জাবির মুক্তমঞ্চে রবি ঠাকুরের 'রক্তকরবী'
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৩৩ অপরাহ্ন, ৪ঠা জানুয়ারী ২০২৪
সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সেলিম আল-দীন মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপক-সাংকেতিক নাটক রক্তকরবী।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে বুধবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন পল্লব কুমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২২ ফেব্রুয়ারী
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্নাতক (সম্মান) জাবি ৫০তম ব্যাচের ২য় পর্বের পরীক্ষা প্রযোজনা হিসেবে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়েছে।
রক্তকরবী'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রূপক-সাংকেতিক নাটক। মানুষের প্রবল লোভ কীভাবে জীবনের সমস্ত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে নিছক যন্ত্রে ও উৎপাদনের উপকরণে পরিণত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কী রূপ ধারণ করছে তারই রূপায়ণ এই নাটকে। নাটকটি বাংলা ১৩৩০ সনে রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ১৩৩১ সনে প্রবাসীতে প্রকাশিত হয় নাটকটি।
যক্ষপুরীর রাজার রাজধর্ম প্রজাশোষণ, তার অর্থলোভ দুর্দম। তার সে লোভের আগুনে পুড়ে মরে সোনার খনির শ্রমিকরা। রাজার দৃষ্টিতে খনি শ্রমিকরা মানুষ নয়, তারা স্বর্ণলাভের যন্ত্রমাত্র, তারা যন্ত্রকাঠামোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র্র অঙ্গ মাত্র, মানুষ হিসেবে তাদের কোনো মূল্য নেই। এখানে মনুষ্যত্ব, মানবতা এ যন্ত্রবন্ধনে পীড়িত ও অবমাননায় পতিত। জীবনের প্রকাশ যক্ষপুরীতে নেই। জীবনের প্রকাশের সম্পূর্ণরূপ-প্রেম ও সৌন্দর্য, 'নন্দিনী' চরিত্রটি তার প্রতীক। এ নন্দিনীর আনন্দস্পর্শ যক্ষপুরীর রাজা পাননি তার লোভের মোহে, সন্ন্যাসী পাননি তার ধর্মসংস্কারের মোহে, মজুররা পাননি অত্যাচার ও অবিচারের লোহার শিকলে বাঁধা পড়ে, পণ্ডিত পাননি দাসত্বের মোহে। যক্ষপুরীর লোহার জালের বাইরে প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক নন্দিনী সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকল; এক মুহূর্তে মুক্ত জীবনানন্দের স্পর্শে যেন সবাই চঞ্চল হয়ে উঠল। রাজা নন্দিনীকে পেতে চাইলেন যেমন করে তিনি সোনা আহরণ করেন, শক্তির বলে কেড়ে নিয়ে। কিন্তু প্রেম ও সৌন্দর্যকে এভাবে লাভ করা যায় না। তাই রাজা নন্দিনীকে পেয়েও পাননি।
আরও পড়ুন: জাবির নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ডাক
একইভাবে মোড়ল, পণ্ডিত, কিশোর, কেনারাম সবাই প্রাণপ্রাচুর্যের মধ্যে বাঁচার জন্য ব্যাকুল হয়ে জালের বাইরের দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু নন্দিনী রঞ্জনকে ভালোবাসে তাই তার মধ্যে প্রেম জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু রঞ্জন যক্ষের বন্ধনে বাঁধা। এ যন্ত্র তার প্রেমকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল- এটাই যান্ত্রিকতার ধর্ম এবং কবি তা বিশ্বাস করেন। নন্দিনীর প্রেমাস্পদ যান্ত্রিকতার যূপকাষ্ঠে নিঃশেষিত হলো এবং আবার যেন প্রেমকে ফিরে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে জীবন জয়ী হলো। এই দৃষ্টিভঙ্গি রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতায়, গানে, নাটকে, গল্পে পরিস্ম্ফুট হয়েছে। কবি রক্তকরবী নাটকটিতে জড় যান্ত্রিকতা ও জীবনধর্মের মধ্যে সেই সামঞ্জস্য সন্ধান করেছেন।
'রক্তকরবী' নাটকে অভিনয় করার অনুভূতি ব্যক্ত করে আল মামুন বিশ্বাস শুভ বলেন, “প্রথম বারের মতো মঞ্চে অভিনয় করছি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। গতানুগতিক কোর্সের বাইরের এই কোর্স আমাদেরকে অনেক নতুন বিষয়ে জানতে সাহায্য করেছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতেও এই প্রোগ্রামগুলো অব্যাহত থাকবে যাতে নবীনরা সরাসরি মঞ্চস্ত নাটকের পরিচিত হতে পারে।”
আরএক্স/