ডিপিডিসিতে রাজ্জাকের চালবাজি
বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪২ অপরাহ্ন, ১০ই জুন ২০২৪

সরকারি দলের নেতা, আবার কখনো প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বন্ধুর পরিচয় দিয়ে নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মাফিয়া ডন খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক।
অভিযোগ রয়েছে, ডিপিডিসি পুরো কজ্বায় নিতে তৎপর হয়ে উঠেন তিনি। গত ৪ জুন টানা ৫ ঘন্টা ডিপিডিসির এক প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নেতৃত্বে দেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক। সেই সময় ১০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। তাদের এজেন্ডা ছিল পছন্দের ডিভিশন নিয়ন্ত্রণে নেয়া। তারা একটি খসড়া তালিকা তৈরিও করেছেন। রবিবার (৯ জুন) সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে দেখা যায় ওই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর তৎপরতা। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা হলেও আলাপচারিতায় খুব এক সুবিধা করতে পারেনি। তবুও হাল ছাড়েনি এই দাপুটে প্রকৌশলী।
সূত্র বলছে, গত কয়েক মাস ধরে রেডিসন, লেক-শো, বনানী ক্লাব, পুর্বাণী হোটেল, রমনা রেস্তরাসহ আইইউবিতে বৈঠক করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল রাজ্জাক।
সূত্র বলছে, এই বৈঠকগুলোতে নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম, শীতলক্ষ্যা, শ্যামপুর, সিদ্ধীরগঞ্জ, ফতুল্লা, মাতুয়াইল, মানিকনগর, খিলগাঁও, মুগদাপাড়া, মগবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলো। এর বাইরে বেশ কয়েকটি ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরাও বৈঠকে ছিলেন। ঐ বৈঠকে নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) পদে নিয়োগে এক দাপুটে কর্মকর্তাকে বসানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়। পাশপাশি প্রকৌশলীদের পছন্দের ডিভিশন দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। সেই জন্য গুনতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে দরদামে বেশি এগিয়ে শ্যামপুর, জুরাইন, ডেমরা, নারায়গঞ্জ পূর্ব-পশ্চিম ডিভিশন। তবে এই বৈঠকগুলোতে ডিপিডিসির এক প্রকল্প পরিচালক এবং নারায়ণগঞ্জ বেল্টের এক এনসিএসএস এর ‘শ’ আদক্ষের এক তত্ববধায়ক প্রকৌশলীও বৈঠকে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ব্যর্থ করতে তারা অসহযোগিতা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় সংস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঘনিষ্ঠদের তার থেকে দূরে সরাতে সাজানো কল্পকাহিনী দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গনমাধ্যমে নিউজও করা হবে। সেই জন্য পছন্দের সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করছেন তত্ববধায়ক প্রকৌশলী রাজ্জাক। ঐ পছন্দের কর্মকর্তাদের এমডির দৃষ্টিতে বানানো হচ্ছে অযোগ্য ও অপরাধী। পাশাপাশি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের বিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের পদায়নের ছক কষা ও বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। কারণ তাদের টার্গেট জুলাই মাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে ডিপিডিসির অতিগুরুত্বপূর্ণ জিটুজি প্রকল্পে জুনিয়র কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাইয়ে দিয়েছেন। এর নেপথ্যে হলো নামে পিডি ওই ব্যক্তি থাকলেও মূলত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন ওই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। তাছাড়া এর আগে পিডির দায়িত্বে থাকা ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও বিশেষ গোপন কারণে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, স্যার নিজেকে গডফাদার মনে করেন। তিনি অনেক ক্ষমতাধর হিসেবে নিজেকে জাহির করেন সবার কাছে। তাই ডিপিডিসির অনেক কর্মকর্তাই তাকে নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। ডিপিডিসির সাবেক এমডি প্রকৌশলী বিকাশ দেয়ানের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করায় তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। আবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের তাকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবেও দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রকৌশলী বিকাশ দেয়ানের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সংস্থায় বেনামী অভিযোগ দিয়েছেন এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। দরখাস্ত দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, কতিপয় সাংবাদিককে এই প্রতিবেদন করার জন্যও তদবির করেছেন।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, বৈঠকের বিষয় আমার জানা নেই। কেউ যদি সংস্থার শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের শীর্ষ এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্প্রতি ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ. এম শফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে তার কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার আলোচিত আব্দুর রাজ্জাক বৈঠক করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে ঐ নির্বাহী পরিচালকের গোপন সমঝোতা হয়েছে। জুলাইকে টার্গেট করে প্রকৌশলীদের পছন্দের জায়গায় পদায়ন করতে তার আতাত হয়। ঐ নিবার্হী পরিচালক আর্থিক লাভবান হয়ে অযোগ্য কর্মকর্তাকেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করতে সুপারিশ করবেন বলে ঐ কর্মকর্তাকে আশ্বস্ত করেছেন বলে সূত্রের দাবী।
জেবি/এসবি