নদী রক্ষায় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে; এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হবো: নৌপ্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৪

নদী রক্ষায় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হবো। নদী রক্ষায় দখল, দূষণরোধ, অবৈধ বালু উত্তোলন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আপনারা যারা নদী রক্ষায় কাজ করেন তারা সচেতনতা তৈরি করুন। দায়িত্ব চিহ্নিত করুন। জাতীয় নদী রক্ষা কশিশন সহায়তা করবে, সরকার সহায়তা করবে মন্তব্য করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রবিবার (২৬ মে) ঢাকায় ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘জাতীয় নদী কনফারেন্স-২০২৪’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
নদী বাঁচাই, দেশ বাঁচাই এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নদী সম্মেলন-২০২৪ রবিবার শেষ হয়েছে। এএলআরডি, বেলা, ওয়াটার রাইটস ফোরাম, রিভারাইন পিপল, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের সম্মেলন প্রমাণ করে, নদীকে নিয়ে আমরা কত ভাবি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে সময় বঙ্গবন্ধু বিআইডব্লিউটিএ'র জন্য সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের দেহে শিরা উপশিরা দিয়ে যেরকম রক্ত প্রবাহিত হয়, বাংলাদেশের নদীগুলো আমাদের সেরকম শিরা-উপশিরা। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ থেমে যাবে। নদীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনেক ভালোবাসা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বলেছেন। এর আগে কোন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এমন কথা বলেছেন- তার প্রমাণ নেই। আজকে সরকার প্রধান নদীকে রক্ষা করতে হবে এ ধরনের কথা বলেন বলেই যারা নদী নিয়ে ভাবেন, কথা বলেন, তাদের কাছে সেটি শক্তি হিসেবে দাঁড়ায়। শুধু নদী দখল নয়। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সকল ক্ষেত্র দখল হয়ে যায়। দখলদারিত্বের মহা উৎসব চলে। বঙ্গবন্ধু হত্যা ব্যক্তি বা পারিবারিক হত্যা নয়, এটি বাংলাদেশকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু নৈতিকতার উপর দেশ পরিচালনা করেছেন। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে, সে দেশের মানুষ সোনার বাংলা তৈরি করতে পারবে না সেটা আমার বিশ্বাস হয়না, সে দেশের মানুষ নদীকে হত্যা করতে পারে, দখল করতে পারে সেটি বিশ্বাস করা যায় না। নদী-নালা, খাল বিল আমাদের সম্পদ। নদী নালা খাল বিল না থাকলে আমরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে পারতাম না। সে সময়ে নদী-নালা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেভাবে সুন্দরবন আমাদেরকে ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন সমীক্ষা করেছে, দখলদারদের তালিকা করেছে। এসব জায়গায় ভুল থাকতে পারে, তবে যাত্রা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: উন্নত বাংলাদেশ হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা: নৌপ্রতিমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীকে ঘিরে সভ্যতা গড়ে উঠেছে- এটা সত্য। নদীর পাড়ে ইন্ডাস্ট্রি হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, শহর হবে সবই ঠিক আছে। সেগুলো হবে নদীকে রক্ষা করে কিন্তু নদীকে ধ্বংস করে নয়। ২০১৯ সালে ঢাকা শহরের চারপাশে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় অনেক ধরনের শক্তিশালী লোক ছিল; আমি সংসদে বলেছি সরকার বা রাষ্ট্রের চেয়ে কেউ শক্তিশালী নেই। নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সরকার ও রাষ্ট্রের আন্তরিকতা আছে। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে সেই সময় বলেছেন, তুমি চোখ বুজে কাজ কর। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কর এবং নদীর প্রাণ প্রবাহ ফিরিয়ে আন। নদী রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্তমান সরকারের সময়ে নদী রক্ষা কমিশন হয়েছে, হাওড় বোর্ডকে অধিদপ্তরের উন্নীত করা হয়েছে, বালু ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তারা এ দেশের জনগণ থেকে আউট হয়েছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন ‘কোন হাইড্রোগ্রাফি জরিপ ছাড়া বালুমহাল ইজারা দেওয়া যাবে না। একই জায়গায় বার বার বালু উত্তোলন করা যাবে না। আমরা প্রতিবছর নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে থাকি। কেউ কেউ বলেছেন-নদী দখল করার সময় বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সবাই একসাথে থাকে। এটা রাজনৈতিক শক্তি নয়। এরা অপরাধী। সরকার এদের অপরাধীদের হিসেবে দেখবে। এই জায়গায় সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে। উন্নয়ন হতে হবে। উন্নয়নের জন্য বালু প্রয়োজন। কিন্তু সেজন্য বালুমহাল যত্রতত্র হবে না। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে বালু তুলতে হবে। সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএ নিরলসভাবে কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএর ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। সেগুলো বসে নেই। কাজ করছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ সরকারি, বাকি ৬০ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খনন করা যাবে। সরকারের ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে আমাদের ১৫০টি সরকারি ড্রেজার প্রয়োজন। রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিং হয়েছে। সিলটেশন হয়েছে। ১০ নম্বর বিপদ সংকেত আছে, এতে আরো সিলটেশন হবে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের সম্মেলন আরো বেশি পথ দেখাবে।
এ সময় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন, নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী খুশী কবির, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স এসোসিয়েশন (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন, রিভারাইন পিপল এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মোঃ এজাজ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, লেখক ও সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, নদী সংগঠক জুলিয়েট কেয়া মালাকার, রণজিত দত্ত, আলিউর রহমান, নুর আলম শেখ, পল্টন হাজং, এস এম মিজানুর রহমান, খাইরুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
জেবি/এসবি