‘রেমাল’ আংশকামুক্ত সৈকতের রূপ দেখতে মানুষের ঢল
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:৩০ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর আংশকামুক্ত কক্সবাজার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির তথ্য মতে, এটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে।
যার কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় কক্সবাজার আশংকামুক্ত বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ।
তিনি জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনে বেড়েছে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া
রেমালের প্রভাবে রবিবার (২৬ মে) দুপুর ১ টা সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত থেমে থেমে মাঝারী বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর আর দেখা মিলেনি বৃষ্টির। ছিল না বাতাসও। যদিও সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের আকাশ জুড়ে কখনও রোদ আর কখনও মেঘের খেলা ছিল। একই সঙ্গে ছিল মাঝারি বাতাস। সাগরের পানিও স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে উচ্চতা বেশি ছিল। যার প্রভাবে কিছু কিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছিল।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সাগরের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতা বেড়েছিল। যার কারণে সাগরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও সন্ধ্যার পর ভাটায় পানি নেমে গেছে।
তিনি জানান, রবিবার ভোর ৫ টা ৫৮মিনিটে জোয়ার শুরু হয়। দুপুর ১২টা ৯ মিনিটে পূর্ণ জোয়ার হয়ে ভাটা শুরু হয়। যা পূর্ণ ভাটা হয়েছে সন্ধ্যা ৬ টা ৪১ মিনিটে। পরে পূর্ণ জোয়ার হবে রাত ১ টায় তখন সাগর স্বাভাবিক হবে। সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের কথা জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের আকাশে রোদ-মেঘের খেলা, বেড়েছে সাগরের পানির উচ্চতা
রবিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকলেও তা সন্ধ্যা সাড়ে ৪ টায় পর স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যােন খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, পানি কমে গেছে। বাতাসও নেই। স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের লোকজন এখন নিরাপদ। আশংকামুক্ত দ্বীপ।
এদিকে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বরিবার সন্ধ্যার পর দেখা মিলেছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। যাদের মধ্যে অনেক পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় লোকজন রয়েছে। যারা ঘূর্ণিঝড়ের পর সাগরের পরিস্থিতি দেখতে ওখানে জড়ো হয়েছেন। এর আগে সকাল থেকে দুপুর ১২ টা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা মিলে অনেক পর্যটকের যারা রেমালের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের প্রভাবে টেকনাফে বইছে বাতাস-বৃষ্টি
ওই সময় সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সাগরজলে মেয়ে লুবনা কে নিয়ে নেমে পড়েছেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা ইয়াছমিন আকতার।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেখতে সদ্য এসএসসি পাশ করা মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সাগর উত্তাল, দেখতে অনেক ভালো লাগছে। ছবি তুলছি, শামুক-ঝিনুক খুড়িয়েছি। আগে কক্সবাজার অনেক আসা হয়েছে। তবে এবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় আসা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজার সাগর কেমন হয় তা দেখতে পেলাম।
শুধু শরীয়তপুরের ইয়াছমিন নন, একই সময় সৈকতের লাবনী পয়ন্টে এসেছেন নোয়াখালীর আব্দুর রহিম। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। সবাই নেমে পড়েন সাগরের নোনাজলে।
আব্দুর রহিম বলেন, ঢেউ দেখে ভয় লাগছে। কিন্তু খুবই মজা পাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এতো এতো বড় বড় ঢেউ হতে পারে আগে জানতাম না।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত। তাই সাগর উত্তাল রয়েছে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। লাল পতাকা মানেই সতর্ক করা, যাতে কেউ সমুদ্রস্নানে না নামে। আমরা কাউকে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামতে দিচ্ছি না। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক মানুষের আনাগোনা সৈকত জুড়ে।
এমএল/