীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশে ব্যবসায় বিদেশি মালিকানার জন্য কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতাও নেই। অধিকন্তু, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী সঞ্চয় রয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তাদের দেশে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের বাধা নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি- সরকার নারী ক্ষমতায়ন সুসংহত করেছে এবং নারীরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমানতালে বিচরণ করছে। আমাদের দেশে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অংশীদার। মূলধারায় নারী-পুরুষের সমান পদচারণা সব ক্ষেত্রে আমাদের শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এসডিজি ২০৩০-এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। বিশ্বের সব পিছিয়ে পড়া বন্ধুদের সহায়তায় আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি, পরিচালক ও প্রশাসনিক সেবা প্রদানকারী এবং আইসিটি ডেভেলপাররা বিশ্বের যেকোনো স্থানে আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাতে আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি দেশে বৈশ্বিক মহামারিকালেও অর্থনীতি সচল ছিল, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। স্পষ্ট দৃষ্টি, দূরদর্শী পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমাদের কঠোর-পরিশ্রমী জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াকু উদ্যোক্তাদের কারণে বাংলাদেশের এ টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আজ, বাংলাদেশ একটি ‘উন্নয়নের জাদু’ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ২০৩৬ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘উন্নয়ন মডেল’ আরও উন্নয়নের জন্য একটি মজবুত ভিত স্থাপন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা খুব শিগগিরই আমাদের ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।

এসময় দু’দেশের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য এফবিসিসিআই এবং ইউএই চেম্বার্স অব কমার্স এ্যন্ড ইন্ডাষ্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা স্বারক সাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন এবং আবু ধাবি চেম্বার অব কমার্স এ্যন্ড ইন্ডাষ্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই নিজ নিজ পক্ষে স্বারকে স্বাক্ষর করেন। সূত্র : বাসস

ওআ/