ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ১২:৪৮ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৪


ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প
ছবি: প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে একটি পরিকল্পিত বড় আধুনিক শহর গড়ে তোলার চিন্তা বহুদিনের। সেই লক্ষ্যে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটি ১৯৮৭ সালের ৩০ এপ্রিল নাম পরিবর্তন করে হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।


নতুন উদ্যোগে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর একটি পরিপূর্ণ শহর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় রাজউক। ১৯৯০ সালের দিকে বর্তমান পূর্বাচলের এলাকাটি নিয়ে নগরায়ন করা যায় কিনা সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাজউক প্রথমে ৩৬ হাজার একর জমি নিয়ে পরিকল্পনার কাজ শুরু করে।


দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই আবাসিক প্রকল্প ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নামে যাত্রা শুরু করলেও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন হয় ২০০৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩১১ কোটি ৭৪ লাখ। এ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ বার। প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বৃদ্ধি করে সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপি ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি ৫১ লাখ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় কীভাবে নির্বাপন হয়েছে তার কোন সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। 


বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ফলে জনবল সংকটে পড়ে প্রকল্পটি। যার ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে প্রকল্পের অগ্রগতি। শুরু থেকেই প্রকল্প এলাকার অধিবাসী বা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ প্রকল্পের কাজে বাধা প্রদান করে। এর আগে এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরি'স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর বিভিন্ন সময়ে হামলা হয়েছে, এতে প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। দিতে হয়েছে তাদের রক্ত। একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই হয়েছেন পঙ্গু। শুধু হামলা নয় বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযানে রাজনৈতিক চাপ কেউ সামাল দিতে হয়েছে সুকৌশলে। অপরদিকে অধিবাসী বা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ রাজউকের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করে, যার ফলে উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা নেমে আসে।


রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট আয়তন ৬ হাজার ২২৭ দশমিক ৩৬ একর। ঢাকার খিলক্ষেত, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জমি নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণির ও আয়তনের মোট ২৯ হাজার ৭৭৬টি প্লট রয়েছে। প্রকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নগর সেবাকেন্দ্রিক প্লট রয়েছে ২ হাজার। 


প্রকল্পটির প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় আগের থেকে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।


প্রকল্প এলাকায় ৩৬৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৫২টি সেতু নির্মাণ ও ৪৩ কিলোমিটার লেক তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী ও বালু নদের তীর সংরক্ষণ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প এলাকায় চাহিদা মত বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এখন পর্যন্ত তিনটি সেক্টরে পানি সরবরাহ করা হয়েছে যা পর্যায়ক্রমে সকল এলাকায় পানি সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পূর্বাচলের ১৫ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর প্লটে ২ দশমিক ৩২ একর জমির উপর বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণ হবে। যা পুরো লেক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে বলে জানা যায়। 


বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার দিক নির্দেশনামূলক তর্জনীর ভঙ্গিমাকে শৈল্পিক ভাস্কর্যে উপস্থাপন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর হাতের উচ্চতা হবে ৭১ ফুট। যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী বছরকে ফুটিয়ে তুলবে। ভাস্কর্যের বেদীতে ১৯৫২ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিকথা তুলে ধরা হবে।


৪৬৫ মিটার উচ্চতার ১১১ তলা বিশিষ্ট আইকনিক লিগ্যাসি টাওয়ার, ৭১ তলা বিশিষ্ট স্বাধীনতা টাওয়ার ও ৫২ তলা বিশিষ্ট ভাষা টাওয়ারসহ ৪১টি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করবে রাজউক। এছাড়াও আন্ডারগ্রাউন্ডে ৩৩ হাজার গাড়ি পার্কিং ইউনিট বাস্তবায়ন করবে জাপানের কাজিমা কর্পোরেশনের সাথে যৌথ ভাবে সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড। নিলাম দরপত্রের মাধ্যমে রাজউক থেকে জমি অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। কেসিসি ও শিকদার গ্রুপ নিলাম দরপত্রে অংশগ্রহণ করে মাত্র ১০০ টাকা বেশি দরে শিকদার গ্রুপ কাজটি পেয়ে যায়। 


এই প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী এখানে বসবাস করবে উচ্চবিত্ত পরিবার বা এলিট-শ্রেণী কিন্তু এত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরে-ও এই এলিট-শ্রেণী পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বসবাস করবেন তো? জনমনে এমন প্রশ্ন রয়ে যায়। তবে আশার আলো হলো ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীসহ বেশ কিছু বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।


জেবি/এজে