অপহরণের তথ্য ৮ জনের, উদ্ধার অভিযানে মিলেছে ১০ জন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, ২৮শে মার্চ ২০২৪


অপহরণের তথ্য ৮ জনের, উদ্ধার অভিযানে মিলেছে ১০ জন
ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজার জেলার টেকনাফে গত দুদিনে ৮ জনকে অপহরণের তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। অপহৃতদের স্বজনরা লিখিত কোন অভিযোগ বা তথ্য পুলিশে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে আসছিল। এর পরও পুলিশ পাহাড়ী এলাকায় শুরু করে অভিযান। দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘন্টার অভিযানে টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকা অভিযান চালিয়ে বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ১২ টায় ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অপহরণকারিদের ধরতে এখনো পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।


বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান জনবাণীকে গনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারর মাধ্যমে অপহরণকারি চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ৫০ জন পুলিশ একযোগে টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান শুরু করে। পাশাপাশি অভিযানে যোগ দেয় র‍্যাব সদস্যরা। অভিযানের এক পর্যায়ে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলা হয়। তারপর রাতে সাড়ে ১২ টার দিকে অভিযানের মুখে অপহৃত ১০ জনকে পাহাড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারি চক্রটি। পরে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এখন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর অপহরণকারিদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান চলমান রয়েছে।


আরও পড়ুন: তারাবি পড়ে ঘরে ফিরে দেখলেন স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ


মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ১০ জনকে অক্ষত অবস্থা উদ্ধার করেছি। এখানে মুক্তিপণের কোন বিষয় নেই। অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা কোন তথ্য দেয় না। এমন কি একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন না। স্বজনরা তথ্য না দেয়ায় পুলিশ তার কাজে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। তবে সবকিছু মাথায় নিয়ে অপহরণকারিদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ১০ জনের কাছে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।


ওসি জানান, কোন লিখিত অভিযোগ বা স্বজনরা পুলিশকে সারাসরি কোন তথ্য না দিলেও ৮ জনকে অপহরণের তথ্য ছিল। এর মধ্যে বুধবার দুপুর ২ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংস্থ ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ী এলাকা ৬ জন এবং মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে ২ জন অপহরণের তথ্য ছিল। কিন্তু অভিযানে উদ্ধার হল ১০ জন। অপর ২ জনও বুধবার বিকালে পুটিবুনিয়া পাহাড়ী এলাকায় থেকে অপহরন করা হয়।




এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকা থেজকে ৬ জন এবং পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে ২ জনকে অপহরণ করা হয়।


উদ্ধার হওয়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এর করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে  জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২)। এই ৬ জন উনচিপ্রাং এলাকা থেকে ৬ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।


হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭) কে পুটিবুনিয়া এলাকা থেকে ২ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।


টেকনাফের হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭) কে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহরন করা হয়।


এর আগে হোয়াইক্যং ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেছিলেন, বুধবার সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার ৬ জন বাসিন্দা স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে  যান। পরে তারা দুপুরের পরও বাড়ী ফিরেননি। এক পর্যায়ে দুপুর ২ টার পর অপহরণকারি চক্রের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে ০১৮৯৭২৬৬৮৮৮ নাম্বার থেকে একজনের বাবার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহৃতদের মারধর করা হচ্ছে করে চিৎকার শোনানো হচ্ছে। এ বিষয় সম্পর্কে পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে।


বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবুনিয়া পাহাড়ী এলাকায় গরু চড়াতে গিয়ে ছৈয়দ হোসেন ও ফজল কাদের নামের আরও দুইজন অপহরণ হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী।


স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সকালে গরু চড়াতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাত ৯ টার পরও তারা বাড়ী ফিরেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুইজনও দূর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। 


আরও পড়ুন: টেকনাফে অপহৃত ৪ কৃষক মুক্ত, এখনও জিন্মি একজন


টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানিয়েছেন, অপহরণ বন্ধে পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন, না হয় সফল হবে না।


বিগত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে ২০ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি । যদিও পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্য সহ চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৫ জনই রোহিঙ্গা।


জেবি/এজে