ভিন্ন রূপে সেজেছে টাঙ্গুয়ার হাওর


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ভিন্ন রূপে সেজেছে টাঙ্গুয়ার হাওর

নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা। কখনো জমাট-আবার কখনো হালকা বাতাসে দলছুট হয়ে পাগলা ঘোড়ার মত উত্তরে দাঁড়ানো আকাশছোঁয়া বিশাল খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে আঁছড়ে পড়ছে। আর তারই প্রতিবিম্ব সুনামগঞ্জের বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওরে যখন ফুটে উঠে তখন বিস্মিত হতে হয় যে কাউকেই।  প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য পাহাড় ও হাওরের জলরাশি তার নিচে জলজ উদ্ভিদ দেখতে হাজারো পর্যটক ছুটে চলেছেন, ঘুরছেন টাঙ্গুয়ায়। শীতে এক রূপ, বর্ষায় অন্যরূপ।
আরো পড়ুন- রঙিন হচ্ছে শিমুল বাগান, ঘুরে আসুন...

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে অবস্থিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা। দেশের এই প্রান্তিক জনপদে স্রষ্টা যেন প্রকৃতি-অকৃপন হাতে বিলিয়ে দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, সম্ভাবনা আর অপরুপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। সারি সারি হিজল, করছ সহ বিভিন্ন জাতের গাছ-পালা আর হাওরের বুকে জলজ উদ্ভিদ, লতা, গুল্ম, গুচ্ছ জলরাশি, বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় নানা জাতের মৎস্য সম্পদ আর পাখির এক নিরাপদ আবাস্থল টাঙ্গুয়ার হাওর। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মূল্যবান সম্পদের কারণে টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের মানচিত্রে এক উজ্জল নক্ষত্র হয়ে রয়েছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের একাংশ

টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্তমানে প্রায় ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১১২ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্তির সম্মুখীন ১০ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪ প্রজাতির সাপ, ৩ প্রজাতির কচ্চপ, ২ প্রজাতির গিরগিটি ও ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী শেষ আশ্রয়ন্থল হিসাবে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বেছে নিয়েছে। এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক, মৌলভী হাঁস, পিয়ারি, কাইম, কালাকুড়া, রামকুড়া, মাথারাঙ্গা, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চোখা হাঁস চোখাচোখি, বিলাশী শালিক সহ প্রভৃতি। আর অতিথি পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে আছে আমাদের দেশীয় পাখিরাও। এগুলো হল-পানকৌরি, জলকবুতর, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, গাঙচিল, বক, সারস, শঙ্খচিলসহ হাজারো রকমের পাখি।

সুদূর সাইবেরিয়া চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল সহ শীত প্রধান দেশ থেকে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাবার জন্য বিভিন্ন জাতের অতিথি পাখি ডানায় ভর করে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে বিচরণ করে বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওরের বুকে। পরবাসি বিঙ্গগকুল আর দেশীয পাখিদের মিলন, অভিসারে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয় হাওরের চারপাশ।  শীতকালে প্রতি বছর প্রায় ৪০-৫০হাজার অতিথি পাখি আসে। এসব অতিথি পাখির কলধ্বনিতে বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর পারের এলাকার কিচিরমিচির ডাকে হাওর পাড়ের মানুষের সকাল বেলা ঘুম ভাঙে। আর ঝাঁকে ঝাঁকে হাজার হাজার পাখি একত্রে নীল আকাশে উড়ার দৃশ্য, হাওরের বুকে ডুব দিয়ে মাছ শিকারের চিত্র দেখে যে কারো দু চোখ জুড়িয়ে যায়। শীতের এই সময় পূর্নিমা আর ঘোর আঁধার আলোতে আলোকিত রাতের আকাশে অতিথি পাখির ডাকে এক মুগ্ধকর অনুভুতির জন্ম দিয়েছে। এছাড়া টাঙ্গুয়া পাড়ের ৮৮টি গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা দেখে মুদ্ধ হন পর্যটকরা।

টাঙ্গুয়ার হাওরের নীলাভ রূপ

টাঙ্গুয়ার হাওরকে ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি 'রামসার সাইট' ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক রামসার কনভেশনে স্বাক্ষর করেন কর্তৃপক্ষ। এতে রামসার তালিকায় বিশ্বের ৫৫২টি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম উঠে আসে। ফলে দেশের মানুষ হাওরটিকে নতুন করে জানার সুযোগ পান। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ হাওরে ভীড় জমাতে শুরু করেন এর পরিবেশ-প্রকৃতি দেখার আশায়।

রাজধানী বাসে করে সুনামগঞ্জ যেতে পারেন। এরপর মটর-সাইকেল অথবা সিএনজি দিয়ে তাহিরপুর উপজেলায় অথবা লাউড়েরগড়। লাউড়েরগড় বাজারে থেকে কিছু দুর পায়ে হেঁটে গেলেই যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা। যাদুকাটা নদী পার হলেই শিমুল বাগান। বারেকটিলা উপর আবারো ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি লেক)। অন্য কোনো যানবাহন নেই। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান সারাদিন।

জি আই/