সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ-মেজর হাফিজসহ বিএনপির ৭০ জনের সাজা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৪ অপরাহ্ন, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৩


সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ-মেজর হাফিজসহ বিএনপির ৭০ জনের সাজা
প্রতীকী ছবি

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমসহ ৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। 


বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পাঁচটি থানার মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক চারটি আদালত এসব কারাদণ্ড দেন। 


বিএনপির আলতাফ-মেজর হাফিজের ২১ মাসের সাজা


পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মো. হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ তিনজনের ২১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ড প্রাপ্ত অপর আসামি হলেন- সাবেক বিএনপি নেতা ও বিএনএমের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মো. হানিফ।


আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী পৃথক দুই ধারায় এ কারাদণ্ড প্রদান করেন। তাদের দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারায় তিনমাস ও দণ্ডবিধি ৪৩৫ ধারায় দেড় বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। তাদের বয়স বিবেচনায় এ কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।


অপরদিকে মামলার অন্য আসামি এমএ আউয়াল খান, মো. রাসেল, মঈনুল ইসলাম, মো. বাবুল হোসেন ওরফে বাবু ও মো. আলমগীর হোসেন ওরফে রাজুকে পৃথক দুই ধারায় সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।


তাদের দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারায় ছয়মাস ও দণ্ডবিধি ৪৩৫ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তাদের আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে।


এছাড়া মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১১ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমএ কাউয়ুম, মো. দুলাল,  তোফায়েল আহম্মেদ ওরফে লিটন,  মো. জাহাঙ্গীর শিকদার ওরফে বাবু, আরিফুল ইসলাম, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. সামসুল হক মিয়াজী, মো. বিপ্লব, মো. খুরশিদ আলম মমতাজ, মো. মোশারফ হোসেন ও মো. মাহাবুব। 


গত ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার  ২৮ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত।


মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা ২০১১ সালের ৪ জুন গুলশান থানাধীন মহাখালী ওয়ারলেস গেট পানির ট্যাংকির সামনে রাস্তার ওপর অবৈধ সমাবেশ থেকে পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং তাদের আক্রমণ করেন। রাস্তার চলাচলরত গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের পর গুলশান থানার এসআই কামরুল হাসান তালুকদার আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল এ মামালায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার বিচার চালাকালীন সময়ে আদালত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন।


জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর সকালে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ওই দিনই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন পুলিশ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।


শাহবাগ থানার মামলায় ১৩ নেতাকর্মীর দুই বছরের সাজা


সাত বছর আগে রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২২ জনের বেকসুর খালাস দেন আদালত। 


সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- দোলোয়ার হোসেন শান্ত, মো. সেলিম মোল্লা,  মো. স্বপন বেপারী, নাজমুল হাসান, মো. লুৎফর রহমান, মো. আরাফাত, মো. কামাল হোসেন, মো. আ.রহিম, আবুল খায়ের, মো. মহি উদ্দিন, মো. সোলায়মান আলী, জাহিদুল ইসলাম ও মো. মোখলেছ মিয়া। 

২০১৭ সালের জুনে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।


আরও পড়ুন: বিএনপির আলতাফ-হাফিজের ২১ মাসের কারাদণ্ড


উত্তরখান থানার মামলায় ৩২ জনের সাজা


রাজধানীর উত্তরখান থানায় ২০১৮ সালে নাশতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীকে দণ্ডবিধির পৃথক দুই ধারায় ২০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।


সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মোঃ আহসান হাবীব মোল্লা, মোঃ রায়হান, ল মোঃ সেলিম মোল্লা, মোঃ আনোয়ার হোসেন বকুল, মোঃ নোয়াব আলী খান, মোঃ ফায়েজুল ইসলাম সবুজ, সৈয়দ সুজন আহমেদ, মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ওরফে মিঠু, জাহাঙ্গীর আলম বেপারী, মোঃ কিরণ সরকার, সরকার রফিকুল ইসলাম মুকুল, মোঃ রাসেল মোল্লা, মোঃ খোকন পারভেজ হিরণ, মোঃ ইয়াকুব আলী, মোঃ আরিফ উদ্দিন এনামুল, মোঃ আব্দুর রশীদ ভূইয়া, মোঃ আসাদুল হক শুভ, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ গোলাম মোস্তফা, মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ রস্তম আলী, শরীফুল আলম সবুজ আলম, মোঃ নুরুজ্জামান হাওলাদার ওরফে সোহেল, মোঃ সাব্বির সরকার, মোঃ হাবিবুর রহমান দুদু মিয়া, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ মমতাজ উদ্দিন, লুৎফর রহমান খোকন, মোঃ হারুন অর রশিদ হারুন, মোঃ জাকির হোসেন, হাফিজুল ইসলাম ওরফে সবুজ।


মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতা করার উদ্দেশ্যে এবং কর্তব্যরত পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদান করে ককটেল বিস্ফোরণ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে আহত করে। পরে উত্তরখান থানার এসআই মো মনিরুজ্জামান আকন্দ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারচলাকালীন এ মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।


আরও পড়ুন: আবারও পেছালো মির্জা আব্বাসের দুদকের মামলার রায়


শেরেবাংলা নগর ও পল্টন থানার মামলায় ১৭ জনের সাজা


এক দশক আগে করা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর ও পল্টন থানার দুই পৃথক মামলায় বিএনপির ১৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান। 


এর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীকে দুই ধারায় ১৮ মাস ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। 


মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর হরতালে গাড়ী ভাংচুরের অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলাটি করে পুলিশ। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার বিচার চলাকালে ৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। 


এদিকে পল্টন থানার এক দশক আগের এক মামলায় বিএনপির ৫ জনকে দুই ধারায় ছয়মাসের সাজা দিয়েছেন একই আদালতের বিচারক। এছাড়াও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর ৩ আসামিকে খালাস দেয়া হয়। 


মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পল্টন থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চার্জগঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে ৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।


জেবি/এসবি