বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:১২ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৪


বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ
ছবি: প্রতিনিধি

বরগুনার তালতলীতে ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। ঘুর্ণিঝড় শুরুর আগে রবিবার (২৬ মে) সন্ধা থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে মানুষ। এরপর টানা কয়েক ঘন্টায় রেমালের তান্ডবে এ উপজেলায় ৬৫০টি ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টার পরেও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলোর প্রায় ৫হাজার মানুষ বাড়িতে ফিরতে পারছেনা। এদিকে বাড়িঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও পানি বন্দি থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকতে হচ্ছে তাদের। উপজেলার একাধিক আশ্রয়ণে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।


মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মো. তানজীম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা। ঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টার পরেও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় বাড়িতে ফিরতে না পারা পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেন তারা।


আরও পড়ুন: দুমকিতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নিহত ১


আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, রবিবার (২৬ মে) আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন রোকেয়া বেগম। তবে প্রথমে ঘরেই থাকার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ঝড়ের প্রভাব ও পানি বাড়তে থাকায় ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাতেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জয়াল-ভাঙা সাইক্লোলন সেন্টারে আশ্রয় নেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকায় খালি হাতেই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। পরের দিন ঝড় থামলেও ঘড়-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। অন্য দিকে বাড়ির চারপাশে অথই পানি থাকায় তার পরিবার নিয়ে ঐ আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকছেন তিনি।


জয়ালভাঙা সাইক্লোলন সেন্টার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে রোকেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাতের বাতাসে ঘর-বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। বাড়ির চারদিকে পানি থই থই করছে। এখন হাতে টাকাপয়সা নাই। কোথাও থেকে ধার আনতে হবে নতুর ঘর তৈরির জন্য। ঘর যত দিনে না তৈরি করতে পারবো ততোদিন এখানেই থাকতে হবে।


রেমালের প্রভাবে পানিবন্দি হওয়া নলবুনিয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঐ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিরাবের বেশির ভাগ পুরুষই জেলে। কেউ কেউ দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন ও রিকশা চালান। তাদের অনেকের বাড়িঘরে পানিবন্দি হয়ে আছে। কারও কারও ঘর পুরো ভেঙে পড়েছে। কারও ঘরের বেড়া, মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের আসবাব, কাপড়চোপড় পানিতে ভেসে গেছে। তাই তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। 


আরও পড়ুন: ভোলায় ২ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত ৩


ফকিরহাটের সকিনা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পরিবার এখনো বাড়িতে ফেরেনি। ৫টি কক্ষে আছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। কেউ মেঝেতে শুয়ে আছেন অন্য কক্ষে বেঞ্চ দিয়ে ভাগ করে থাকছেন বাড়িঘর হারানো পরিবার। প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। আর সেগুলোই খাওয়াদাওয়া চলছে।


ছোটবগী এলাকার আজিজ হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাড়ি-ঘরসহ আমার ভাইদের ঘরে গাছ পড়ে একদম শেষ। তাছাড়া এখনো পানিতে সেই বাড়ি তলিয়ে রয়েছে। ঘর থেকে পানি নামলেও এখনই যাওয়ার সুযোগ নেই। ঘরের একদিক ধসে পড়েছে। আসবাবপত্র সব পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে কোনো জিনিসপত্রের ঠিক নেই। তাই নতুন ঘর তৈরি করে বাড়িতে যেতে হবে।


মাজেদা বেগম বলেন, ঝড় গেছে একদিন হয়ে গেছে। এখনো পানিবন্দি হয়ে আছি। এখানের পরিবেশে থাকা তো খুবই কষ্টের। সামান্য পানি কমলেও ঘরের ভেতরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।


আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ১০ গ্রামসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ


উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ৫৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো প্রায় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন। একদিকে পানি বন্দি অন্যদিকে বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা। এই মানুষদের খাবারসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে প্রশাসন থেকে।


এমএল/