ফসলি জমি নষ্ট করে ধামরাইতে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪১ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ফসলি জমি নষ্ট করে ধামরাইতে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব
ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই চলেছ ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।এযেন মাটি কাটা মহা উৎসব চলছে, কোনভাবেই থামছে না এই মাটিকাটা। একশ্রেণীর দালাল কৃষকদের ইটভাটায় মাটি বিক্রি করতে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি দেদারসে বিক্রি করতে বাধ্য করছে।


দিন দিন জমি কমে যাওয়ায় হুমকিতে পড়েছে কৃষির আবাদ। দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।


উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের বড় কাঠালিয়া, বালিয়া ইউনিয়নের দুনিগ্রাম, নয়াচর, আমতা ইউনিয়নের জেঠাইল ব্যাপারি পাড়া,বাইশাকান্দা ইউনিয়নের বেরশ, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া শাইলবাড়ি, সানোড়া ইউনিয়নের আলোকদিয়াসহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন জুড়েই ফসলি জমি মাটি কেটে যাচ্ছে ইটভাটায়।


উপজেলা জুড়েই ঝিকঝ্যাঁক এবং ড্রামচিমনি পদ্ধতির দের শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। ওই সকল ইটভাটায় বছরে কয়েক কোটি ইট তৈরি হয়। ইট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাটি, ভাটার মালিকরা একশ্রেণীর দালালদের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। ভেকু মেশিন দিয়ে অনেক গভীরে জমি খনন করে মাটি উত্তোলন করে ইট প্রস্তুত করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে ভাটায়। আবার অনেক কৃষক মাছের চাষ করতে পুকুর করার নামে ভাটার মালিকদের কাছে নামমাত্র মূল্যে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।


ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারবে না। যদি কোনো ব্যক্তি ওই আইনের ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘন করে ইটভাটা প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তাহলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ইটভাটার মালিকরা ওই আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি কৃষি জমি থেকে দেদারসে মাটি কেটে তা সংগ্রহ করে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।


ইটভাটা সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাক্তি জানান, ইটভাটাগুলো কতোটুকু জায়গা নিয়ে গড়ে উঠবে সে ব্যাপারে কোন ব্যধ্যবাধকতা নেই। ধামরাইয়ে ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠায় এসকল ইটভাটার তাপ, ধোয়া ও ধূলোবালিতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এলাকায় বসবাসকারীরা। এছাড়া খোলা ট্রাকে মাটি পরিবহনের সময় ট্রাক থেকে সড়কে পড়া মাটি ধুলোয় রুপান্তরিত হয়ে চলে যাচ্ছে সড়ক লাগোয়া ফসলি জমি ও বসতবাড়িতে। এতে সড়ক লাগোয়া জমির ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। বসতবাড়িতে বসবাসকারীরা পরছেন বিপাকে।


ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর রিফফাত আরা বলেন, ইটভাটাগুলো অবশ্যই আইনমেনে জনবসতি এলাকার বাইরে বানাতে হবে। ইটভাটার ধুলোবালি থেকে শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীতে প্রদাহ, ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী রোগ হতে পারে।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, সাধারণত জমির ৬ ইঞ্চি পরিমান মাটি যেকোন ধরণের ফসল উৎপাদনের জন্য খবুই জরুরি। কিন্তু ইটভাটায় জমির ১ ফুটের বেশি গভীর করে মাটি কেটে নেয়া হয়। এরফলে জমি উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে খনিজ কয়লা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আইন না মেনে অনেকে কাঠ পুড়িয়ে সেই কয়লা ইটভাটায় ব্যবহার করছে।


তিনি বলেন, কয়লা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোয়ার কার্বন ডাই অক্সাইডে বায়ু দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে খনিজ কয়লা থেকে উৎপন্ন সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনো অক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইড এ তিন ধরণের গ্যাস বায়ু দূষণ করে।  ইটভাটার ধুলাবালু গাছপালা ও ফসলের উপর পরে পুরু আস্তরণ তৈরি করে। এতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে জীববৈচিত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলে উৎপাদন ব্যহত হয়।


ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, ইতিমধ্যে ৪-৫টি অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ার সঙ্গে জড়িতদের ৩-৪ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ২১ টি ড্রাম ট্রাক ৪ টি ভেক্যু জব্দ করা হয়েছে। 


তিনি বলেন, বায়ু দূষণ কমাতে ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালনার জন্য ইটভাটার মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে আইসিডিডিআরবি এর উদ্যোগে উপজেলা কমপ্লেক্সে কর্মশালাও করা হয়েছে।