শঙ্কা কেটে শেয়ারবাজারে সুবাতাস


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:৫০ অপরাহ্ন, ২৪শে জানুয়ারী ২০২৪


শঙ্কা কেটে শেয়ারবাজারে সুবাতাস
ফাইল ছবি

দেড় বছর পর দেশের শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্য স্তর তুলে নিয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দুই ধাপে ফ্লোর তোলার পর মাত্র ১২ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর অবশিষ্ট আছে।


বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) লেনদেনে শেষে হুট করেই ৩৫টি বাদে সব কোম্পানির ফ্লোর তুলে নেয় কমিশন। ধারণ করা হচ্ছিল ফ্লোর তোলার পর বাজারে অস্থিরতা হবে। তবে রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমলেও সোমবার বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। একই দিনে আরও ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। ফ্লোর প্রত্যাহারের পর একদিনের পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। সমন্বিত উদ্যোগে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আরও পড়ুন: ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৩৬ কোটি ডলার


সংশ্লিষ্ট জানান, একে কৃতিত্ব বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সব অংশীজনের। বিনিয়োগকারীরা সচেতন ছিলেন আর অন্য অংশীজনেরা আত্মা বাড়াতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন বলেই বাজারে উস্থান হয়েছে। একই সাথে বাজারে বড় পতনের যে শঙ্কা ছিলো তা কেটে গেছে।


তবে বাজারের এই উত্থান স্থায়ী হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তাদের যুক্তি, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর রোববার লেনদেন শুরুর সময়েই ডিএসইর প্রধান সূচক ২১৪ পয়েন্ট কমে যায়। এটা ছিলো গেম। একটি পক্ষ এখান থেকে ফায়দা লুটছে। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা তাও ভেবে দেখতে বলছেন তারা।


সমন্বিত উদ্যোগের বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, অনেক দিন পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গতিশীল একটি বাজারের জন্য সবাই কাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরেছেন। আমরাও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজার ভালো আছে।


তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার অর্থনীতির অনেক বড় একটি জায়গা। অনেক বিষয়ের উপর বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ভরশীল। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আমরা অর্থনীতির নানা জায়গা থেকে চাপমুক্ত হচ্ছি। তাই বলা যায়, সবাই সমন্বিত প্রচেষ্টা অন্যাহত থাকলে শেয়ারবাজার আরও ভালো হবে।


বিআরবি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারে গত কয়েকদিন বড় অংকের ফ্রেশ ফান্ড ঢুকেছে। নিস্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। বাজারের এই উত্থান ন্যাচারাল, কোন কৃত্রিমতা নেই। সামনে বাজার আরও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। 


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে ৩৫টি রেখে বাকি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি)। তাতে রোববার দিনের শুরুতে ব্যাপক দরপতন শুরু হলেও পরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দিন শেষে সূচক কমে ৯৬ পয়েন্ট। 


ফ্লোর প্রাইস তোলার সুফল মেলে সোমবার (২২ জানুয়ারি)। দিন শেষে সূচকে যোগ হয় ১৪ পয়েন্ট, ৬ মাস পর হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় এ বাজারে। 

 

দুই দিনের বাজার পর্যালোচনা করে দ্বিতীয় দফায় আরও ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর তুলে দিলে সেগুলো গতকাল মঙ্গলবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফেরে। এখন কেবল ১২টি কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বহাল রয়েছে।


মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ডিএসইতে সূচক বাড়লেও অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। দিনের লেনদেন শেষে ২১ পয়েন্ট যোগ হয়েছে। সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭৬ পয়েন্ট। হাতবদল হওয়া ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৬টির দাম বাড়ে, ২২৭টির কমে এবং ৪০টির দাৃ অপরিবর্তিত রয়েছে। 


দিনভর লেনদেন হয় ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা যা আগের দিনের চেয়ে ১৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বেশি। 


ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার আগে বাজারে যাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য কয়েক দফায় বড় বিনিয়োগকারীসহ বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। বড় সেল প্রেসার দিয়ে যাতে কেউ বাজারকে নেতিবাচক প্রবণতায় ঠেলে দিতে না পারে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অব্যাহত ছিল নজরদারি।


আরও পড়ুন: নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা


এদিকে বাজারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও। চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে গত রোববার থেকে প্রতিদিন লেনদেন শুরুর আগে বৈঠক করছে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম। 


ফোরামের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বাজারের প্রয়োজনে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার দরকার, তা নেওয়া হবে। সিইও ফোরাম শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক বা ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।


জেবি/এজে