পানির অপচয় রোধে রিসাইক্লিং করার উদ্যোগ নিতে হবে: এলজিআরডি মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
দেশে পানির অপচয় রোধে গৃহস্থালি এবং সকল শিল্প-কলকারখানায় ব্যবহৃত পানি রিসাইক্লিং করে ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।
এছাড়া, অব্যবহারযোগ্য পানি ব্যবহারযোগ্য করার জন্য বড় বড় সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কথাও জানান মন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু তে 'বিশ্ব পানি দিবস'-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশের অনেকেই রিসাইক্লিং কাজকে কঠিন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু এটি অসম্ভব নয়। পৃথিবীর বহু দেশ রিসাইক্লিং করে পানির ব্যবহার করছে। আমাদের দেশেও এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য দরকার সার্বিক একটি ব্যবস্থাপনা। যে সকল প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কলকারখানার ব্যবহৃত পানি রিসাইক্লিং করার সক্ষমতা রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই করতে হবে।
মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা শহর যেভাবে গড়ে উঠেছে এতে করে প্রত্যেক বাসায় পাইপ লাইন দেয়া অথবা রাস্তা খুঁড়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দরকার সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। এজন্য প্রত্যেক বাসা-বাড়িতে সেপ্টিক ট্যাংক নিশ্চিত করতে হবে। এরপর সেখান থেকে সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নিয়ে পানি শোধন করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য মাস্টার প্ল্যান গ্রহণের জন্য ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, আমি আশা করি দেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লক্ষ্য অর্জন করবে'। এ লক্ষ্যে সারাদেশে অনেকগুলো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য যত গভীরে যাওয়া হবে আর্সেনিক ছাড়াও অনেক হেভি মেটাল রয়েছে যেগুলো পানির সাথে উঠে আসবে এবং শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূউপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে।
মোঃ তাজুল ইসলাম আরও জানান, যেসব এলাকায় পানির সংকট রয়েছে সেসব অঞ্চলে পানি সরবরাহ করার জন্য ন্যাশনাল গ্রীড লাইন স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সারা দেশে অনেক ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে। এসব জোনে প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কলকারখানায় প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হবে। সে লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে সরকার। দেশের পানির প্রধানতম উৎসগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেমন মেঘনা থেকে মিরেরসরাই ইকোনমিক জোনে পানি নেওয়ার বিষয়ে এখন স্টাডি চলছে।
পানি উৎপাদনে সরকার এখনও ভূর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মোঃ তাজুল ইসলাম পানির অপচয় রোধে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পানির উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয়ের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। এটির সমন্বয় দরকার।
রাজধানীতে জোনভিত্তিক পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটিক্যাল সার্ভিসের দাম নির্ধারণ করার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ অভিজাত এলাকায় বসবাসরত মানুষ যে নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন যাত্রাবাড়ী অথবা পুরান ঢাকার মানুষ তা পায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমতাভিত্তিক উন্নয়নের কথা বলেছেন। সমাজ ও মানুষের মধ্যে বৈষম্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেননি বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। মানুষ গ্রামেই উন্নত সকল সুযোগ-সুবিধা পাবে। তাই উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্য সবাইকে ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত, ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচও এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাইফুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত।
উল্লেখ্য, এবছর বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য- 'Groudwater: Making the Invisible Visible'.
এসএ/