গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশে উন্নয়ন: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘টানা ১৩ বছর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশকে কেউ আর পেছনে টানতে পারবে না। ’৭৫-এর পর একটা কালো অধ্যায় ছিল, সেই কালোমেঘ কেটে গেছে। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
শুক্রবার (১১ মার্চ) সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমিরাত সফরকালীন আবুধাবির আবাসস্থল থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ শুনলে সবাই একটা মর্যাদার চোখে দেখে। সবাই সমীহ করে। বাংলাদেশ আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। এটা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে, কারও মুখাপেক্ষী হয়ে যেন চলতে না হয়।’
‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ বাংলাদেশকে আর কখনো কেউ পেছনে টানতে পারবে না। একটা কালো অধ্যায় ৭৫- এর পর ছিল, এই কালোমেঘ কেটে গেছে। এখন আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনায় আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের পাসপোর্টটা পর্যন্ত আটকে রেখেছিল। প্রবাসে রিফিউজি হিসেবে আমাদের থাকতে হয়েছে। একদিকে পরিবারের শোক, অন্যদিকে এই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিচয়টা পর্যন্ত দিতে পারিনি।
এ সংবর্ধনায় রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ যতই সংকট আসুক না কেন, বাংলাদেশ তা মোকাবেলা করতে পারবে।
দেশের জনগণ ও প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যারা প্রবাসী আপনাদের কাছ থেকেও আমরা সমর্থন পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি। সেই কারণেই আজকে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসবো। আজকে অন্তত এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে, স্বীকৃতি পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। আজকে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যে, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সরকার থেকে তাদের ভূমি ও জমি নিয়ে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছে। তাদের জীবনটাই পাল্টে যাচ্ছে। তাদের এখন অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না। আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাজেই প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নত করার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর পুষ্টি নিরাপত্তাও আমরা দিচ্ছি। আমাদের আয়ুষ্কালও বেড়ে এখন ৭২ থেকে ৭৩ বছরে দাঁড়িয়েছে। এখন হতদরিদ্র ভাবটা মানুষের মাঝে নেই, থাকবেও না। তার জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। একদিনে এটা সম্ভব না। একটা গাছ লাগালেও ফল খেতে সময় লাগে।’
এ সময় মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলায় দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার সময় আমি আহ্বান করেছিলাম যে যা পারেন চাষ করুন, ফসল ফলান। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যে কোন দুর্ঘটনা বা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বব্যাপী, খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে। কিন্তু উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা নিজেরা করতে পারলে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
এর আগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাস আল খাইমা শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল এন্ড কলেজের নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কন্যা শেখ হাসিনা। আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য যে কোন সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রাস আল খাইমার প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি তাজ উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান।
দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট প্রান্তে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আবুধাবি প্রান্তে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, এফবিসিআইআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর।
ওআ/