শ্রীনগরে আলু উত্তোলনে শ্রমিক সংকটে খরচ বাড়ছে কৃষকের


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৬ অপরাহ্ন, ৩০শে মার্চ ২০২৪


শ্রীনগরে আলু উত্তোলনে শ্রমিক সংকটে খরচ বাড়ছে কৃষকের
ছবি: প্রতিনিধি

শ্রীনগরে কৃষকের আলুর মণ ১০৭৫ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত প্রতি কেজি আলুর মূল্য পড়ছে প্রায় ২৭ টাকা। এই অঞ্চলে যদিও পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু না হলেও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় আলু উঠানো শুরু করেছেন তারা। তবে কৃষি শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা জমিতে প্রয়োজনীয় জনবল পাচ্ছেন না। জমিতে আলু উত্তোলনের পর পরই ক্ষেত থেকে আলু পরিমাপ করার পর ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। গত ৫-৭ দিন পুর্বে প্রকার ভেদে স্থানীয় কৃষকের আলুর মণ বিক্রী হয়েছে ১০৫০ থেকে ১০৭৫ টাকা দরে। তবে আলুর বাজার সামনে আরো বাড়তে পারে এমন চিন্তা-ভাবনা থেকে অনেকেই এখনই আলু বিক্রি করতে চাইছেন না। 


স্থানীয়রা জানান, এ বছর আবাদি জমিতে লেট ব্লাইট রোগের আক্রামণে আলু গাছে পচন ধরে। আক্রান্ত ক্ষেতগুলোতে সবুজ গাছ মরে যাওয়ার ফলে আলুর ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে বর্তমান আলুর পাইকারী দরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কিছুটা লাভবান হবেন। তারা বলেছেন, এর আগে মৌসুমের প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিতে বীজ বপণকৃত জমি নষ্ট হলে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে পুনরায় আলু চাষ করতে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে আলু চাষে স্বপ্ন ভঙ্গের দিকে যাচ্ছিল। 


আরও পড়ুন: সদরপুরে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত


তবে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে আলুর পাইকারী বাজার মূল্য উর্ধ্বগতিতে আশার আলো দেখা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২ সপ্তাহ আগেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কৃষকের আলুর মণ ৮০০-৮৫০ টাকা করে হাকাচ্ছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষীরা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। খোলা বাজারে এখনও আলুর কেজি ৩৫-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েকদিন আগেও কৃষকের উৎপাদিত আলু কেজি পাইকারীভাবে বিক্রি করতে হয়েছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা দরে। আলু চাষের প্রথম দিকে ঝূর্ণিঝড় মিকজাউম ও টানা বৃষ্টিতে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর আলুর জমি নষ্ট হয়।


আবার মৌসুমের মাঝামাঝি দিকে আলু ক্ষেতে ফোসকা রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে উঠেন কৃষকেরা। সব মিলিয়ে আলু চাষে বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় স্থানীয় আলু চাষীদের কাছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বীরতারা, তন্তর, আটপাড়া, কুকুটিয়া, ষোলঘর ইউনিয়নের খৈয়াগাঁও ও পুর্ব দেউলভোগ চকে অনেক পরিমাণ আলুর চাষাবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে উপজেলাব্যাপী প্রতি কানিতে (১৪০ শতাংশ) গড়ে ২৫০-৩০০ মণ আলু উৎপাদণের টার্গেট করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৪ 


ঝাপুটিয়া এলাকার শহিদুল নামে এক কৃষক বলেন, ২ বিঘা জমি ফোসকা রোগে আক্রমণে আলুর ফলন অর্ধেক হয়েছে। বিবন্দীর আলম হোসেন বলেন, তার ১ কানি (১৪০ শতাংশ) আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগে আক্রমণে গাছ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ক্ষেতে আলু গাছ সব মরে গেছে এতে দ্রুত আলু উঠানোর পরিকল্পনা করছি। এর মধ্যে ১২ গন্ড একটি জমিতে আলু পেয়েছি মাত্র ৭৭ বস্তা। ধারনা করছি বাকি জমিতেও আলুর ফলন অর্ধেক হবে। প্রতি কানি জমিতে আলু চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় পৌণে ৩ লাখ টাকা। রুসদীর ফারুক নামে একজন বলেন, আগামী মাসের প্রথম দিকে ক্ষেতের আলু উত্তোলন শুরু করবো। প্রায় ৬ কানি জমিতে আলু চাষ করেছি। পাইকারীদের কাছে আগ্রীম আলু বিক্রি করা হয়েছে। ১০৭৫ টাকা দরে ক্ষেত থেকে আলু মেপে দেওয়া হবে। আরিফ হামজা নামে এক আলুর বেপারী বলেন, গত কয়েকদিন যাবত ১০৫০-১০৭৫ টাকা দরে আলুর মণ কেনা হয়েছে। লাল রংয়ের ডায়মন্ড জাতের আলু চাহিদা অনেক বেশী।

 

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিনা জাহান তোরণ জানান, আলু গাছের পচন দমনরোধে সবাইকে একযোগে একই মাঠে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে করে আক্রান্ত জমিতে একেবারে গাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ কমেছে। সাইক্সা, সিকিউর, এক্সাট্রামিন এবং প্রয়োজনে সাপেক্ষে অটেনস্টিন কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয় স্থানীয়দের। তিনি জানান, এ বছর উপজেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। আলুর উৎপাদণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫৭ হাজার মেঃটন।


এমএল/